পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন অধ্যায়: ফিল্ড মার্শাল মুনিরের দ্বিতীয় ওয়াশিংটন সফর
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসিম মুনির এ সপ্তাহেই আবারো যুক্তরাষ্ট্র সফর করতে পারেন। গত জুলাইয়ের শেষ দিকে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)-এর প্রধান জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিলা যখন পাকিস্তানে আসেন, তখন থেকেই এই সফরকে ‘পাল্টা সফর’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দু’মাসের ব্যবধানে একই উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তার ওয়াশিংটন সফর সত্যিই বিরল, যা দুই দেশের প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক যোগাযোগের ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত বহন করে।
ডন পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে জানা যায়, এই সফরে মুনিরের সঙ্গে মিলিত হবেন মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সিনিয়র আধিকারিকরা। আলোচনার আলোচ্যসূচিতে থাকতে পারে:
- মধ্যএশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি
- আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়া
- সীমান্ত নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সমন্বয়
- প্রতিরক্ষা সরবরাহ ও সামরিক হাইড্রোল
একই সঙ্গে মার্কিন সেনাবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে সামরিক মহড়া ও প্রশিক্ষণ বিনিময় বাড়ানোর বিষয়েও কথা হতে পারে।
সফরের প্রেক্ষাপট
- সেন্টকম প্রধানের আগমণ
বছরের শুরুতে, ক্যারিবীয় ও মধ্য প্রাচ্যের নিরাপত্তা দেখভালকারী সেন্টকম প্রধান জেনারেল কুরিলা পাকিস্তানে এলে সবচেয়ে বড় ইঙ্গিত ছিল—ওয়াশিংটন আবার ইসলামাবাদের প্রতি ঘনিষ্ট হচ্ছে। - আফগানিস্তান শিবির
আফগানিস্তানে শান্তি বিন্যাসে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার পর আফগান ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ও ন্যাটো’র পাশাপাশি পাকিস্তানের সমর্থন দরকার। - সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক প্রভাব
পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সেনাপ্রধানের উচ্চপদস্থ মার্কিন সফর নিয়মিত কূটনীতি নয়, বরং শক্তিশালী রাজনৈতিক সংকেতও বহন করে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া: মোদি যাচ্ছেন বেজিংয়ে
মুনিরের সফরের মাঝেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীন সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই, নানা সরকারি সূত্র থেকে জানা গেছে—আগামী দুই দিনের বৈঠকে অংশ নিতে তিনি বেজিং পৌঁছাবেন।
এই সফরের প্রেক্ষাপটেও রয়েছে মার্কিন শুল্ক ও বাণিজ্য-প্রতিবেদনের সংকট:
- ট্রাম্প প্রশাসন গতকালই ঘোষণা করেছে, ভারতের উপর ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় মোট শুল্ক পৌঁছাল ৫০%-এ।
- ভারতীয় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই শুল্ক ঠেকাতে দৃষ্টি এখন বৈশ্বিক বিকল্প বাজারে।
- সেই প্রেক্ষাপটে চীনের বাজার ও অর্থনৈতিক মঞ্চ মোদির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সফরের সম্ভাব্য আলোচ্যসূচি
- বাণিজ্যিক সহযোগিতা
শুল্ক বৃদ্ধি মোকাবিলায় চীনের সাথে সরাসরি বাণিজ্য চুক্তি বা বাজার প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা। - পর্যটন ও অবকাঠামো
ভারতীয় পর্যটক প্রবাহ বাড়ানো এবং বেজিং-দিল্লি অবকাঠামো প্রকল্প আপগ্রেড। - সীমান্ত সঙ্কট
