ফুটবল

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি ফুটবল তারকা

গাজার আল-মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে নির্মম আগ্রাসনে হারালো ফুটবল জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

ফিলিস্তিনের চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে আরও এক ক্রীড়াবিদ হারাল দেশ। গাজার সেন্ট্রাল আল-মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের বোমা হামলায় ফুটবলার মুহান্নাদ আল–লেলে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এই খবর নিশ্চিত করেছে এবং এ ঘটনাকে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বর্ণনা করেছে ফিলিস্তিনি ক্রীড়া মহলে।

মুহান্নাদ আল–লেলে: এক ফুটবল যোদ্ধার জীবনী

মুহান্নাদ আল–লেলে স্থানীয় ক্লাব খাদামাত আল–মাঘাজিতে কেরিয়ার শুরু করেন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে দলের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি গাজার ফুটবল অঙ্গনে তার দক্ষতা ও নৈপুণ্যের পরিচয় দেন। এরপর তিনি শাবাব জাবালিয়াতে যোগ দিয়ে দুই মৌসুম খেলেন এবং ২০১৮-১৯ মৌসুমে দলকে দ্বিতীয় স্থান অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরে গাজা স্পোর্টস ক্লাবে যোগ দিলেও লিগামেন্ট ইনজুরির কারণে কিছুদিন ছিটকে যান। পরে আবার খাদামাত আল-মাঘাজিতে ফিরে আসেন।

ফিলিস্তিনি ক্রীড়া মহলে মুহান্নাদকে একজন শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ফুটবলারেরূপে মনে করা হত। শুধু মাঠেই নয়, সমাজে তার আচরণ ও মানবিক গুণাবলীও তাকে অনন্য মর্যাদা দেয়। মুহান্নাদের মৃত্যু একটি বড় শোকের বিষয়, যা পুরো ফিলিস্তিনি ক্রীড়া বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

ইসরায়েলি হামলার ধ্বংসযজ্ঞ: ক্রীড়াপ্রাঙ্গণেও বিরূপ প্রভাব

ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জানায়, গত সোমবার ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় মুহান্নাদের বাসার তৃতীয় তলায় আঘাত লাগে। এতে তার মাথায় মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয় এবং মঙ্গলবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলায় মোট ৫৮৫ জন ক্রীড়াবিদ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ফুটবল খেলোয়াড়ের সংখ্যা ২৬৫। এর বাইরে আরও অনেকেই আহত এবং অসংখ্য ক্রীড়া স্থাপনা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে।

ফেডারেশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দখলদার বাহিনীর হামলায় ধ্বংস হয়েছে ২৬৪টি ক্রীড়া স্থাপনা, যার মধ্যে ১৮৪টি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত, এবং ৮১টি আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে রয়েছে ফিফা অর্থায়নে নির্মিত ১২টি স্টেডিয়াম, যা এখন আর নেই। গাজা উপত্যকার ইয়ারমুক ও ফিলিস্তিন স্টেডিয়ামগুলো এখন বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ফিলিস্তিনি ক্রীড়া ও সমাজে হামলার প্রভাব

ফিলিস্তিনি ক্রীড়া শুধু শারীরিক পরিশ্রম বা প্রতিযোগিতার জায়গা নয়, এটি তাদের আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি এবং মানবিক মর্যাদার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ক্রীড়া মাধ্যমেই অনেক যুবক শান্তিপূর্ণভাবে স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করে থাকে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ক্রীড়াঙ্গনের উপর এত বড় প্রভাব সমাজের যুবসমাজের মনোবল হ্রাসের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্ভাবনাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রীড়াবিদদের হত্যা ও ক্রীড়াপ্রাঙ্গণের ধ্বংসযজ্ঞ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের একটি গুরুতর দৃষ্টান্ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া জরুরি।

বিশ্ব ক্রীড়া সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ও সমর্থন

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের ক্রীড়াবিদ ও ফুটবল ফেডারেশনগুলো মুহান্নাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। অনেক ক্রীড়া সংগঠন ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের দাবি জানাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্ব ফুটবল শাসন সংস্থা ফিফাও হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং পরিস্থিতি মনিটর করছে। তবে তাদের কার্যকর পদক্ষেপ এখনও অপেক্ষিত।

ফিলিস্তিনি যুব সমাজ ও ফুটবল: আগামীর লড়াই

মুহান্নাদ আল–লেলের মতো প্রতিভাবান ফুটবলারের মৃত্যু ফিলিস্তিনে একটি বড় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তবে ফিলিস্তিনি যুবকরা হতাশ হবেন না, বরং তাদের আরও দৃঢ়চিত্ত ও সাহসী হয়ে উঠতে হবে। ফুটবল ও অন্যান্য ক্রীড়া তাদের জীবনে স্বপ্ন দেখার, একাত্মতার প্রতীক এবং শক্তির উৎস।

তাদের নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হলে ক্রীড়া অঙ্গনের উন্নয়ন অসম্ভব। তাই আন্তর্জাতিক কমিউনিটি ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে তাদের কণ্ঠস্বর তীব্র করতে হবে।

সংক্ষেপে:

  • মুহান্নাদ আল–লেলে গাজার আল-মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হলেন।
  • ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এ খবর নিশ্চিত করেছে।
  • গত এক বছর ধরে ৫৮৫ জন ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদ নিহত, যার মধ্যে ২৬৫ ফুটবলার।
  • ইসরায়েলি হামলায় ২৬৪টি ক্রীড়া স্থাপনা ধ্বংস, যার মধ্যে ১২টি ফিফা অর্থায়িত স্টেডিয়াম।
  • আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সম্প্রদায় শোক ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
  • ফিলিস্তিনি যুব সমাজ ফুটবল ও ক্রীড়ায় আগামীর লড়াই চালিয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button