বাংলাদেশ পেস বোলিংয়ে ‘নতুন যুগের সূচনা’, টাইগারদের নতুন পেস কোচ শন টেইট

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে শুরু হলো নতুন এক অধ্যায়। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন গতিমান পেসার শন টেইটকে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পেস বোলিং কোচ হিসেবে। আড়াই বছরের এই চুক্তির মাধ্যমে ২০২৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের পেসারদের নিয়ে কাজ করবেন তিনি।
চুক্তি নিশ্চিত করে আজ বিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পেস ইউনিটের উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচে সফলতা অর্জনই হবে এই অস্ট্রেলিয়ান কোচের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়া প্রসঙ্গে টেইট বলেন, “এটা বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চমৎকার সময়। চাইলে এটিকে এক নতুন যুগের সূচনাও বলা যায়।”
শন টেইট কে
৪২ বছর বয়সী শন টেইট এক সময় বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতির পেসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩৫টি ওয়ানডে, ৩টি টেস্ট এবং ২১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ বলের গতি ছিল প্রায় ১৬০ কিমি/ঘণ্টা। ২০১৭ সালে খেলোয়াড়ি জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি পুরোদমে কোচিংয়ে যুক্ত হন।
কোচিং ক্যারিয়ারে বৈচিত্র্য
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে শন টেইট কোচিংয়ে যুক্ত হয়ে কাজ করেছেন পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান জাতীয় দলের পেস ইউনিটের সঙ্গে। শুধু আন্তর্জাতিক পর্যায়েই নয়, তিনি সফলভাবে কাজ করেছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও।
বিগ ব্যাশ, পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল), ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)-এ পেস কোচ হিসেবে তার কার্যক্রম ছিল প্রশংসিত।
বাংলাদেশে টেইটের কোচিং অভিজ্ঞতা রয়েছে আগেও। বিপিএলে চট্টগ্রাম কিংস দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সেই সময়ই তিনি বাংলাদেশের তরুণ বোলারদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিলেন।
বিসিবির টার্গেট: অভিজ্ঞতায় ভবিষ্যৎ গড়া
বিসিবি সূত্রে জানা যায়, টেইটের অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যপ্রিয় দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে পছন্দের তালিকায় তুলে আনে। বোর্ড আশা করছে, টেইটের নেতৃত্বে বাংলাদেশের তরুণ পেসারদের দক্ষতা ও মানসিকতা উভয়ই উন্নত হবে।
বিশেষ করে নাহিদ রানা, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, এবাদত হোসেনদের নিয়ে টেইট নতুন পরিকল্পনায় এগোতে চান।
তার ভাষ্য, “সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পেসারদের নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, যা দারুণ এক ইতিবাচক দিক। কিন্তু এটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, এখানে প্রতিভা নয়, ফলাফলই আসল। আমার মূল লক্ষ্য হবে এই প্রতিভাগুলো দিয়ে জয়ের ধারাবাহিকতা তৈরি করা।”
টেইটের আগমন ও অ্যাডামসের বিদায়
টেইটের নিয়োগ এসেছে নিউজিল্যান্ডের কোচ আন্দ্রে অ্যাডামসের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতায় চুক্তি বাতিলের পর। অ্যাডামস গত কয়েক মাস ধরে দলের সঙ্গে কাজ করলেও বিসিবির পরিকল্পনার সঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তৈরি হয়। ফলে নতুন ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে টেইটকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ফিল সিমন্সের সঙ্গে যুগলবন্দি
বাংলাদেশ জাতীয় দলের বর্তমান প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। তিনিও টেইটের মতো ২০২৭ সালের নভেম্বরে পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ। টেইট জানিয়েছেন, সিমন্সের সঙ্গে কাজ করাও হবে তার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা।
তার ভাষ্য, “ফিল সিমন্সের সঙ্গে কাজ করার সুযোগটাও আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অভিজ্ঞ এবং সফল কোচ। আমি বিশ্বাস করি, আমরা একসঙ্গে কাজ করে দলকে আরও শক্তিশালী করতে পারব।”
বাংলাদেশ পেস বোলিংয়ের বর্তমান চিত্র
বর্তমানে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং ইউনিটে বেশ কয়েকজন তরুণ ও প্রতিভাবান বোলার রয়েছেন।
তাসকিন আহমেদ: অভিজ্ঞতা ও গতি দুটোই আছে। ইনজুরির পর ফিরে এসেছেন দৃঢ়তার সঙ্গে।
হাসান মাহমুদ: ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছেন, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
নাহিদ রানা: সদ্য আবির্ভূত প্রতিভা, বিপিএলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছেন।
এবাদত হোসেন ও শরিফুল ইসলাম: মাঝেমধ্যে ঝলক দেখালেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি।
এই পেসারদের গড়ে তোলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চাপ সামাল দেওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতির কাজেও বিশেষ নজর দেবেন টেইট।
বিশ্লেষকদের মত
দেশীয় ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, টেইটের মতো আগ্রাসী মানসিকতার ও অভিজ্ঞ কোচ আসায় বাংলাদেশের পেস আক্রমণ আরও ধারালো হবে। অনেকে বলছেন, টেইটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বোলারদের ইনজুরি রোধ এবং মানসিক দৃঢ়তা তৈরি করা।
কবে যোগ দিচ্ছেন
বিসিবির সূত্রে জানা গেছে, মে মাসের শেষ সপ্তাহেই বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সরাসরি কাজ শুরু করবেন শন টেইট। তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট হতে পারে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য আফগানিস্তান সিরিজ, যা আগামী মাসে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে পেস বোলিং বিভাগ অনেক সময়ই উপেক্ষিত ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পেসারদের উন্নতিতে নজর দিয়েছে বোর্ড। এরই ধারাবাহিকতায় শন টেইটের মতো অভিজ্ঞ এবং আগ্রাসী কোচের আগমনকে বিশ্লেষকরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।
যদি টেইট তরুণ বোলারদের ঠিকভাবে গাইড করতে পারেন, ইনজুরি প্রতিরোধ এবং ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশের পেস বোলিং সত্যিকার অর্থেই একটি ‘নতুন যুগে’ প্রবেশ করতে পারে।