
ইউরোপিয়ান ফুটবল দলবদলের শেষ দিনে বড়সড় চমক উপহার দিল ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটি। দীর্ঘ আট বছরের সঙ্গ ছাড়লেন ব্রাজিলিয়ান তারকা গোলরক্ষক এডারসন মোরায়েস। নতুন ঠিকানা হয়েছে তুরস্কের গালাতাসারাই। অন্যদিকে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়নরা নিজেদের পোস্ট সামলাতে ভিড়িয়েছে ইতালিয়ান বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মাকে।
দোন্নারুম্মাকে দলে ভিড়ালো ম্যানসিটি
ম্যানচেস্টার সিটি নিশ্চিত করেছে যে, প্যারিস সেন্ট জার্মেইন (পিএসজি) থেকে দোন্নারুম্মাকে পাঁচ বছরের জন্য দলে ভিড়িয়েছে তারা। ট্রান্সফার ফি ধরা হয়েছে প্রায় ২৬ মিলিয়ন পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪০০ কোটির বেশি। চুক্তিতে অতিরিক্ত এক বছর বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে।
২৬ বছর বয়সী দোন্নারুম্মা ইউরো ২০২০ জয়ের নায়ক ছিলেন ইতালির হয়ে। জাতীয় দলের হয়ে তিনি ৭৪ ম্যাচ খেলেছেন, আর ক্লাব ক্যারিয়ারে ৪০০-এর বেশি ম্যাচে গোলবার সামলেছেন। নতুন অধ্যায় শুরুর আগে তিনি বলেছেন, “পেপ গার্দিওলার মতো কোচের অধীনে খেলা আমার ক্যারিয়ারের বড় সুযোগ। আমি সিটির হয়ে সাফল্য এনে দিতে চাই।”
এডারসনের বিদায়: সিটিজেন থেকে লায়ন্সে
২০১৭ সালে বেনফিকা থেকে আসার পর থেকে এডারসন ছিলেন সিটির রক্ষাকবচ। গত আট মৌসুমে তিনি গোলপোস্টের নিচে ৩৭২ ম্যাচ খেলেছেন এবং ১৫টি বড় শিরোপা জিতেছেন—যার মধ্যে রয়েছে একটি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ ও তিনটি এফএ কাপ।
৩২ বছর বয়সী এডারসন এবার যোগ দিলেন তুরস্কের গালাতাসারাইয়ে। তাকে দলে নিতে ক্লাবটি খরচ করেছে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ইউরো। নতুন ক্লাবে তিনি কীভাবে মানিয়ে নেবেন তা দেখার অপেক্ষায় ফুটবলবিশ্ব।
কেন শেষ দিনে এমন সিদ্ধান্ত
এডারসনের বিকল্প খুঁজছিল সিটি বেশ কিছুদিন ধরে। মৌসুমের শুরুতে গার্দিওলার পছন্দ ছিলেন তরুণ জেমস ট্রাফোর্ড। তবে ধারাবাহিক ভুলে দলের সাফল্য নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। এর মধ্যেই সিটি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয় অভিজ্ঞ দোন্নারুম্মাকে দলে আনার। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন মৌসুমে একাধিক টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে বিশ্বমানের অভিজ্ঞ গোলরক্ষক অপরিহার্য।
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
সিটির সমর্থকদের মধ্যে দোন্নারুম্মাকে ঘিরে প্রবল উত্তেজনা। অনেকে মনে করছেন, তার উপস্থিতি দলের ডিফেন্স আরও শক্তিশালী করবে। তবে এডারসনের বিদায়ে ভক্তদের একাংশে হতাশাও দেখা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “গোলরক্ষক পজিশনে এমন অভিজ্ঞ পরিবর্তন সিটির মৌসুমকে নতুন মাত্রা দেবে। তবে এডারসনের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব হারানোটা ক্ষতির বিষয়।”
অন্যদিকে, গালাতাসারাই সমর্থকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। তারা বিশ্বাস করছেন, এডারসনের অভিজ্ঞতা তাদের ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী করবে।
দোন্নারুম্মা বনাম এডারসন: সংখ্যার তুলনা
দোন্নারুম্মা এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে ৪১২ ম্যাচে গোলবার সামলেছেন এবং ইউরো শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। অন্যদিকে, এডারসন ৩৭২ ম্যাচ খেলে ম্যানসিটিকে একাধিক লিগ শিরোপা ও ইউরোপিয়ান গৌরব এনে দিয়েছেন।
দুজনই নিজ নিজ সময়ে ক্লাব ও জাতীয় দলের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাই এই পালাবদল কেবল দুই ক্লাবের জন্য নয়, গোটা ইউরোপিয়ান ফুটবলের জন্যই বড়সড় ঘটনা।
সামনে কী অপেক্ষা করছে
দোন্নারুম্মা কি এডারসনের মতোই নির্ভরযোগ্য হবেন? গার্দিওলার সিস্টেমে তিনি কতটা মানিয়ে নিতে পারেন, তা নিয়েই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অন্যদিকে, তুরস্কের লিগ ও ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় গালাতাসারাইকে কতদূর এগিয়ে নিতে পারেন এডারসন—তা নিয়েও সমর্থকদের আগ্রহ তুঙ্গে।
যা-ই হোক, ইউরোপিয়ান ট্রান্সফার মার্কেটের শেষ দিনের এই নাটকীয় গোলরক্ষক পালাবদল ২০২৫ মৌসুমকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলল।
এম আর এম – ১১৪৩, Signalbd.com