ভারতের কাছে হারের যন্ত্রণা ভুলতে পারছেন না মুরশেদ

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে হৃদয় ভেঙেছে বাংলাদেশের তরুণ ফুটবলারদের। এত কাছে গিয়েও শিরোপা না পাওয়ার যন্ত্রণা এখনো ভুলতে পারছেন না বাঁ পায়ের প্রতিভাবান ফুটবলার মুরশেদ আলী। “হারের পর চোখে পানি চলে আসে। আমরা কেউই ঘুমাতে পারিনি”—বললেন মুরশেদ, আজকের পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে।
পঞ্চগড় জেলার ছেলে মুরশেদ আলীর ফুটবলে পথচলা শুরু হয় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ স্কুল টুর্নামেন্ট দিয়ে। সেখান থেকে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায় পেরিয়ে তিনি বিকেএসপি এবং পরে বাফুফে এলিট একাডেমিতে সুযোগ পান। বর্তমানে তিনি খেলছেন ফর্টিস এফসির হয়ে এবং লক্ষ্য জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া।
চারবার ভারতের মুখোমুখি, প্রতিবারই হার!
মুরশেদের জন্য ভারতের বিপক্ষে হার নতুন কিছু নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে এটি ছিল তাঁর চতুর্থ ফাইনাল, এবং প্রতিবারই ভারতই নিয়েছে জয়। তবে এবার হারের যন্ত্রণা ছিল আরও বেশি।
“এত কাছে গিয়েও আবার চলে গেল। আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি। সবাই মন খারাপ করে ছিল। তবে আশা করি, একদিন ভারতকে হারাবই ইনশা আল্লাহ,” — বলেন মুরশেদ।
ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল পুরো দলের
সেই রাতে বাংলাদেশ শিবিরে কেউই ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেননি। টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ার বেদনা সবার চোখে-মুখে। “আমরা কেউই ঘুমাতে পারিনি,” বলে জানান এই তরুণ মিডফিল্ডার। বিশেষ করে টাইব্রেকারে দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় নাজমুলের পেনাল্টি মিস সবাইকে হতবাক করে দেয়।
“অনুশীলনে ও কখনো মিস করত না। কিন্তু ভাগ্য সেদিন আমাদের পক্ষে ছিল না,” বলেন মুরশেদ।
পরিবারের সমর্থন, আর কোচের অবদান
মুরশেদের ফুটবল ক্যারিয়ারে তাঁর পরিবারের শুরুতে ছিল অনীহা। আশপাশে অনেকেই ফুটবল খেললেও সফল না হওয়ায় বাবা-মা ছিলেন সন্দিহান। কিন্তু তাঁর কোচ মোফাজ্জল হোসেন বিপুল তাঁকে শুরু থেকেই সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন।
“বুট, জার্সি, এমনকি ঢাকায় আসা-যাওয়ার খরচও তিনিই দিতেন। তিনি না থাকলে হয়তো আমি আজ বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দিতে পারতাম না।”
ভারতের কোচের প্রশংসা, ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
ভারতের কোচ বিবিয়ানো ফার্নান্দেজ ম্যাচের পর ব্যক্তিগতভাবে মুরশেদের প্রশংসা করেন এবং বলেন, “এই খেলাটা ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে তুমি বাংলাদেশের বড় তারকা হবে।” এই প্রশংসা মুরশেদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাঁ পায়ের খেলা, আর লামিনে ইয়ামাল থেকে অনুপ্রেরণা
বাংলাদেশে বাঁ পায়ের ফুটবলারের সংখ্যা কম, আর এ দিক থেকে মুরশেদ নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন। লেফট উইংয়ে খেলা শুরু করলেও এখন তিনি রাইট উইংয়ে খেলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
“লামিনে ইয়ামালকে দেখে আমি রাইট উইংয়ে খেলতে শুরু করি। ওর মতো আমিও বাঁ পায়ে খেলি। রাইট উইংয়ে খেললে বল কাট ইন করে নেওয়া যায় এবং প্রতিপক্ষ আমাকে সহজে আটকাতে পারে না,”—বলেন মুরশেদ।
জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন
বর্তমানে তিনি ফর্টিস এফসির খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে একটি ম্যাচ খেলেছেন। তবে মুরশেদের চোখ এখন অনূর্ধ্ব-২৩ দল এবং জাতীয় দলের দিকে।
“সুযোগ পেলে ইনশা আল্লাহ নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করব। আমি প্রস্তুত আছি। বাকিটা আল্লাহর হাতে।”
প্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসি, নতুন অনুপ্রেরণা ইয়ামাল
ছোটবেলা থেকে লিওনেল মেসিকে আদর্শ মানলেও এখন তাঁর অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে স্পেনের তরুণ তারকা লামিনে ইয়ামাল। ইয়ামালের খেলার ধরণ ও বাঁ পায়ের ব্যবহার মুরশেদকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে।