ক্রিকেটখেলা

নতুন ফিল্ডিং কোচ নিয়োগ দিল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ফিল্ডিং বিভাগে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ঘোষণা দিয়েছে, জাতীয় দলের নতুন ফিল্ডিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অভিজ্ঞ ইংলিশ-নিউজিল্যান্ডার কোচ জেমস প্যামেন্ট। আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে তিনি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৫৬ বছর বয়সী এই কোচের সঙ্গে ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ প্যামেন্ট

জেমস প্যামেন্টের কোচিং ক্যারিয়ার বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সমৃদ্ধ। ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন নিউজিল্যান্ডে। খেলোয়াড়ি জীবনে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া দল অকল্যান্ডের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। তবে মাঠের বাইরে কোচিংয়ের ভূমিকাতেই বেশি খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি।

২০১৮ সালে ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে কোচ হিসেবে যোগ দেন প্যামেন্ট। সেখানে সহকারী কোচের ভূমিকায় কাজ করলেও মূলত ফিল্ডিং এবং রানিং বিটুইন দ্য উইকেটের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তার অধীনে দলের ফিল্ডিং পারফরম্যান্সে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। সেই অভিজ্ঞতাই এবার কাজে লাগবে বাংলাদেশের ফিল্ডিং ইউনিটে।

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক

জেমস প্যামেন্টের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দায়িত্বগুলোর একটি ছিল নিউজিল্যান্ডের নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কোচ হিসেবে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন। পাশাপাশি তিনি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন। এ সময় তিনি জাতীয় দল, নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ফিল্ডিং রিসোর্স কোচ ও স্পেশালিস্ট টেকনিক্যাল উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি সিরিজে তিনি নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের সহকারী কোচের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া, তিনি কিছু সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, যা তার কোচিং দক্ষতার আন্তর্জাতিক পরিসরে বিস্তার ঘটায়।

বিসিবির লক্ষ্য ও প্যামেন্টের প্রত্যাশা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড গত কয়েক বছর ধরে দলের ফিল্ডিংয়ের মানোন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে। ব্যাটিং ও বোলিংয়ের পাশাপাশি আধুনিক ক্রিকেটে ফিল্ডিংকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বিসিবি। এই প্রেক্ষাপটেই একজন অভিজ্ঞ ফিল্ডিং কোচকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।

বিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা এমন একজন কোচ খুঁজছিলাম যিনি দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও টেকনিক্যাল দক্ষতার পাশাপাশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারেন। প্যামেন্ট সেই বৈশিষ্ট্যগুলোতে পুরোপুরি মানানসই।”

পদে নিয়োগ পাওয়ার পর এক বিবৃতিতে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে জেমস প্যামেন্ট বলেন, “অত্যন্ত প্রতিভাবান একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক সম্ভাবনা আছে এবং আমি এই দলে আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে চাই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের আগে ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের সঙ্গে যোগ দিতে আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।”

বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে ফিল্ডিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। ক্যাচ মিস, রানআউটের সুযোগ নষ্ট এবং থ্রোয়ে ভুলের মতো বিষয়গুলো দলের পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই মনে করেন, আধুনিক ক্রিকেটে ফিল্ডিং পারফরম্যান্সের উন্নতি না ঘটলে জয়ের সম্ভাবনা কমে যায়। বিশেষ করে বিশ্বকাপ ও অন্যান্য বড় আসরে প্রতিটি ক্যাচ ও রান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

এই প্রেক্ষাপটেই প্যামেন্টের মতো একজন ফিল্ডিং বিশেষজ্ঞের নিয়োগ বাংলাদেশ দলের জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তার অধীনে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিংয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

২০২৫ সালের শেষভাগে এশিয়া কাপ এবং ২০২৬ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ রয়েছে বাংলাদেশ দলের সামনে। এই তিনটি বড় প্রতিযোগিতার আগে দলের ফিল্ডিং স্ট্যান্ডার্ড আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিসিবির পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে জেমস প্যামেন্টের নিয়োগকে।

দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও প্যামেন্টকে দলে পেয়ে খুশি। তিনি বলেন, “ফিল্ডিং এমন একটি বিভাগ যেখানে প্রতিনিয়ত কাজ করতে হয়। একজন অভিজ্ঞ ফিল্ডিং কোচ দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। আমি বিশ্বাস করি, প্যামেন্টের উপস্থিতি আমাদের ফিল্ডিংয়ে দৃশ্যমান উন্নতি নিয়ে আসবে।”

উপসংহার

জেমস প্যামেন্টের নিয়োগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তার অভিজ্ঞতা, পেশাদারিত্ব ও আধুনিক কোচিং পদ্ধতির সংমিশ্রণ আগামী দিনে দলের ফিল্ডিং ইউনিটকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। আগামীর প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দল যেন ফিল্ডিংয়ে আর পিছিয়ে না থাকে—এই প্রত্যাশা নিয়েই পথচলা শুরু করছেন নতুন কোচ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button