ফুটবলের ইতিহাসে রেকর্ড গড়ার পথে ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার ফাবিও

ফুটবল ইতিহাসে এমন অনেক কিংবদন্তি আছেন যাদের ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানে রেকর্ড গড়া হয়ে থাকে। কিন্তু ব্রাজিলের ফ্লুমিনেন্স ক্লাবের গোলকিপার ফাবিও দেভিসন লোপেজ মাসিয়েল—একজন ৪৪ বছর বয়সী ফুটবলার, যিনি এখনও মাঠে নেমে নিয়মিত পারফর্ম করে ইতিহাসের নতুন পাতায় নিজের নাম লেখাচ্ছেন।
১৯৯৭ সালের ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সেই ঐতিহাসিক জয়ী দলে ছিলেন তিনি। সেই দলের অন্য তারকা রোনালদিনিও হয়ে ওঠেন বিশ্ববিখ্যাত, কিন্তু ফাবিও ছিলেন চুপচাপ, ধৈর্য্যশীল এক গোলরক্ষক, যিনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের দক্ষতা আর অভিজ্ঞতায় ফুটবল বিশ্বের নজর কাড়তে শুরু করেন।
অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ার: ১৩৭৮ ম্যাচে বল থামানো কিংবদন্তি গোলকিপার
ফ্লুমিনেন্সের হয়ে ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২২২ ম্যাচ খেলা ফাবিওর ম্যাচ সংখ্যা দেখে অনেক তরুণ ফুটবলারও চমকে যান। গত তিন মৌসুমে তিনবারই তিনি ৬০-এর বেশি ম্যাচ খেলেছেন। ২০২৫ সালের এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৩৫ ম্যাচ খেলে ৫০৮টি ক্লিনশিট বা গোলশূন্য ম্যাচের রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন, যা বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
অদ্ভুত শারীরিক সক্ষমতা আর অনবদ্য দক্ষতায় তিনি ইতালিয়ান কিংবদন্তি গোলকিপার জিয়ানলুইজি বুফনের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন, যিনি ক্লিনশিটের ক্ষেত্রে ৫০৭ ম্যাচের রেকর্ড ধারক ছিলেন।
ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ব্রাজিলিয়ান লিগ, ফাবিওর অবিচল পারফরম্যান্স
যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ক্লাব বিশ্বকাপে ৪৪ বছর বয়সী এই গোলকিপার ফ্লুমিনেন্সের হয়ে শেষ ষোলো ম্যাচে ইন্টার মিলানকে ২-০ গোলে হারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। চারটি দারুণ সেভ করে দলকে জয় এনে দিয়েছেন তিনি, যার মধ্যে শেষ সেভটি ছিল অবিশ্বাস্য—পা দিয়ে পেনাল্টি রুখে দিয়েছেন। ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই বয়সে এতটা পারফরম্যান্স দেখানো সত্যিই বিস্ময়ের।
গিনেস রেকর্ডের পথে: শিলটনের ম্যাচ সংখ্যা ছাড়িয়ে ফাবিওর সামনে শুধুই সময়
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড এখনো ধরে রেখেছেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি গোলকিপার পিটার শিলটন। তাঁর খেলা ম্যাচ সংখ্যা প্রায় ১৩৯০। কিন্তু ফাবিওর খেলাধুলার পরিসংখ্যান দেখলে স্পষ্ট হয়, ব্রাজিলিয়ান এই গোলকিপার শিলটনের রেকর্ড পেছনে ফেলার খুব কাছে পৌঁছে গেছেন।
শিলটনের ক্লাব ক্যারিয়ার ১২৪৯ ম্যাচ এবং ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে ১২৫ ম্যাচ। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ১৩ ম্যাচ যুক্ত করলে মোট ম্যাচ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৮৭। অন্যদিকে, পুরো ক্লাব ক্যারিয়ার ব্রাজিলে কাটানো ফাবিও এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১৩৭৮ ম্যাচ। জাতীয় দলে না খেললেও ক্লাব লেভেলে তার অবদান অসাধারণ।
ফাবিও নতুন চুক্তি করেছেন ২০২৬ সাল পর্যন্ত, যা তার রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করেছে। আগামী সেপ্টেম্বরেই তিনি ৪৫ বছর পূর্ণ করবেন। এই দীর্ঘ ক্যারিয়ার আর অবিচল মনোবল তাকে ইতিহাসের সেরা ম্যাচ খেলার রেকর্ডদাতায় পরিণত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও অন্যান্য কিংবদন্তিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা
৪০ বছর বয়সী পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও ম্যাচ খেলার সংখ্যায় ফাবিওর পিছু ধাওয়া করছেন। রোনালদোর ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ১২৮৬টি অফিশিয়াল ম্যাচ আছে। সম্প্রতি আল নাসরের সঙ্গে দুই বছরের নতুন চুক্তি করে তিনি ২০২৬ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।
ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পাশাপাশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডও ভাঙতে চান রোনালদো। তবে বর্তমানে রেকর্ডটা প্রায় ফাবিওর দখলে।
ফাবিওর ক্যারিয়ারের বিশেষ কিছু মুহূর্ত
- ১৯৯৭ সালের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে বিশ্বজয়ী দলের একজন সদস্য
- ফ্লুমিনেন্সে ২০২২ সাল থেকে নিয়মিত গোলকিপার
- ক্লিনশিটের রেকর্ড ভাঙা (৫০৮টি)
- ক্লাব বিশ্বকাপে ইন্টার মিলানের বিরুদ্ধে অসাধারণ পারফরম্যান্স
- আগামী ২০২৬ পর্যন্ত ফ্লুমিনেন্সের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন
৪৫ বছর বয়সেও ফুটবলে রোমাঞ্চ তৈরি করা ফাবিও
ফুটবল বিশ্বের অনেক বড় বড় তারকা ক্লাব এবং জাতীয় দলে বিদায় নিয়েছেন যখন ফাবিও এখনও মাঠের মাটি ছুঁয়ে দিয়েই দর্শকদের বিমোহিত করছেন। তার অতুলনীয় ধৈর্য্য, কঠোর পরিশ্রম এবং অভিজ্ঞতা তাঁকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড ভাঙতে সময়ের অপেক্ষা, আর সেটি ভাঙলেই ফুটবল বিশ্বে ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার ফাবিওর নাম সোনার হরফে লেখা থাকবে।