ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বললেন মুশফিকুর রহিম

বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। তবে তিনি টেস্ট ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাবেন। এর আগে ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকেও অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন অভিজ্ঞ এই উইকেটকিপার-ব্যাটার।
মুশফিকের আবেগঘন বার্তা
অবসরের ঘোষণায় মুশফিক লেখেন,
“আজ থেকে আমি ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলছি।”
তিনি আরও লেখেন,
“বৈশ্বিক পর্যায়ে আমাদের অর্জন কম হলেও, আমি সবসময় মাঠে নেমে দেশের জন্য আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। গেলো কয়েকদিন আমার জন্য সত্যিই কঠিন ছিল, তবে আমি বুঝতে পেরেছি—এটাই আমার ভাগ্যে লেখা ছিল।”
এছাড়া তিনি তার পরিবার, বন্ধু, সতীর্থ এবং ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যারা ১৯ বছর ধরে তাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন।
বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় ছিলেন না মুশফিক
সর্বশেষ ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন মুশফিক। তবে এই টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাট হাতে ভালো করতে পারেননি। তার পারফরম্যান্স বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আগামী ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় তাকে রাখেনি।
বোর্ড পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিমের সঙ্গে মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আলোচনা করার কথা ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মুশফিক আজ তার ওয়ানডে থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন।
দীর্ঘ ১৯ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়
২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় মুশফিকুর রহিমের। এরপর দীর্ঘ ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২৭৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। তিনি ওয়ানডেতে মোট ৭৭৯৫ রান করেছেন, যেখানে রয়েছে ৯টি সেঞ্চুরি ও ৪৯টি ফিফটি।
২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া মুশফিক বাংলাদেশের অন্যতম সফল ক্রিকেটারদের একজন। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটের যাত্রা এখানেই শেষ করলেন তিনি।
মুশফিকের অবসরের কারণ কী?
কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তরুণদের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে বিসিবি। বিশ্বকাপ ২০২৭-এর স্কোয়াড গঠনের পরিকল্পনায় থাকা নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দিতেই মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহর জায়গা সংকটের মুখে পড়ে।
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া
মুশফিকের অবসরের ঘোষণার পর সমর্থকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের হঠাৎ বিদায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
একজন ভক্ত লিখেছেন, “মুশফিক বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তাকে ওয়ানডেতে আর দেখতে না পাওয়া সত্যিই দুঃখজনক।”
অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করছেন, “এটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত। এখন তরুণদের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন, যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশকে অনেক স্মরণীয় জয় উপহার দেওয়া মুশফিক তার আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন। তবে তিনি এখনো টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা তার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে তার ভবিষ্যৎ টেস্ট ক্যারিয়ারের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।