ক্রিকেট

ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি, দৃঢ় শুরুতে এগিয়ে বাংলাদেশ

Advertisement

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা আজ দেখেছে এক দুর্দান্ত সকাল। টেস্ট ক্রিকেটে অনেক দিন পর এমন আত্মবিশ্বাসী ও ইতিবাচক সূচনা করেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিং জুটিতে শতরানের দারুণ ভিত্তি গড়ে দিয়েছে সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়।

দুই ওপেনারের পরিণত ব্যাটিংয়ে বিনা উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১০৯ রান। এই সময়টায় মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের ওপেনিং ব্যাটাররা যেন নিজেদের সীমাবদ্ধতা ভুলে নতুন করে শুরু করেছেন।

আয়ারল্যান্ডের ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ

দিনের শুরুটা হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা তাদেরকে বড় সংগ্রহ গড়তে দেয়নি। আগের দিনের অসমাপ্ত ইনিংসের বাকি উইকেটগুলো খুব দ্রুত তুলে নেয় বাংলাদেশি বোলাররা। ফলে প্রথম সেশনের শুরুর দিকেই শেষ হয়ে যায় অতিথিদের ইনিংস।

পেসার শরিফুল ইসলাম এবং স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু। আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা কোনোভাবেই লাইন বুঝে খেলতে পারেননি। এই ছোট সংগ্রহটাই বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস দেয় ব্যাট হাতে দারুণ সূচনা করার।

সাদমান-জয়ের দৃঢ় সূচনা: পরিণত ব্যাটিংয়ে শতরানের জুটি

বাংলাদেশের ইনিংস শুরু হয় দারুণ মনোযোগের সঙ্গে। প্রথম কয়েক ওভারে বল কিছুটা মুভ করছিল, কিন্তু দুই ওপেনার দেখেশুনে খেলে সেই সময়টা পার করে দেন।

সাদমান ইসলাম ধীরে ধীরে নিজের ছন্দ খুঁজে পান। আয়ারল্যান্ডের মিডিয়াম পেসাররা লাইন ধরে রাখতে পারছিলেন না, সুযোগ বুঝে কভার ও মিডউইকেটের দিকে দারুণ কিছু শট খেলেন সাদমান। ৪৯ বলে পূর্ণ করেন নিজের হাফ সেঞ্চুরি — ক্যারিয়ারের ৭ম ফিফটি।

অন্যপ্রান্তে মাহমুদুল হাসান জয়ও ছিলেন সমান মনোযোগী। তিনি শুরুতে খানিকটা সাবধানী থাকলেও সময়ের সঙ্গে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকেন। ৭৭ বলে ৫০ রান করে জয়ও ছুঁয়ে ফেলেন নিজের পঞ্চম টেস্ট ফিফটি। তার ইনিংসে আসে সাতটি দৃষ্টিনন্দন চার এবং একটি ছক্কা।

দুই ওপেনারের মধ্যে বোঝাপড়াটা ছিল চোখে পড়ার মতো। রান নেওয়ার সময় দৌড়ঝাঁপ, শর্ট বল সামলানো, কিংবা স্পিনারদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন — সবকিছুতেই পরিপক্কতা দেখা যায় তাদের মধ্যে।

বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে আরেক মাইলফলক

বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে ওপেনিং জুটিতে শতরান দেখা পাওয়া এখনো বিরল ঘটনা। এই জুটি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র ১১তম শতরানের ওপেনিং পার্টনারশিপ।

এর আগে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের জুটি বেশ কিছুবার এমন সাফল্য এনে দিয়েছিল। কিন্তু তাদের পর ধারাবাহিক ওপেনিং জুটি দেখা যায়নি। সাদমান ও জয় আজ সেই শূন্যতা কিছুটা পূরণ করেছেন।

ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটিংয়ে নতুন যুগের সূচনা হতে পারে এই জুটির হাত ধরে। তরুণ এই দুই ব্যাটার একে অপরকে দারুণভাবে সাপোর্ট দিচ্ছেন, যা টেস্টের মতো ধৈর্যের ফরম্যাটে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ওপেনিংয়ে স্থিতিশীলতা কেন জরুরি

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল স্থিতিশীল ওপেনিং জুটির অভাব। ইনিংসের শুরুতেই দ্রুত উইকেট হারালে মধ্যক্রম চাপের মুখে পড়ে। ফলে বড় সংগ্রহ গড়া কঠিন হয়ে পড়ে।

