কোনো চাঁদাবাজকে ছাড় দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, চাঁদাবাজ যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন, কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
সোমবার (২৮ জুলাই) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাম্প্রতিক সময়ে গুলশানে এক সাবেক এমপির বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনা ও আসামিদের হাতেনাতে গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে।
চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “কোনো ধরনের চাঁদাবাজিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। যে-ই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এমনকি প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি হলেও তার ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হবে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে এই ধরনের অপরাধ দমন না করলে সমাজে ভয় ও অস্থিরতা বাড়বে। তাই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনের আগে বাড়ানো হচ্ছে নিরাপত্তা
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগস্ট মাস থেকে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশকে শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রশাসন এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
তার ভাষায়, “এসপি ও ওসিদের রদবদল একটি নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ। নির্বাচন ঘিরে কোথাও যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য সরকার পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে।”
মাদক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান
এ সময় তিনি দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের কথাও উল্লেখ করেন। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “মাদক বহনকারীদের গ্রেপ্তার করা গেলেও এখনো মূল গডফাদারদের ধরা যাচ্ছে না। তবে তাদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।”
তিনি মনে করেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেতে হলে শুধু অভিযান নয়, জনসচেতনতা এবং সামাজিক প্রতিরোধও জরুরি।
গুলশানের ঘটনার উদাহরণ টেনে সতর্কবার্তা
সাম্প্রতিক সময়ে গুলশানে এক সাবেক এমপির বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে কয়েকজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করার ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ প্রমাণ করে, এখন কেউ অপরাধ করলে তার বিচার এড়ানো কঠিন হবে।
সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরাধ দমন জরুরি
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ জনগণের উদ্বেগের কথা স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে অপরাধ দমন করা অপরিহার্য। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস এবং মাদক—এই তিনটির বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি।”
তিনি জনগণকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, চাঁদাবাজি বা অন্য কোনো অপরাধের ঘটনায় কেউ ভুক্তভোগী হলে যেন সাথে সাথে থানায় বা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
আইন ও শৃঙ্খলা বিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের এই ধরনের কঠোর অবস্থান জনগণের আস্থা বাড়াবে। তবে তারা আরও বলেছেন, কেবল বক্তব্য নয়, এই পদক্ষেপগুলো যেন বাস্তবে কঠোরভাবে প্রয়োগ হয়, সেটাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এটা যেন শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হয়, সেটি দেখতে হবে।”
সামনে কী হতে পারে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পর পুলিশের নজরদারি ও অভিযানের ধরন আরও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হবে। এর ফলে চাঁদাবাজি ও মাদক চক্রগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন।
দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছেন, সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবে কার্যকর হলে অপরাধের মাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসবে। তবে অনেকেই বলেছেন, আগে বহুবার এ ধরনের আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে তার সঠিক প্রয়োগ দেখা যায়নি। তাই এবার সরকারকে তাদের কথার প্রমাণ দিতে হবে।
এম আর এম – ০৫৬৬, Signalbd.com