এনামুল-সাদমানের দুর্দান্ত জুটিতে শতরান বাংলাদেশের

দীর্ঘ ২৮ মাসের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে ফিরেছে বহু কাঙ্ক্ষিত শতরান। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে আজ সোমবার প্রথম ইনিংসে এনামুল হক বিজয় ও সাদমান ইসলাম গড়েছেন ১১৮ রানের দুর্দান্ত জুটি।
এই পার্টনারশিপ শুধু ইনিংসের ভিত গড়ে দেয়নি, বরং নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটিং অর্ডারে—বিশেষ করে ওপেনিং নিয়ে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা কাটানোর পথ দেখাচ্ছে।
৩২ ইনিংস পর ওপেনিংয়ে শতরান
বাংলাদেশ টেস্টে শেষবার উদ্বোধনী জুটিতে শতরান পেয়েছিল ২০২২ সালে চট্টগ্রামেই, যখন নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান মিলে করেছিলেন ১২৪ রান। এরপর কেটে গেছে ৩২ ইনিংস, যেখানে কোনো জুটিই শতরানে পৌঁছাতে পারেনি। এমনকি শেষ ১২ ইনিংসে পঞ্চাশ পেরোনো জুটিও দেখা যায়নি।
আজ সেই খরা কাটালেন এনামুল ও সাদমান। দুজনেই ছিলেন আত্মবিশ্বাসী এবং দায়িত্বশীল। শুরু থেকেই জিম্বাবুয়ের বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন তাঁরা। এমনকি প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন ২৫ ওভারের মধ্যেই পাঁচজন বোলার ঘুরিয়েও কোনো সাফল্য পাননি।
প্রত্যাবর্তনের ম্যাচেই এনামুলের অবদান
তিন বছর পর টেস্ট দলে ফেরা এনামুল হক সুযোগ পেয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচকদের আস্থা বৃথা যায়নি। আগের পাঁচ টেস্টে যেখানে তাঁর সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল মাত্র ২৩ রান, সেখানে আজ মধ্যাহ্নভোজের আগেই করেন ৩৮ রান (৬৫ বলে)। পরে যোগ করেন আরও ১ রান, ৩৯ রানে আউট হলেও দায়িত্বপূর্ণ একটি ইনিংস খেলেন তিনি।
উল্লেখযোগ্য হলো, এনামুলকে সুযোগ দিতে মাহমুদুল হাসান জয়কে বাইরে রাখা হয়েছে। নির্বাচকরা এনামুলের ঘরোয়া রানের ফর্মকে গুরুত্ব দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেন এবং তার প্রতিদানও মিলেছে।
ফিফটির পথে সাদমান
অন্যদিকে, সাদমান ইসলাম দেখিয়েছেন তাঁর পরিণত ব্যাটিংয়ের ছাপ। ধীরস্থির ও টেম্পারামেন্টপূর্ণ ব্যাটিংয়ে তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি। তিনি ছিলেন আরো দৃঢ়—শুরু থেকে বল খেলে খেলে রান তুলেছেন এবং পরিস্থিতি বুঝে খেলা চালিয়ে গেছেন।
হালকা শঙ্কা কাটিয়ে স্বস্তির শুরু
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি দীর্ঘদিন ধরেই ছিল অনিয়মিত। আগের ম্যাচগুলোতে ওপেনারদের দ্রুত ফিরে যাওয়া প্রায় স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রামে এই ম্যাচ দিয়ে সেই ধারা বদলানোর ইঙ্গিত মিলছে।
প্রথম ইনিংসেই ওপেনিংয়ে শতরানের এই জুটি বাংলাদেশের জন্য শুধু মনোবলের জোগান নয়, টেস্টে ধারাবাহিকতার নতুন প্রত্যাশাও জাগাচ্ছে।
এই জুটির সফলতা শুধু আজকের ইনিংসের কথা বলছে না, বরং ভবিষ্যতের জন্যও একটি ইতিবাচক দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। এনামুল ও সাদমান যদি ধারাবাহিক হতে পারেন, তবে বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটিং লাইনআপ আরও শক্তিশালী হবে—বিশেষ করে বিদেশি কন্ডিশনে।
সেইসঙ্গে এই জুটি টিম ম্যানেজমেন্টকে একটি বড় প্রশ্নের মুখোমুখি করছে—যাঁদের সুযোগ দেওয়া হয়নি, তাঁদের জায়গায় যারা এসেছেন, তারা কী টিকে যাবেন? উত্তর সময়ই বলে দেবে।