আজকের ইনিংসের শুরুটা সেই পুরনো সমস্যার সমাধান দেখাচ্ছে। ওপেনাররা যখন শান্তভাবে বলের অপেক্ষা করেন, বাউন্ডারি বেছে নেন, তখন পুরো ব্যাটিং লাইনআপে আত্মবিশ্বাস আসে।

টেস্ট ক্রিকেটে এমন ভিত্তি তৈরি হলে দল সহজেই ৩০০–৪০০ রানের দিকে যেতে পারে, যা যেকোনো ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা বাড়ায়।

পিচের চরিত্র এবং আবহাওয়া: ব্যাটিংয়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ

সিলেটের উইকেট প্রথম দিন থেকেই ব্যাটিংয়ের জন্য যথেষ্ট সহায়ক দেখা গেছে। ঘাস কিছুটা কাটা, আর বাউন্সও তুলনামূলকভাবে সমান। প্রথম সেশনে কিছুটা মুভমেন্ট থাকলেও পরে তা একদমই কমে যায়।

আবহাওয়াও ছিল চমৎকার। রোদ থাকলেও গরম খুব বেশি ছিল না, ফলে ব্যাটাররা স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পেরেছেন। বিশেষ করে জয় ও সাদমান দুজনেই দারুণভাবে টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রণ করে খেলেছেন, যেটা দীর্ঘ ইনিংস খেলার জন্য অপরিহার্য।

দলের ড্রেসিং রুমে আত্মবিশ্বাস ও হাসির ঝলক

বাংলাদেশ দলের ড্রেসিং রুমে আজ দেখা গেছে আত্মবিশ্বাস ও উচ্ছ্বাস। টিম ম্যানেজমেন্টের মুখেও হাসি। কোচ হাথুরুসিংহে ওপেনারদের ব্যাটিং দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

একজন বোর্ড কর্মকর্তা বলেন, “এমন শুরু আমরা অনেক দিন পাইনি। সাদমান ও জয় দুজনেই নিজেদের জায়গা বুঝে খেলেছে, যেটা টেস্টে খুব দরকার।”

ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রতিক্রিয়া

স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকরা দুই ওপেনারের ইনিংস উপভোগ করেছেন পুরোপুরি। সাদমানের ফিফটির পর গ্যালারিতে ছড়িয়ে পড়ে করতালির ধ্বনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয় প্রশংসার ঢল। কেউ লিখেছেন, “বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে নতুন সকাল।” আবার কেউ লিখেছেন, “সাদমান-জয় জুটি টেস্টে আমাদের ভবিষ্যতের ভরসা।”

আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ

যদিও শুরুটা দারুণ, তবে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। টেস্ট ম্যাচে প্রথম দিনের ভালো সূচনা ধরে রাখাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। দ্বিতীয় দিন সকালে নতুন বলে আবারও পরীক্ষা দিতে হবে ওপেনারদের।

এছাড়া মিডল অর্ডারে দায়িত্ব থাকবে অভিজ্ঞ ব্যাটারদের কাঁধে—মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস ও শান্তর মতো ব্যাটারদের ওপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশ কত বড় স্কোর তুলতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, “যদি ওপেনিং জুটির পর ব্যাটাররা দায়িত্ব নিয়ে খেলে, তাহলে এই ম্যাচে বড় লিড নেওয়া সম্ভব।”

বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড টেস্ট: ম্যাচের সারসংক্ষেপ

বিষয়বিবরণ
ভেন্যুসিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম
ম্যাচবাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড, একমাত্র টেস্ট
আয়ারল্যান্ডের ইনিংসপ্রথম সেশনের শুরুতেই শেষ
বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি১০৯ রান, বিনা উইকেটে
সাদমান ইসলাম৪৯ বলে ৫০*, ৭ম হাফ সেঞ্চুরি
মাহমুদুল হাসান জয়৭৭ বলে ৫০*, ৫ম হাফ সেঞ্চুরি
ওপেনিং পার্টনারশিপটেস্টে বাংলাদেশের ১১তম শতরানের জুটি

নতুন আশা জাগাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে এই ইনিংস শুধুই একটি ভালো শুরু নয়—এটি এক ধরনের মানসিক পরিবর্তনের প্রতীক। সাদমান ও জয়ের ব্যাটে যেমন আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া, তেমনই দেখা যাচ্ছে পরিণত ক্রিকেট ভাবনা।

যদি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়, তাহলে বাংলাদেশ আবারও টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের শক্ত অবস্থানে ফিরতে পারবে। এই ইনিংস তাই শুধু একটি ম্যাচের গল্প নয়, বরং এক নতুন সম্ভাবনার যাত্রা।

MAH – 13759 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button