ক্রিকেট

নেইমার, জেমস বন্ড থেকে তাসকিনের চিকিৎসক যিনি

বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ যখন গোড়ালির জটিল ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে, তখন চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হয় এমন এক চিকিৎসকের কাছে যিনি শুধু ক্রীড়াজগতেই নন, সিনেমা ও সঙ্গীত জগতের তারকাদের কাছেও ভরসার নাম—প্রফেসর জেমস ক্যাল্ডার।

লন্ডনের বিখ্যাত ফোর্টিয়াস ক্লিনিকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্যাল্ডার বিশ্বের সেরা অর্থোপেডিক সার্জনদের একজন হিসেবে বিবেচিত। নেইমার, ভার্জিল ফন ডাইক, এমনকি ‘জেমস বন্ড’ খ্যাত ড্যানিয়েল ক্রেইগ বা ‘নির্ভানা’ ব্যান্ডের সাবেক ড্রামার ডেভ গ্রোলের মতো তারকারাও তাঁর চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন।

নিজেই অস্ত্রোপচার করিয়ে চিকিৎসক!

চমকপ্রদ হলেও সত্য, নিজের হাঁটুর সমস্যায় ক্যাল্ডারকেও সম্প্রতি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তবে সেটা করেছিলেন এক সহকর্মী চিকিৎসকের মাধ্যমে। অস্ত্রোপচারের কয়েক দিনের মধ্যেই হাঁটাচলায় স্বাভাবিক হন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে ক্যাল্ডার বলেন, “অস্ত্রোপচারের পর এখন আরও ভালোভাবে হাঁটু ভাঁজ করতে পারছি।”

তাঁর হাস্যরসাত্মক মন্তব্য, “তোতলামি সারানোর চিকিৎসকও তোতলা হতে পারেন”—এই কথার মধ্যেই লুকিয়ে আছে চিকিৎসা জগতের বাস্তবতা।

নেইমার, ফন ডাইক থেকে তাসকিন—সবাই আসেন ক্যাল্ডারের ক্লিনিকে

বিশ্বজুড়ে ক্রীড়াবিদদের মাঝে ক্যাল্ডারের জনপ্রিয়তার মূল কারণ তাঁর নিখুঁত অস্ত্রোপচার, দ্রুত রিকভারি প্ল্যান এবং আধুনিক বায়োইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান। তাঁর ক্লিনিকের হলরুমেই ফ্রেমে বাঁধাই করা আছে নেইমার ও ফন ডাইকের সই করা জার্সি। ক্যাল্ডার লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক এবং অ্যাঙ্কেল ম্যানেজমেন্টে পিএইচডি ডিগ্রিধারী।

গত মাসেই বাংলাদেশের তারকা পেসার তাসকিন আহমেদ ইংল্যান্ড গিয়ে তাঁর কাছে চিকিৎসা নেন। বিসিবি চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীর ভাষ্য, “আমরা ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গেও কথা বলেছি। সবদিক বিবেচনায় ক্যাল্ডারই সেরা বিকল্প।”

‘জেমস বন্ড’ তারকার চিকিৎসকও তিনিই

হলিউডের সুপারহিট সিরিজ ‘জেমস বন্ড’-এর প্রযোজক বারবারা ব্রোকোল্লি ক্যাল্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ২০২১ সালে। কারণ, ওই সিরিজের সিনেমা No Time to Die–এ অভিনয় করতে গিয়ে ড্যানিয়েল ক্রেগ পা ভেঙে ফেলেন। তখন তাঁকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নেন ক্যাল্ডার। তাঁর দক্ষতা এতটাই, যে সময়মতো না সুস্থ হলে একটি বড় বাজেটের সিনেমা আটকে যেত।

তারকাদের সময় ম্যানেজ করাই বড় চ্যালেঞ্জ

জেমস ক্যাল্ডার বলেন, ক্রীড়া নয়, বরং বিনোদন জগতের তারকাদের সময় ম্যানেজ করাই বেশি কঠিন। একটু সময় এদিক-সেদিক হলেই ‘লাখ লাখ ডলারের ক্ষতি’ হতে পারে। তাই তাঁদের চিকিৎসা অনেকটা ‘টাইম বোমা’-র মতো—নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চিকিৎসা সম্পন্ন করতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কেভিন ডুরান্টও তাঁর রোগী

একসময় ক্রীড়াবিদদের অস্ত্রোপচারের জন্য আমেরিকাই ছিল ভরসা। কিন্তু এখন ইউরোপের মধ্যেই, বিশেষ করে ক্যাল্ডারের ক্লিনিকে ভিড় করেন বিশ্বজুড়ে ক্রীড়াবিদেরা। এমনকি আমেরিকান বাস্কেটবল কিংবদন্তি কেভিন ডুরান্টও ব্রুকলিন নেটসে খেলার সময় তাঁর কাছে চিকিৎসা নেন।

চোটের পেছনে কোচ বদলের প্রভাব!

একটি চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন ক্যাল্ডার—ফুটবল ক্লাবে কোচ বদল হলে খেলোয়াড়দের ইনজুরি বেড়ে যায়। কারণ, নতুন কোচরা নিজেকে প্রমাণ করতে গিয়ে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে বাড়তি পারফরম্যান্স চান। এতে হ্যামস্ট্রিং বা টেন্ডনের মতো ছোটখাটো ইনজুরিও বেড়ে যায়। এমনই এক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ক্যাল্ডার বলেন, “এক বড় ক্লাবের সিইও জানালেন, বিষয়টা তাঁরা জানেন ঠিকই, কিন্তু প্রতিকারের সুযোগ কম।”

অভিজ্ঞতা আর আধুনিক প্রযুক্তির মিশেল

প্রায় দুই দশকের অভিজ্ঞতা, আধুনিক বায়োইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি এবং স্পোর্টস মেডিসিনে বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গে কাজ করায় ক্যাল্ডার হয়ে উঠেছেন অভিজাত চিকিৎসকদের একজন। তাঁর কাছে রোগী হওয়া মানে শুধু চিকিৎসা নয়, বরং বিশ্বমানের কেয়ার ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া।

তাসকিন আহমেদ, নেইমার বা ড্যানিয়েল ক্রেগ—যেই হোন না কেন, বিশ্বমানের চিকিৎসা পেতে চাইলে এখন একটাই ঠিকানা: প্রফেসর জেমস ক্যাল্ডারের ফোর্টিয়াস ক্লিনিক।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button