পিএসএল জিতে কত টাকা পেল রিশাদ–সাকিবের দল, অন্যরা কত

পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ২০২৫ এর জমকালো সমাপ্তি ঘটল রোববার রাতে, যখন লাহোর কালান্দার্স শিরোপা ঘরে তুলে নিল কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্সকে হারিয়ে। ম্যাচ শেষে ট্রফি হাতে শাহিন শাহ আফ্রিদির উল্লাস এবং সতীর্থদের বাঁধভাঙা আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে লাহোরের দল। তবে শুধুই ট্রফি নয়, এই জয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থ পুরস্কারও।
চ্যাম্পিয়ন লাহোর কালান্দার্স দলটিতে এবার বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও রিশাদ হোসেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের অসাধারণ পারফরম্যান্স দলকে এনে দিয়েছে বিশাল আর্থিক প্রাপ্তিও। দেখে নেওয়া যাক কে কত পেল, কার কীর্তি কেমন ছিল।
লাহোর কালান্দার্স পেল ১৪ কোটি পাকিস্তানি রুপি
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পুরস্কার হিসেবে লাহোর কালান্দার্স পেয়েছে ১৪ কোটি পাকিস্তানি রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি ৫ লাখ টাকা (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী), আর মার্কিন ডলারে দাঁড়ায় ৫ লাখ ডলার। এই অর্থমূল্য পিএসএলের ইতিহাসে অন্যতম বড় পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ফাইনালে কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে শাহিন আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন লাহোর। ২০১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে শ্রীলঙ্কান তারকা কুশল পেরেরার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয় নিশ্চিত হয়।
রানার্সআপ কোয়েটা পেল ২ লাখ ডলার
ফাইনালে হারলেও পুরস্কারবঞ্চিত হয়নি কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্স। রানার্সআপ দল হিসেবে তারা পেয়েছে ২ লাখ মার্কিন ডলার, যা পাকিস্তানি মুদ্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ রুপি, আর বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
এ দলের হয়ে এবারের আসরে সবচেয়ে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স করেছেন তরুণ ব্যাটসম্যান হাসান নেওয়াজ, যিনি টুর্নামেন্টের অন্যতম বড় তারকায় পরিণত হয়েছেন।
টুর্নামেন্টসেরা হাসান নেওয়াজ: গাড়ি + ৩০ লাখ রুপি
কোয়েটার হয়ে খেলা ডানহাতি ব্যাটসম্যান হাসান নেওয়াজ হয়েছেন এবারের আসরের টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড়। তিনি পুরো টুর্নামেন্টে ৩৯৯ রান করে আলোচনায় আসেন। এই কীর্তির জন্য পেয়েছেন ৩০ লাখ পাকিস্তানি রুপি পুরস্কার এবং একটি বিওয়াইডি সিল মডেলের বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি (ইলেকট্রিক কার)।
এছাড়াও তিনি হয়েছেন সেরা ব্যাটসম্যান, যার জন্য পেয়েছেন আরও ৩৫ লাখ রুপি। অর্থাৎ মোটে হাসান নেওয়াজের প্রাপ্ত অর্থমূল্য দাঁড়াল ৬৫ লাখ রুপি এবং একটি গাড়ি—যা পাকিস্তানি ক্রিকেট ইতিহাসে তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা।
ব্যক্তিগত পুরস্কার তালিকা: কে কত পেল?
পিএসএলের এই দশম আসরে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বেশ কিছু খেলোয়াড় পেয়েছেন সম্মাননা ও অর্থপুরস্কার। সেরা খেলোয়াড়দের তালিকা ও পুরস্কার নিচে দেওয়া হলো—
বিভাগ | খেলোয়াড় | দল | পুরস্কার |
---|---|---|---|
সেরা বোলার | শাহিন শাহ আফ্রিদি | লাহোর কালান্দার্স | ৩৫ লাখ রুপি |
সেরা অলরাউন্ডার | সিকান্দার রাজা | লাহোর কালান্দার্স | ৩৫ লাখ রুপি |
সেরা ফিল্ডার | আবদুস সামাদ | কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্স | ৩৫ লাখ রুপি |
সেরা উইকেটকিপার | মোহাম্মদ হারিস | পেশাওয়ার জালমি | ৩৫ লাখ রুপি |
সেরা উদীয়মান | মোহাম্মদ নাঈম | ইসলামাবাদ ইউনাইটেড | ৩৫ লাখ রুপি |
ফাইনালসেরা কুশল পেরেরা: ৫০ লাখ রুপি
লাহোর কালান্দার্সের শ্রীলঙ্কান ওপেনার কুশল পেরেরা ফাইনালে ৩১ বলে ৬২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। তাঁর এই ঝড়ো ব্যাটিং ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হন তিনি। পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন ৫০ লাখ পাকিস্তানি রুপি।
রিশাদ–সাকিব–মিরাজ: বাংলাদেশিদের গৌরব
এবারের পিএসএলে চ্যাম্পিয়ন লাহোর কালান্দার্স দলে তিনজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার খেলেছেন—সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং রিশাদ হোসেন। বিশেষ করে রিশাদ তাঁর লেগস্পিন দিয়ে একাধিক ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়েছেন। সাকিব ও মিরাজ ছিলেন দলের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার।
যদিও তারা ব্যক্তিগত পুরস্কার পাননি, তবে শিরোপাজয়ী দলের অংশ হিসেবে তাদের আর্থিক পুরস্কার এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনজনের একসঙ্গে তোলা ছবি ভাইরাল হয়েছে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি
পিএসএলের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি লাহোর অধিনায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদির হাতে তুলে দেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। অনুষ্ঠানটি ছিল জমকালো, রঙিন আলোকসজ্জা ও আতশবাজির সমাহারে ভরা।
পিএসএল ২০২৫ শুধু ক্রিকেটীয় উৎকর্ষের এক প্রতিচ্ছবিই নয়, এটি খেলোয়াড়দের অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রাপ্তির একটি বিশাল মঞ্চও। এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন লাহোর কালান্দার্স, টুর্নামেন্টসেরা হাসান নেওয়াজ এবং ফাইনালসেরা কুশল পেরেরা সবাই প্রমাণ করেছেন যে পরিশ্রম ও পারফরম্যান্সের মূল্য ঠিকই দেওয়া হয়।
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে আরও বড় ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন দেখা যাক, এই অভিজ্ঞতা তারা কিভাবে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে কাজে লাগান।