হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বোমা থাকার হুমকিতে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। অচেনা ফোনকলের মাধ্যমে এ হুমকি আসে। যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে উড়োজাহাজে তল্লাশি শুরু করে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও আহতের খবর নেই।
ঘটনাটি কী ঘটেছে?
আজ শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-৩৭৩ ফ্লাইটটির। তবে উড্ডয়নের ঠিক আগ মুহূর্তে একটি অজানা নম্বর থেকে ফোনকলের মাধ্যমে জানানো হয়, উক্ত ফ্লাইটটিতে বোমা রয়েছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সতর্কতায় নিয়ে আসা হয় এবং ফ্লাইটটি স্থগিত করা হয়।
কে করল এমন হুমকি? কী বলছে কর্তৃপক্ষ?
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর জানান, “অচেনা নম্বর থেকে ফোনে জানানো হয় যে, ফ্লাইটটিতে বোমা রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ফ্লাইটটি বাতিল না করে সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেওয়া হয় এবং যাত্রীদের তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ইতোমধ্যেই তল্লাশি শুরু করেছে।”
কীভাবে হলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা?
ফোনকল আসার পরপরই শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ইউনিট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সব যাত্রী ও ক্রু সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয় এবং উড়োজাহাজ ঘিরে রাখা হয়।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র স্কোয়াড্রন লিডার মো. মাহমুদুল হাসান মাসুম জানান, “বোমা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ায় বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।”
আগে এমন ঘটেছে কি?
এই ধরনের হুমকি যদিও খুব বেশি ঘটে না, তবুও এটি একেবারে নতুন নয়। গত কয়েক বছরে একাধিকবার আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ভুয়া বোমা হুমকির ঘটনা ঘটেছে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বিমানবন্দরগুলোতে। এসব ঘটনার বেশিরভাগই হয় বিভ্রান্তি বা সাইবার অপরাধীদের ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশেও ২০২২ সালে একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে এমন এক হুমকি এসেছিল, যা পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক
ঘটনার সময় বিমানে থাকা এক যাত্রী বলেন, “আমরা তখন সিটবেল্ট বেঁধে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত। হঠাৎ কেবিন ক্রু জানালেন যে আমাদের নামতে হবে। পরে বুঝলাম কিছু একটা ঘটেছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।”
এমন আকস্মিক পরিস্থিতিতে যাত্রীদের মানসিক চাপে পড়া অস্বাভাবিক নয়। তবে ফ্লাইট কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসনীয় বলে মনে করছেন অধিকাংশ যাত্রী।
তদন্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, কে বা কারা এই হুমকি দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি উদ্দেশ্যমূলক নাশকতা কিনা, তা তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, বোমার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ফলে এটি একটি “ফেইক কল” ছিল বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। এরপর ফ্লাইটটিকে পুনরায় বোর্ডিং করিয়ে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে ছাড়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
“ফ্লাইটটি এখন নিরাপদ। যাত্রীদের নতুন করে বোর্ডিং করানো হচ্ছে। শিগগিরই ছেড়ে যাবে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে।” — বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জিএম, এ বি এম রওশন কবীর
সারসংক্ষেপ
যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই ফ্লাইটটি স্থগিত রাখা হয়, যা দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত ছিল। যদিও বোমার অস্তিত্ব মেলেনি, তবুও এমন ভুয়া হুমকি যাত্রী, ফ্লাইট কর্তৃপক্ষ এবং দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য উদ্বেগের।
ভবিষ্যতে এ ধরনের হুমকি প্রতিরোধে প্রযুক্তিগত ও গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: এই ভুয়া হুমকির পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল, এবং তা কি আবার ঘটবে?
এম আর এম – ০২৮২, Signalbd.com



