শেন ওয়ার্নের মৃত্যু: শোকের চেয়ে বড় অবিশ্বাস!

একটা মৃত্যুশোকেই আচ্ছন্ন হয়ে ছিল ক্রিকেট বিশ্ব। রাওয়ালপিন্ডিতে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান টেস্ট ম্যাচের আগে যে খবর পেয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দুই দল, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা নেমেছেন কালো আর্মব্যান্ড পরে। কে জানত, সেই রাতেই এমন এক দুঃসংবাদ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে যে রডনি মার্শের চলে যাওয়ার শোককে ছাপিয়ে গিয়ে সবাইকে তা অবিশ্বাসে বিমূঢ় করে দেবে!
সপ্তাহখানেক আগে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত সাবেক অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার রডনি মার্শ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। যা খারাপ কিছু শোনার মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার সময়টা অন্তত দিয়েছিল। কিন্তু শেন ওয়ার্ন আর নেই, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এই খবরে শোক তো অনেক পরের অনুভূতি, সবার আগে তো অবিশ্বাস! কোথাও ভুল হচ্ছে না তো!
যে মানুষটা ১২ ঘণ্টা আগে রডনি মার্শের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে টুইট করেছেন, যাঁর শারীরিক কোনো সমস্যার কথা জানা যায়নি কখনো, তিনিই কিনা রডনি মার্শের পিছু পিছু যাত্রা করেছেন অনন্তলোকে। কোথাও ভুল হচ্ছে না তো!
অবিশ্বাস্য সত্য
অস্ট্রেলিয়ার অনেক জয়েরই মধ্যমণি ছিলেন শেন ওয়ার্ন। খবরের সূত্র একটাই—অস্ট্রেলিয়ার ফক্স স্পোর্টস। যে সংস্থার সঙ্গে ধারাভাষ্যকার শেন ওয়ার্নের মোটা অঙ্কের চুক্তি। ওয়ার্নের ম্যানেজমেন্ট সংস্থার বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘শেনকে অচেতন অবস্থায় তাঁর ভিলায় পাওয়া গেছে। মেডিকেল স্টাফের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।’ মৃত্যুর কারণ? রডনি মার্শকে যা তুলে নিয়ে গেছে, সম্ভবত সেই হার্ট অ্যাটাকই। মার্শেরটা নিশ্চিত, ওয়ার্নেরটা জোরালো অনুমান।
সেই অনুমান সত্যি বা মিথ্যা হোক, তাতে কিই-বা আসে যায়! শেন ওয়ার্ন আর নেই, এই নির্মম সত্যিটা তো আর তাতে বদলাচ্ছে না। ক্রিকেটের সবচেয়ে বিখ্যাত ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোতে শেন ওয়ার্নের প্রোফাইলে লেখা হয়ে গেছে:
- জন্ম: সেপ্টেম্বর ১৩, ১৯৬৯, ফার্নট্রি গালি, ভিক্টোরিয়া।
- মৃত্যু: মার্চ ৪, ২০২২। কোহ্ সামুই, থাইল্যান্ড (৫২ বছর ১৭২ দিন)।
কিংবদন্তির বিদায়
কোহ্ সামুই! কোহ্ সামুই কেন? কারণ হতে পারে একটাই। থাইল্যান্ডের ছোট্ট এই দ্বীপে তো মানুষ ছুটি কাটাতেই আসে। খেলা ছাড়ার পর আরও ঊর্ধ্বশ্বাস ব্যস্ততার ধারাভাষ্য-জীবন থেকে একটু হাঁপ ছাড়তেই হয়তো কোহ্ সামুইয়ে এসেছিলেন শেন ওয়ার্ন। কে জানত, তাঁর শেষনিশ্বাসটা এখানেই পড়বে বলে ঠিক করে রেখেছিলেন বিধাতা!
রডনি মার্শের মতো পরিণত বয়সে হলেও শেন ওয়ার্নের মৃত্যু তুমুল আলোড়ন তুলত ক্রিকেট বিশ্বে। এমন অকালে চলে যাওয়াটা যা বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও সহস্র গুণ। শেন ওয়ার্ন তো শুধুই একজন ক্রিকেটার ছিলেন না, তিনি ছিলেন যুগবদলের নায়ক। ক্রিকেট সব ক্রিকেটারই খেলেন, কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজনই পারেন খেলাটাকে বদলে দিতে। শেন ওয়ার্ন সেই ক্ষণজন্মা ক্রিকেটারদের একজন, যাঁদের আবির্ভাবের আগে-পরে খেলাটা আর এক থাকেনি।
শেন ওয়ার্নের অবদান
১৪৫ টেস্টে ৭০৮ আর ১৯৪ ওয়ানডেতে ২৯৩ উইকেটের সাধ্য কি তা পুরোটা বোঝানোর! খেলোয়াড়ি জীবন শেষে শেন ওয়ার্ন যুক্ত ছিলেন ধারাভাষ্যের সঙ্গে। খেলা ছাড়ার অনেক আগেই সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনারের স্বীকৃতি পেয়ে গেছেন