
এশিয়ান নারী ফুটবল কাপে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ
নারী ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘ লড়াইয়ের পরিশ্রম এবার এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০২৫ সালের এশিয়ান কাপ নারী ফুটবল প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ দল অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশের এই কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের সঞ্চিত প্রচেষ্টা ও দেশের ফুটবল উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা।
এশিয়ান কাপের জন্য বাংলাদেশ দল কঠিন গ্রুপে পড়েছে, যেখানে রয়েছে ৯ বারের চ্যাম্পিয়ন চীন, ৩ বারের চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া, ও উজবেকিস্তান। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের জন্য এক চ্যালেঞ্জ হলেও, এর মাধ্যমে তারা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করার সুযোগ পাচ্ছে।
গ্রুপ ড্রয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও প্রতিপক্ষ
২০২৫ সালের এশিয়ান কাপের গ্রুপ ড্র সিডনির টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে চার নম্বর পট থেকে ইরানের নাম তোলা হলেও পরের ধাপে ভারতের সহ-অধিনায়ক সঙ্গীতা বাসফোর বাংলাদেশের নাম জানান, যেখানে বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপের তৃতীয় দল হিসেবে অবস্থান লাভ করে।
‘বি’ গ্রুপের দলগুলো:
- চীন (৯ বারের চ্যাম্পিয়ন)
- উত্তর কোরিয়া (৩ বারের চ্যাম্পিয়ন)
- বাংলাদেশ
- উজবেকিস্তান
এখানে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ হবে ৩ মার্চ চীনের বিপক্ষে। এরপর ৬ মার্চ হবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে লড়াই এবং ৯ মার্চ ম্যাচ খেলবে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে।
শক্তিশালী প্রতিপক্ষ: চীন ও উত্তর কোরিয়া
চীন এখন পর্যন্ত ৯ বার এশিয়ান কাপ জিতেছে, যা এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ। তারা গত আসরে ২০২২ সালে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। তাদের অভিজ্ঞতা ও শক্তি বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
অপরদিকে, উত্তর কোরিয়া তিনবার (২০০১, ২০০৩, ২০০৮) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এবং এশিয়ার অন্যতম সেরা দল। তারা ২০২৫ সালের টুর্নামেন্টেও জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী।
উজবেকিস্তান পাঁচবার এশিয়ান কাপ খেললেও কখনো গ্রুপ পর্ব পেরোয়নি। তাই তাদের বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জয় অর্জনের সুযোগ হতে পারে।
টুর্নামেন্টের সময়সূচি ও স্থান
এশিয়ান কাপের সব ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার তিন শহরে অনুষ্ঠিত হবে — সিডনি, পার্থ ও গোল্ড কোস্ট। টুর্নামেন্ট শুরু হবে ১ মার্চ এবং ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২১ মার্চ।
বাংলাদেশের ম্যাচ সূচি:
তারিখ | প্রতিপক্ষ | স্থান |
---|---|---|
৩ মার্চ | চীন | ওয়েস্টার্ন সিডনি স্টেডিয়াম, সিডনি |
৬ মার্চ | উত্তর কোরিয়া | ওয়েস্টার্ন সিডনি স্টেডিয়াম, সিডনি |
৯ মার্চ | উজবেকিস্তান | পার্থ রেক্টাঙ্গুলার স্টেডিয়াম, পার্থ |
বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনের গল্প
বাংলাদেশ দল জুলাই ২০২৫ সালে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফর্ম করে।
- বাহরাইনের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৭-০ গোলে জয়
- মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জয়
- তুর্কমেনিস্তানের বিরুদ্ধে ৭-০ গোলে জয়
এই সাফল্যের মাধ্যমে তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল টুর্নামেন্টে জায়গা পায়।
বাফুফের নারী উইং ও প্রতিনিধি না থাকার বিষয়টি
ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এ ব্যাপারে বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ জানান, ‘বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি ড্র অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি এবং এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।’
এশিয়ান কাপ ও বিশ্বকাপের গুরুত্ব
২০২৫ সালের এশিয়ান কাপ শুধুমাত্র একটি মঞ্চ নয়, বরং ২০২৭ সালের ব্রাজিল নারী বিশ্বকাপের সরাসরি যোগ্যতার জন্য একটি বড় সুযোগ। এশিয়ান কাপ থেকে মোট ছয়টি দল বিশ্বকাপে সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করবে।
- কোয়ার্টার ফাইনালে জেতা চার দল সরাসরি বিশ্বকাপে যাবে
- পরাজিত চার দল প্লে-ইন ম্যাচ খেলবে
- প্লে-ইন থেকে জয়ী দুই দল বিশ্বকাপের টিকিট পাবে
- হেরে যাওয়া দলগুলো আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফে অংশ নেবে
বাংলাদেশ নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশের নারী ফুটবল এখন নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। জাতীয় স্তরে ক্রিকেটের মতো ফুটবলও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নারী ফুটবল নিয়ে সরকার, বাফুফ ও বিভিন্ন সংস্থা বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এর পাশাপাশি দেশের যুবক-যুবতীরা এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছে।
বাংলাদেশের আফঈদা-ঋতুপর্ণার মতো তরুণ প্রতিভারা আগামীতেও দেশের নাম উজ্জ্বল করবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশগ্রহণ তাদের দক্ষতা বাড়াবে এবং দেশে ফুটবলের প্রতি আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাবে।
এশিয়ান নারী ফুটবল: একটি উন্নয়নের গল্প
এশিয়ার অনেক দেশেই নারী ফুটবল এখন দ্রুত উন্নয়ন করছে। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নারী ফুটবল বেগবান হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো নতুন দলে অংশগ্রহণ এশিয়ান ফুটবলের সমৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যের প্রতিফলন।
বাংলাদেশের মতো নতুন দলগুলোর জন্য এই টুর্নামেন্ট শিক্ষার মঞ্চ, যেখানে তারা বিশ্বমানের ফুটবলকে আত্মস্থ করতে পারবে এবং ভবিষ্যতে নিজস্ব শক্তি তৈরি করতে পারবে।
২০২৫ সালের নারী এশিয়ান কাপ হবে বাংলাদেশের জন্য এক স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কঠিন গ্রুপের মধ্যেও দলের সংগ্রামী মনোভাব ও প্রত্যয় বাংলাদেশকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
চীনের মতো ফুটবল মহাশক্তির বিপক্ষে লড়াই থেকে শুরু করে উত্তর কোরিয়া ও উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচগুলো বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবল দর্শকদের জন্য এক নতুন আশার আলো, যা ভবিষ্যতে দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সমৃদ্ধ করবে।
MAH – 12020, Signalbd.com