ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে হঠাৎ করে একটি গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছেন। শনিবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে নাবিস্কো ও তিব্বত মোড়ে অবস্থান নিয়ে তারা সড়ক অবরোধ করেন, যার ফলে ওই এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। মহাখালী থেকে তেজগাঁও হয়ে গুলশান পর্যন্ত পুরো রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কেন হঠাৎ কারখানা বন্ধ হলো?
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, ‘পশ’ নামে একটি গার্মেন্টস কারখানা কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। শ্রমিকরা শনিবার সকালে কর্মস্থলে গিয়ে কারখানা বন্ধের খবর পান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা রাস্তা অবরোধ করেন এবং কারখানা পুনরায় চালুর দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
শ্রমিকদের দাবি—
- কারখানা বন্ধের আগে শ্রমিকদের জানাতে হবে
- পাওনা বেতন ও বকেয়া পরিশোধ করতে হবে
- হঠাৎ করে কর্মসংস্থান বন্ধ করা যাবে না
শ্রমিকদের অভিযোগ, “আমরা দিনমজুর মানুষ। হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ করে দিলে আমরা কীভাবে সংসার চালাবো?”
অবরোধে যানজট, পুলিশের বিকল্প রুট নির্দেশনা
অবরোধের কারণে নাবিস্কো ও তিব্বত মোড় হয়ে মহাখালী-তেজগাঁও রুট সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান ট্রাফিক বিভাগ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জানিয়েছে—
“তেজগাঁওয়ের নাবিস্কো পয়েন্টে গার্মেন্টস কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। মহাখালী-তেজগাঁও রুটে উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিকল্প রুট ব্যবহার করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।”
বিকল্প রুটসমূহ:
- উত্তরার দিক থেকে আসা গাড়ি কাকলী-গুলশান ২-গুলশান ১-পুলিশ প্লাজা রুট ব্যবহার করতে পারবে।
- আমতলী হয়ে গুলশান ১ হয়ে পুলিশ প্লাজা যেতে পারবে।
- উত্তরা থেকে তেজগাঁওগামী যানবাহন ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে পারবে।
শ্রমিকদের আন্দোলন: কেন বাড়ছে এই প্রবণতা?
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প দেশের রপ্তানির প্রধান ভিত্তি। প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক এই খাতে কাজ করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
শ্রমিক নেতাদের দাবি—
- অনেক মালিক লোকসানের অজুহাতে হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ করে দেন
- শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়
- সরকারি শ্রম আইন যথাযথভাবে মানা হয় না
বাংলাদেশের শ্রম আইন কী বলে?
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী—
- কারখানা বন্ধের ক্ষেত্রে মালিককে সাত দিনের নোটিশ দিতে হবে
- শ্রমিকদের সব বেতন ও প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে
- বন্ধের কারণ শ্রম অধিদপ্তরকে জানাতে হবে
কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হয় না, ফলে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলনে বাধ্য হন।
পূর্বের অনুরূপ ঘটনা
এটি প্রথম ঘটনা নয়। এর আগে—
- ২০২৩ সালে আশুলিয়ায় একটি কারখানা বন্ধের পর শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন
- ২০২৪ সালে মিরপুরে একটি গার্মেন্টস কারখানার মালিক পালিয়ে গেলে শ্রমিকরা বেতন দাবি করে আন্দোলন করেছিলেন
এসব ঘটনা দেখাচ্ছে, গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতা দিন দিন বাড়ছে।
গার্মেন্টস খাতে বর্তমান সংকট
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর তথ্য অনুযায়ী—
- গত এক বছরে প্রায় ২০০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে
- বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় মালিকরা উৎপাদন কমাচ্ছেন
- ডলার সংকট, বিদ্যুৎ সমস্যা ও শ্রম খরচ বৃদ্ধি মালিকদের চাপ বাড়িয়েছে
বিশেষজ্ঞ মতামত
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গার্মেন্টস শিল্প দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শ্রমিকদের প্রতি ন্যায্য আচরণ না হলে বড় ধরনের সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলো বলছে—
“মালিকরা সবসময় নিজেদের স্বার্থ দেখেন। শ্রমিকরা যদি ন্যায্য পাওনা না পান, তাহলে তারা রাস্তায় নামতেই বাধ্য হবেন।”
সরকারি পদক্ষেপের প্রয়োজন
- শ্রম আইন বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারি
- কারখানা বন্ধের আগে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
- বিজিএমইএ এবং সরকার যৌথভাবে মনিটরিং সেল গঠন
তেজগাঁওয়ে গার্মেন্টস কারখানা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার পর শ্রমিকদের আন্দোলন শুধু একটি স্থানীয় সমস্যা নয়; এটি পুরো গার্মেন্টস খাতের সংকটের প্রতিফলন। যদি সময়মতো সমাধান না হয়, তবে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
MAH – 12452 , Signalbd.com



