মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি ইতিহাসবহুল এক মুহূর্তে পৌঁছেছে। কারণ এটি বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের শুরুটা যদিও উদ্বোধনী জুটি দিয়ে আশার আলো দেখিয়েছে, কিন্তু লাঞ্চ বিরতির আগে তিন উইকেট হারিয়ে ১০০ রানে থেমে গেছে স্বাগতিকরা।
লাঞ্চ বিরতিতে বাংলাদেশের অবস্থা
মিরপুরে বুধবার সকাল ৯:৩০ মিনিটে টস জিতে ব্যাটিং শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে ৩১ ওভার খেলায় ৩ উইকেটে ১০০ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা। উদ্বোধনী জুটি থেকে শুরুটা ভালো মনে হলেও জুটির ৫০ রান পার হওয়ার পরই প্রথম ধাক্কা আসে। ৩৫ রান করা সাদমান ইসলাম জয় এলবিডব্লিউ হয়ে মাঠ ত্যাগ করেন। এরপর ৩৪ রান করা মাহমুদুল হাসান জয় একটি ঝুঁকিপূর্ণ শটে আউট হন।
বাঁহাতি ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বলে একটি ছক্কা মারেন, যা ইতিবাচক সূচনা হিসেবে দেখা হয়, তবে পরবর্তী বলেই অভিজ্ঞ অফ-স্পিনার তাকে আউট করেন। ক্রিজে তখন অপরাজিত ছিলেন ২৯ বলে ১৭ রানে মুমিনুল হক, আর ১৮ বলে ৩ রানে মুশফিকুর রহিম।
শান্তর বিদায় ও মুশফিকের প্রবেশ
এক বল আগে ছক্কা মেরে ইতিবাচক আভাস দেখালেও নাজমুল হোসেন শান্ত বোল্ড হয়ে মাঠ ত্যাগ করেন। ১১ বলে ৮ রানে বিদায় নেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে ৫ নম্বরে নামেন শততম টেস্ট খেলতে আসা মুশফিকুর রহিম, যার সঙ্গে ক্রিজে ছিলেন মুমিনুল হক।
মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ১০০ রান। এই সময় মিরপুরের গ্যালারিতে ভিড় জমে মুশফিকের শততম টেস্ট উদযাপনের প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যায়।
উদ্বোধনী জুটির পারফরম্যান্স
বাংলাদেশের প্রথম ঘণ্টায় উদ্বোধনী জুটির পারফরম্যান্স ছিল মিশ্র। সাদমান ইসলাম ৪৪ বলে ৩৫ রান করে আউট হন। তার বিদায়ের পর ভাঙে ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটি। পরের ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয় ৮৬ বল খেলে ৩৪ রান করে আউট হন। এই দুই ব্যাটারের আউট হওয়ার পর ক্রিজে নতুন ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত এবং অপরাজিত ছিলেন মুমিনুল হক।
মুশফিকুর রহিমের রেকর্ড
২৬ মে ২০০৫ থেকে ১৯ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ২০ বছর ৫ মাস ১২৪ দিন ধরে মুশফিকুর রহিম টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। এই সময়span-এ তিনি একশতম টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়েছেন, যা ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে ১০০ টেস্ট খেলার রেকর্ড। পূর্বে এই রেকর্ডটি ছিল ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক গ্রাহাম গুচের হাতে, যিনি ১৭ বছর ২০৩ দিনে একশ টেস্ট খেলেছিলেন।
মুশফিক এখন বাংলাদেশের প্রথম এবং বিশ্বের ৮৪তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে একশ টেস্ট খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। ৯৯ ম্যাচে তার ১২ সেঞ্চুরি ও ২৭ ফিফটির সাহায্যে ৬,৩৫১ রান রয়েছে, এবং তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৩টি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক।
সতীর্থ ও কোচদের শুভেচ্ছা
মুশফিকের শততম টেস্ট উপলক্ষে নাজমুল হোসেন শান্ত তার জন্য বিশেষ বার্তা দিয়েছেন:
“অভিনন্দন! আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য দারুণ এক অর্জন। আপনার সঙ্গে খেলতে সবসময়ই ভালো লেগেছে। আপনার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আশা করি আপনি আরও অনেকদিন খেলবেন।”
মুশফিকও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন:
“সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে এই সুযোগ দিয়েছেন। পরিবার, সতীর্থ, কোচ ও সমর্থক সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য শুভকামনা।”
বিশেষ সম্মাননা ও ক্রেস্ট
শততম টেস্ট উপলক্ষে মুশফিককে বিশেষ ক্রেস্ট ও জার্সি উপহার দেয়া হয়েছে। দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান এবং বর্তমান বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল মুশফিককে ক্রেস্ট প্রদান করেন।
মুশফিকের প্রথম টেস্টের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার এবং শততম টেস্টের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বিশেষ টেস্ট জার্সি উপহার দেন। এছাড়া শততম টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দেন আকরাম খান।
একাদশে পরিবর্তন
বাংলাদেশের একাদশে দুই পরিবর্তন করা হয়েছে। দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানার জায়গায় নেওয়া হয়েছে সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও ইবাদত হোসেন চৌধুরি।
আইরিশ দলও একাদশে দুই পরিবর্তন এনেছে। অভিষেক হয়েছে গ্যাভিন হোয়ে ও স্টিফেন ডোহেনি। দলের প্রধান খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকছেন দুই পেস অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফার ও জর্ডান নিল।
মিরপুরে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান
বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জিতে সিরিজে লিডে রয়েছে। মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচও স্পষ্টতই ফেভারিট বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্তের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ৬০০+ স্কোর করেছে। দুই ইনিংস খেলে আইরিশরা তা ছুঁতে পারেনি।
দ্বিতীয় টেস্টে মিরপুরে বাংলাদেশের লক্ষ্য: সিরিজ জিততে সেরা ব্যাটিং এবং বোলিং পারফরম্যান্স। সেই সাথে, মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট উদযাপন ও দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সংযোজন।
মুশফিকের সম্ভাব্য সেঞ্চুরি
মিরপুরে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করার কীর্তি আছে মাত্র ১০ জন ক্রিকেটারের। মুশফিক যদি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন অঙ্কের রান করেন, তবে তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় নাম লিখাবেন।
এই মুহূর্তে ক্রিজে থাকা মুশফিক এবং মুমিনুল হকের পারফরম্যান্স পরবর্তী সেশন এবং ম্যাচের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে।
মিরপুরে অনুষ্ঠিত এই টেস্ট শুধু একটি সিরিজের ম্যাচ নয়। এটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক অনন্য মুহূর্ত। শততম টেস্টে মুশফিকুর রহিমের অবদান, সতীর্থদের শুভেচ্ছা, বিশেষ ক্রেস্ট ও জার্সি এবং বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান—সবই একত্রিত হয়ে এই ম্যাচকে হয়ে উঠেছে স্মরণীয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন নতুন এক অধ্যায়ের দিকে এগোচ্ছে। মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট শুধু তার ব্যক্তিগত মাইলফলক নয়, দেশের ক্রিকেট প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক।
MAH – 13877 I Signalbd.com



