২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় বসতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ১০ম আসর। মোট ২০টি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতা ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। চারটি গ্রুপে পাঁচটি করে দল বিভক্ত হবে; প্রতিটি গ্রুপের সেরা দুটি দল সরাসরি সুপার এইটে উঠবে। আগামী ২৫ নভেম্বর মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে অফিসিয়াল গ্রুপ ড্র। তবে এর আগেই জনপ্রিয় ক্রীড়া প্ল্যাটফর্ম ক্রিকবাজ সম্ভাব্য গ্রুপিং প্রকাশ করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং দৃশ্যপট সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে বর্তমানে ৯ নম্বরে। এই অবস্থানের ভিত্তিতে সম্ভাব্য যে গ্রুপের ছবি আঁকা হয়েছে, তাতে লিটন দাসের দলকে মোকাবিলা করতে হতে পারে দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এই দুই দলই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঐতিহাসিক সফলতার অধিকারী এবং দুজনেরই রয়েছে একাধিক বিশ্বকাপ শিরোপা। ফলে বাংলাদেশকে শুরু থেকেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হতে পারে।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য গ্রুপ
সম্ভাব্য গ্রুপে থাকতে পারে পাঁচ দল:
বাংলাদেশ – র্যাঙ্কিং ৯
ইংল্যান্ড – র্যাঙ্কিং ৩
ওয়েস্ট ইন্ডিজ – র্যাঙ্কিং ৬
নেপাল – র্যাঙ্কিং ১৭
ইতালি – র্যাঙ্কিং ২৮
এখানে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিঃসন্দেহে বড় প্রতিপক্ষ। ইংল্যান্ডের বর্তমান দল ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। অন্যদিকে ক্যারিবীয় দল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভয়ঙ্কর হিটারদের নিয়ে গড়া, যারা একাই ম্যাচের চেহারা বদলে দিতে পারে। তবে নেপাল ও ইতালি তুলনামূলকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল হিসেবে বিবেচিত, যদিও বিশ্বকাপের মঞ্চে সহজ প্রতিপক্ষ বলে কিছু নেই।
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে না পারলে নেপাল ও ইতালির বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিয়ে নেট রানরেট ধরে রাখা।
আয়োজক ভারত পেয়েছে সহজ সম্ভাব্য গ্রুপ
প্রকাশিত সম্ভাব্য গ্রুপিং অনুযায়ী আয়োজক ভারত তুলনামূলক সহজ গ্রুপ পাচ্ছে। ভারতের গ্রুপে থাকতে পারে:
ভারত – র্যাঙ্কিং ১
পাকিস্তান – ৭
নেদারল্যান্ডস – ১৩
নামিবিয়া – ১৫
যুক্তরাষ্ট্র – ১৮
এই গ্রুপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি সবচেয়ে আলোচিত ও উচ্চ-চাপের লড়াই। রাজনৈতিক কারণে পাকিস্তান ভারতে খেলতে যায় না; সে কারণে দুই দল মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে। এই ম্যাচটি বিশ্বকাপ শুরুর অন্যতম বড় আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারত তুলনামূলকভাবে সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কারণ নেদারল্যান্ডস, নামিবিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এখনও বড় দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত প্রতিযোগিতায় খুব বেশি কঠিন চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করতে পারে না।
আরেক আয়োজক শ্রীলঙ্কার সামনে কঠিন পরীক্ষা
শ্রীলঙ্কা তাদের সম্ভাব্য গ্রুপে পেতে পারে অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড এবং ওমানকে। এই গ্রুপটির চেহারা সহজ নয়। অস্ট্রেলিয়া সবসময়ই আইসিসি ইভেন্টের বড় দল, জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিয়মিত উন্নতি করছে। ফলে লঙ্কানদের গ্রুপ পর্বেই কঠিন সংগ্রাম করতে হতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য কঠিন সম্ভাব্য গ্রুপ
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রানারআপ দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রুপে থাকতে পারে নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কানাডা। নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তান শক্তিশালী দুই দল হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য গ্রুপ পর্বের প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।
বিশ্বকাপের পূর্ণাঙ্গ সূচি ও ভেন্যু
২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হবে ৭ ফেব্রুয়ারি এবং শেষ হবে ৮ মার্চ। ভারত ও শ্রীলঙ্কার সাতটি ভেন্যুতে ম্যাচগুলো আয়োজন করা হবে। ভারতের ভেন্যু হিসেবে সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে মুম্বাই, দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই ও আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। শ্রীলঙ্কার ভেন্যু হিসেবে থাকবে কলম্বো ও ক্যান্ডি।
বিশেষ নিয়ম অনুযায়ী, পাকিস্তান তাদের সব ম্যাচ শ্রীলঙ্কায় খেলবে। তারা সেমিফাইনাল বা ফাইনাল খেললে সেই ম্যাচও শ্রীলঙ্কাতেই আয়োজিত হবে। অন্যথায় ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ভারতের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট ভেন্যু আহমেদাবাদে।
বাংলাদেশের জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে
বাংলাদেশের সম্ভাব্য গ্রুপের প্রতিপক্ষদের দেখলে বোঝা যায়, দলটিকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে সুপার এইটে জায়গা করে নিতে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ এর আগে বেশ কয়েকবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইংল্যান্ড সবসময়ই ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকে। তাদের বোলিংও সমান শক্তিশালী। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবার টি-টোয়েন্টিতে পৃথিবীর অন্যতম ধারালো ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে খেলে থাকে।
নেপাল এখন দ্রুত উন্নতি করা দল। ২০২৪ বিশ্বকাপে তারা শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে লড়াই করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছিল। ইতালি ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েট সদস্য হিসেবে নিয়মিত টি-টোয়েন্টি খেলছে এবং ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নের চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে ম্যাচ ধরে ধরে পরিকল্পনা সাজানো। বিশেষ করে—
১. বোলিং ইউনিটকে আগের চেয়ে আরও ধারালো হতে হবে।
২. টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব নিতে হবে।
৩. মাঝারি স্কোরকেও রক্ষা করার মতো ফিল্ডিং করতে হবে।
৪. অলরাউন্ডারদের সেরা পারফরম্যান্স দিতে হবে।
এই প্রতিযোগিতায় সুযোগ মিললে সাকিব আল হাসানের অভিজ্ঞতা দলকে অনেক সাহায্য করতে পারে। একইভাবে মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ, তাসকিন আহমেদদের অভিজ্ঞতাও দলের শক্তি বাড়াবে।
বিশ্ব ক্রিকেটে ২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে উত্তেজনা
বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে আছে। ২০২৪ বিশ্বকাপের ব্যাপক সফলতার পর এবার আরও উচ্চমানের ক্রিকেট দেখার প্রত্যাশা করছে দর্শকরা। ভারত ও শ্রীলঙ্কার যৌথ আয়োজনে এটি হবে ইতিহাসের অন্যতম বড় টি-টোয়েন্টি আয়োজন।
বাংলাদেশ দল যদি সঠিক পরিকল্পনা ও মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে পারে, তবে তারা এই কঠিন গ্রুপ থেকেও সুপার এইটে জায়গা করে নিতে পারে। গ্রুপ ড্রয়ের পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।
MAH – 13910 I Signalbd.com



