
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা, প্রযোজক ও মুক্তিযোদ্ধা সোহেল রানা আবারও দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে মুখ খুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া তার সাম্প্রতিক পোস্টে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালের মালিকদের কারণে ডাক্তাররা চিকিৎসার চেয়ে ব্যবসার দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েন। তার এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
হাসপাতালের মালিকদের কারণে চিকিৎসা সেবার গুণগত মান কমে যাচ্ছে
রোববার সকালে নিজের ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া পোস্টে সোহেল রানা লিখেছেন, দেশের অনেক প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক ডাক্তারদের জন্য নির্দিষ্ট টার্গেট ঠিক করে দেন। তিনি দাবি করেন, এই লক্ষ্য পূরণের চাপের কারণে অনেক সময় ডাক্তাররা রোগীর অপ্রয়োজনীয় টেস্টের পরামর্শ দিতে বাধ্য হন। ফলে সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত আর্থিক চাপের মুখে পড়ছে এবং চিকিৎসা সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তার ভাষায়, “হাসপাতালের মালিকরা ডাক্তারদের ব্যবসার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। যারা সৎভাবে রোগীকে চিকিৎসা দিতে চান, তারাও অনেক সময় বাধ্য হয়ে ব্যবসার খেলায় অংশ নেন।”
ডাক্তারদের বিদেশমুখী হওয়া নিয়ে উদ্বেগ
সোহেল রানা তার পোস্টে উল্লেখ করেছেন, দেশের বড় বড় চিকিৎসকরা স্বপ্নের জীবন খুঁজতে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “ডাক্তারদের তৈরিতে যে খরচ হয়, সেটি জনগণের টাকা। তাই বিদেশে গিয়ে কাজ করলে কিছু নির্দিষ্ট সময় পর দেশে ফিরে এসে জনগণের সেবা করা উচিত।”
তার মতে, সরকার যদি নীতিমালা তৈরি করে বিদেশে কাজের সুযোগ দেয়, তবে শর্ত থাকতে হবে যে নির্দিষ্ট সময় শেষে ডাক্তাররা দেশে ফিরে আসবেন।
ইন্টার্নি শেষে কম বেতনে ডাক্তার নিয়োগের সমালোচনা
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি বড় সমস্যার দিকও উল্লেখ করেন তিনি। তার মতে, ইন্টার্নি শেষ করার পর অনেক ডাক্তারকে অল্প বেতনে চাকরি দেওয়া হয়। এখানে অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। বরং কম খরচে ডাক্তারদের কাজে লাগিয়ে হাসপাতালের লাভ বাড়ানো হয়। এতে তরুণ চিকিৎসকদের হতাশা তৈরি হয় এবং অনেকেই বিদেশে যাওয়ার সুযোগ খোঁজেন।
ব্যতিক্রমী ডাক্তারদের প্রশংসা
সবশেষে এই খ্যাতিমান অভিনেতা দেশের সেসব ডাক্তার ও হাসপাতাল মালিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, যারা সব প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের মানুষের সেবার জন্য থেকে গেছেন। তিনি লিখেছেন, “যারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এবং দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তাদের জন্য আমার অন্তরের শ্রদ্ধা রইল।”
সোহেল রানার স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক লেখালেখি
কিছুদিন ধরেই অসুস্থ থাকার কারণে সোহেল রানা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এসব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত মতামত প্রকাশ করছেন। এর আগে তিনি চিকিৎসা খাতে অনিয়ম ও স্বচ্ছতার অভাব নিয়েও পোস্ট করেছিলেন, যা পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করেছিল।
স্বাস্থ্য খাতে অনিয়মের বাস্তব চিত্র
বাংলাদেশে প্রাইভেট স্বাস্থ্যসেবা খাত অনেকটাই বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগীর চিকিৎসার চেয়ে আয় বাড়ানো অনেক হাসপাতালের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেস্ট, ওষুধ এবং ভর্তির খরচ রোগীদের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ মনে করেন, সরকারের কঠোর নজরদারি না থাকলে এই সমস্যার সমাধান হবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, সোহেল রানার মতামত উপেক্ষা করার মতো নয়। কারণ, চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নের জন্য ডাক্তারদের প্রেষণা ও হাসপাতালগুলোর ব্যবসায়িক নীতি পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে তরুণ ডাক্তারদের প্রতি ন্যায্য আচরণ এবং বিদেশমুখী হওয়া রোধে সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করার কথা তারা বলছেন।
শেষ কথা
সোহেল রানার এই মন্তব্য দেশের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিনের অস্বচ্ছতার বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে। এখন দেখার বিষয়, নীতিনির্ধারকরা এ ধরনের স্পষ্ট বক্তব্য থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেন কি না। দেশের মানুষ এখন এমন এক স্বাস্থ্যব্যবস্থা চায়, যেখানে ব্যবসার চেয়ে মানবসেবাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এম আর এম – ০৬৭৪, Signalbd.com