চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের গার্ড ব্রেক বগির হুক ভেঙে রেললাইনে আটকে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
২৬ জুলাই ২০২৫, শনিবার, দুপুর ৩টা ১০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর গোমদণ্ডী এলাকায় ঘটে এই দুর্ঘটনা। এতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং কক্সবাজারগামী প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনও চট্টগ্রাম স্টেশনে আটকে থাকে।
দুর্ঘটনার বিবরণ: কী ঘটেছে গোমদণ্ডীতে?
কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। ট্রেনটির গার্ড ব্রেক বগি — যেখানে ট্রেনের পরিচালক ও গার্ড থাকেন এবং যাত্রীদের জন্য খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা থাকে — সেই বগিটির হুক ভেঙে যায়। এর ফলে বগিটি মূল ট্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রেললাইনে আটকে যায়।
গোমদণ্ডী স্টেশনের মাস্টার মোহাম্মদ তারেক জানিয়েছেন, “গোমদণ্ডী পার হওয়ার পর ট্রেনের শেষ বগির হুক ভেঙে যাওয়ায় ট্রেনটি ৩০ মিনিট পর্যন্ত আটকে ছিল। পরে বগিটি রেখে ট্রেনটি চট্টগ্রামের দিকে রওনা দেয়।”
এই দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি, তবে রেললাইনে আটকে থাকা বগি সরানো না পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
ট্রেন চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের দুর্ভোগ
বগি বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এই রুটে থাকা একাধিক ট্রেনের সময়সূচিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী প্রবাল এক্সপ্রেস বিকেল চারটায়ও স্টেশন থেকে ছাড়তে পারেনি।
চট্টগ্রাম স্টেশনের মাস্টার আবু জাফর মজুমদার বলেন, “গোমদণ্ডীতে এই দুর্ঘটনার কারণে লাইন বন্ধ রয়েছে। উদ্ধারকারী ট্রেন আসার পর বগিটি সরিয়ে নেওয়া হবে, তারপর ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু করা যাবে।”
রেলওয়ের প্রস্তুতি ও উদ্ধার কার্যক্রম
বর্তমানে রেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। বগি সরিয়ে নেওয়ার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে যাতে ট্রেন চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক করা যায়।
এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “গার্ড ব্রেক বগির হুক ভাঙার ঘটনা বিরল হলেও তা প্রতিরোধে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। ট্রেনের নিরাপদ চলাচলের জন্য প্রতিটি অংশের কার্যকারিতা খতিয়ে দেখা হয়।”
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের গুরুত্ব ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট। পর্যটক ও ব্যবসায়িক যাত্রীদের জন্য এটি সময়সাশ্রয়ী ও সাশ্রয়ী ভ্রমণের মাধ্যম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই রুটে যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে পর্যটক আগমনের ঋতুতে।
রেলপথের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা
বর্তমান দুর্ঘটনা প্রমাণ করে যে, রেলপথের রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি।
- পুরনো অবকাঠামো আধুনিকায়ন করা
- নিয়মিত রেললাইন ও বগির যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
- উদ্ধার ও জরুরি সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন
এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণের।
ট্রেন চলাচল নিরাপত্তা: বাংলাদেশের রেলওয়ের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশ রেলওয়ে দেশের যাতায়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলেও, মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে: অবকাঠামোর দুর্বলতা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, যান্ত্রিক ত্রুটি, বা মানবীয় ভুল।
সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করার চেষ্টা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক মানের যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করাই দেশের রেল পরিবহনের উন্নতির পথ।
যাত্রীদের জন্য করণীয় ও নিরাপত্তা পরামর্শ
যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা জরুরি:
- ট্রেন চলার সময় বগির বাইরে বা দরজায় দাঁড়ানো থেকে বিরত থাকা
- কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে দ্রুত গার্ড বা স্টেশন কর্মীদের অবহিত করা
- রেলের নিয়মাবলী ও নিরাপত্তা নির্দেশনা অনুসরণ করা
রেল কর্তৃপক্ষও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিয়মিত সচেতনতা কার্যক্রম চালায়।
সামগ্রিক বিশ্লেষণ ও উপসংহার
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের এই দুর্ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, দেশের রেল সেক্টরে আধুনিকীকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি। দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি ছাড়া ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সরকারি কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে যাত্রীদের ভ্রমণ নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত হয়। পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মাবলী মানা অপরিহার্য।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে রেলের নিরাপদ, দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করা হলে পর্যটন ও ব্যবসায়িক গতিশীলতায় নতুন গতি আসবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।