হিমালয় অঞ্চলের সীমান্তে ইতিমধ্যে কিছু উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে; তাই এ বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে। - টেকনোলজি বিনিময়
চীনের 5G, ইলেকট্রিক গাড়ি, সৌরবিদ্যুৎ ও বিঅ্যান্ডটেক খাতে ভারতের অংশগ্রহণ নির্মাণ করা।
ত্রিবার্ষিক ত্রিভুজ: ওয়াশিংটন—ইসলামাবাদ—দিল্লি
১. জনমত ও কূটনীতি
- ওয়াশিংটন: পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সফরের মাধ্যমে মুনিরের কঠিন অবস্থানেও সামরিক সমন্বয় বজায় রাখতে চায়।
- ইসলামাবাদ: আফগান সঙ্কট ম্যানেজ করা; চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমতা ধরে রাখা।
- দিল্লি: মার্কিন শুল্কের চাপ সইতে চরমভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যদিকে চীনকে নিয়েও সদূরদর্শিতার সঙ্গে এগোচ্ছেন।
- অর্থনীতি ও নিরাপত্তার অনুষঙ্গ
তিনটি শক্তি—মার্কিন, ভারত, পাকিস্তান—তাদের অর্থনৈতিক ম্যানডেট ও সামরিক প্রাধান্য বজায় রাখতে চায়, কিন্তু প্রত্যেকেরই অপরটির সঙ্গে সম্পর্ক জটিল।- মার্কিন অর্থনীতিতে চীনের স্থান অধিক; ভারতের শুল্কের দিক থেকে চাপ।
- পাকিস্তানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয়, তবে চীনই প্রধান অস্ত্রদাতা।
- ভারত অবশ্য চীনকে প্রতিদ্বন্দ্বী গণ্য করে, তবে বাণিজ্যে নির্ভরশীল, আর মার্কিন সমর্থনও চায়।
কূটনৈতিক সমীকরণ: ভবিষ্যতের পথ চিহ্নিত
| বিষয় | যুক্তরাষ্ট্র | পাকিস্তান | ভারত |
|---|---|---|---|
| সামরিক সমন্বয় | সেন্টকম-মুনির মিটিং | মার্কিন সরবরাহ ও মহড়া | সীমান্ত নিরাপত্তায় মার্কিন সহায়তা |
| বাণিজ্য চাপ | ভারত শুল্ক বাড়ল | চীনের বিপরীতে সামরিক নির্ভরতা | চীনের বাজারে ঘুরাঘুরি |
| আফগান সমস্যা | শান্তিপ্রক্রিয়া সমর্থন | মূল ফ্যাক্টর | সীমাবদ্ধ ভূমিকা |
| চীন সম্পর্ক | দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা | একবিংশে শ’ ইম্পোর্টার | প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিদ্বন্দ্বী |
| নির্বাচন নিরিখে প্রভাব | মধ্য ভোটে সিকিউরিটি ফোকাস | অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমীকরণ | অর্থনৈতিক পুনর্গঠন |
পর্যালোচনায় কী বলছেন বিশ্লেষকরা?
- ড. অনুরাধা মিশ্রা (জিওপলিটিক্স বিশেষজ্ঞ, দিল্লি): “মোদির চীন সফর শুধু বাণিজ্য বিষয়ক নয়, তা ভবিষ্যতে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক গভর্ন্যান্সেও বড় ভূমিকা রাখবে। শাহানশাহী সম্পর্কের মাঝে ভারসাম্য খুঁজতে হবে।”
- অ্যান্থনি গ্রিফিন (বিশ্বমঞ্চ শান্তি গবেষণা কেন্দ্র, ওয়াশিংটন): “পাক-ইউএস সামরিক যোগসূত্র দৃঢ় হচ্ছে, তবে চীনের মোকাবিলা কখনো যেন পাকিস্তানের নীতি বাঁকা না হয়ে যায়।”
- মোহাম্মদ শামসুল হক (বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক, ইসলামাবাদ): “আমাদের জন্য মার্কিন সমর্থন প্রয়োজন, কিন্তু চীনই অস্ত্র সরবরাহে অগ্রসূরী। এই দ্বৈত নির্ভরতা সামলানো বাংলাদেশসহ গোটা অঞ্চলের সাবধানতার বিষয়।”
ভবিষ্যতের সমীকরণ
- পাকিস্তানে সামরিক ও কূটনৈতিক সমন্বয়ে নতুন মাত্রা এসেছে; ওয়াশিংটন সফর তাই গুরুত্বপূর্ণ স্তর।
- ভারতে বাণিজ্য চাপ মোকাবিলা ও চীন-বন্দুকের তীব্রতা কমানোতেই মোদিকে বেজিংঞ্চে যেতে হয়েছে।
- অফ-দ্য-রেকর্ড আলোচনার পর দুই সফর কীভাবে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও কূটনীতির মানচিত্র বদলে দেবে, তা এখন সবার নজর থাকবে।
MAH – 12187 , Signalbd.com



