ক্রিকেট

বাংলাদেশের নিগার ও শারমিন বাছাইপর্বের সেরা একাদশে

২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অসাধারণ পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি পেলেন বাংলাদেশের তিন নারী ক্রিকেটার। ব্যাট হাতে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখানো নিগার সুলতানা ও শারমিন আক্তার জায়গা করে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ঘোষিত সেরা একাদশে। পাশাপাশি বল হাতে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন লেগ স্পিনার রাবেয়া খান।

এই অর্জন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, বরং বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বাছাইপর্বে পাকিস্তানের মাটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করা এবং তিন জন খেলোয়াড়ের এমন স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

বাছাইপর্বে বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে ব্যাটারদের বড় অবদান

লাহোরে অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বে বাংলাদেশ নারী দল অংশ নেয় তিনটি ম্যাচে, যার সবগুলোতেই জয় পায় টাইগ্রেসরা। নেট রান রেটের হিসাবে তারা পিছনে ফেলে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এবং নিশ্চিত করে ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের টিকিট। এই তিনটি ম্যাচে ব্যাটিং লাইনআপ ছিল অনেকটাই নির্ভরযোগ্য, যার নেতৃত্বে ছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি এবং অভিজ্ঞ ওপেনার শারমিন আক্তার

শারমিন আক্তার তিনটি হাফ সেঞ্চুরিতে ২৬৬ রান করেন, যা টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শারমিনের ধারাবাহিকতা এবং স্ট্রোকমেকিং ক্ষমতা একাধিক ম্যাচে দলকে এগিয়ে রাখে। তাঁর ওপেনিং পার্টনারশিপ বাংলাদেশের জন্য ছিল শান্তির বার্তা।

অন্যদিকে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ১টি শতক এবং ২টি অর্ধশতকে ২৪১ রান করেন, ব্যাটারদের মধ্যে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। পাশাপাশি উইকেটকিপারের দায়িত্বে তিনি ২টি ক্যাচ ও ৩টি স্টাম্পিং করেন। ফলে সেরা একাদশে উইকেটকিপার ব্যাটার হিসেবে জায়গা করে নেন তিনিই।

সেরা একাদশে আরও যাঁরা

আজ আইসিসির ঘোষিত একাদশে সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় রয়েছে বাছাইপর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান দলের। পাঁচ ম্যাচে পাঁচ জয়ে অংশ নেওয়া পাকিস্তান দল থেকে মুনিবা আলী, ফাতিমা সানা (অধিনায়ক), নাশরা সান্ধুসাদিয়া ইকবাল স্থান পেয়েছেন একাদশে। তাদের মধ্যে ফাতিমা সানাকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স এবং নেতৃত্বের গুণের জন্য।

এছাড়া স্কটল্যান্ড থেকে সেরা একাদশে সুযোগ পেয়েছেন ক্যাথরিন ব্রাইসক্যাথেরিন ফ্রেজার। ব্রাইস টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ২৯৩ রান করেন এবং হয়েছেন সর্বোচ্চ রানের মালিক।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল থেকে নির্বাচিত তিনজনের মধ্যে রয়েছেন শক্তিশালী ব্যাটার হেইলি ম্যাথুস (২৯ বলে ৭০ রানের ইনিংসে আলোড়ন তোলা), অলরাউন্ডার শিনেলে হেনরি ও পেসার আলিয়া অ্যালেইন

রাবেয়ার সুনিয়ন্ত্রিত বোলিং ও দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি

যদিও জান্নাতুল ফেরদৌস (৯ উইকেট) ও ফাহিমা খাতুন (৮ উইকেট) রাবেয়ার চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন, তবে রাবেয়া খানের ইকোনমি রেট ছিল ৩.৭২, যা তাকে আলাদা করেছে। টাইট লাইন-লেন্থ এবং বৈচিত্র্যময় লেগস্পিন তাকে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের জন্য ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। তাই আইসিসি তাকে ‘দ্বাদশ খেলোয়াড়’ হিসেবে সেরা একাদশের অংশ করেছে।

এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের নারী বোলারদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়াবে, যা ভবিষ্যতের টুর্নামেন্টে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নারী ক্রিকেটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক উন্নতির পথ ধরে এগোচ্ছে। ২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণ, নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, এবং ঘরোয়া লিগের শক্ত ভিত্তি গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে এখন তারা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম উদীয়মান শক্তি।

নিগার-শারমিন-রাবেয়ার এই সম্মান দেশের হাজারো তরুণী ক্রিকেটারের জন্য অনুপ্রেরণা। নারী ক্রিকেটকে নিয়ে আরও পরিকল্পিত পৃষ্ঠপোষকতা ও বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা যেমন বাড়ছে, তেমনি তাদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও ইতিবাচক হচ্ছে।

ভবিষ্যতের প্রস্তুতি ও বিশ্বকাপে নজর

২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার আগে বাংলাদেশ দলের সামনে রয়েছে প্রস্তুতির সুবর্ণ সুযোগ। ফিটনেস, কন্ডিশনিং ক্যাম্প, আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি ম্যাচ এবং স্কিল ডেভেলপমেন্টে গুরুত্ব দিয়ে এগোতে হবে। অভিজ্ঞদের পাশাপাশি উদীয়মান ক্রিকেটারদেরও গুরুত্ব দিতে হবে।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিগার-শারমিন-রাবেয়ার পারফরম্যান্স প্রমাণ করেছে যে সঠিক পরিকল্পনা ও চেষ্টায় বাংলাদেশ নারী দল আরও বড় মঞ্চে বড় সাফল্য পেতে পারে।

সংক্ষিপ্তভাবে:

  • নিগার সুলতানা: ২৪১ রান, ২ ক্যাচ, ৩ স্টাম্পিং – সেরা একাদশের উইকেটকিপার
  • শারমিন আক্তার: ২৬৬ রান, তিনটি হাফ সেঞ্চুরি – সেরা একাদশে ওপেনার
  • রাবেয়া খান: ৬ উইকেট, ইকোনমি ৩.৭২ – দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button