ক্রিকেট

সিরিজ বাঁচাতে আজ সন্ধ্যায় উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

Advertisement

টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটা বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। প্রথম ম্যাচে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর আজকের দ্বিতীয় ম্যাচটি হয়ে উঠেছে বাঁচা-মরার লড়াই। জয় ছাড়া সিরিজে টিকে থাকার আর কোনো বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে।

আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ম্যাচ জিতলেই সিরিজে সমতা ফেরানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে, হার মানে সিরিজ হার নিশ্চিত।

প্রথম ম্যাচের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময়

সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ১৬৬ রানের লক্ষ্য দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুটা ছিল দুর্দান্ত—দলীয় রান দ্রুত ৪০ ছুঁয়ে ফেলে। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই একের পর এক উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। মাত্র কয়েক ওভারেই চারটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারিয়ে কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় দল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৪৯ রানে, ফলে ১৬ রানের পরাজয় বরণ করতে হয়।

অধিনায়ক লিটন দাস ম্যাচ শেষে স্বীকার করেন, ব্যাটিং ইউনিটের ভুল সিদ্ধান্তই হারের মূল কারণ। “আমরা ভালো শুরু করেছিলাম, কিন্তু মাঝপথে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছিলাম। টি-টোয়েন্টিতে ছোট ছোট ভুলই ম্যাচের ফল বদলে দেয়,” বলেন লিটন।

অন্যদিকে, তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব ম্যাচ শেষে বলেন, “আমাদের আর পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখন সব ম্যাচই ফাইনালের মতো খেলতে হবে।”

দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়

প্রথম ম্যাচে ব্যাটারদের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারলেই দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে টপ অর্ডার ব্যাটারদের দায়িত্ব অনেক বেশি। ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ তামিমকে ইনিংসের সূচনাতেই মজবুত ভিত্তি গড়তে হবে।

দলের মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও শান্তকে সামনে থেকে দায়িত্ব নিতে হবে। বিশেষ করে শেষ কয়েক ওভারে দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।

আরেকজন মূল ভরসা হতে পারেন সাকিব আল হাসান। দীর্ঘদিন পর টি-টোয়েন্টিতে ফেরা এই অলরাউন্ডার ব্যাট ও বল—দুই বিভাগেই বড় প্রভাব ফেলতে পারেন।

বোলিং বিভাগে আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বোলাররা তুলনামূলক ভালো করেছেন। তানজিম হাসান সাকিব ও শরীফুল ইসলামের বোলিংয়ে ছিল গতি ও নিয়ন্ত্রণের ছাপ। স্পিনার নাসুম আহমেদ ও সাকিব আল হাসানও মাঝ ওভারে রান রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখেন।

তবে উইন্ডিজের পাওয়ার হিটিং সামলাতে হলে শেষ ওভারগুলোতে বোলারদের আরও কৌশলী হতে হবে। বিশেষ করে ইয়র্কার ও ধীর গতির ডেলিভারিতে মনোযোগ দিতে হবে।

বাংলাদেশের বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের বোলিং ইউনিট ভালো করেছে, তবে আরও ধারালো হতে হবে। বিশেষ করে ডেথ ওভারে এক্সিকিউশন উন্নত করতে হবে। আমরা জানি, উইন্ডিজ দল শেষ ওভারগুলোতে বিধ্বংসী ব্যাটিং করে থাকে।”

ওয়েস্ট ইন্ডিজের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে

প্রথম ম্যাচে জয় পেয়ে আত্মবিশ্বাসের জোয়ারে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। তাদের ব্যাটিং ইউনিটে রয়েছে বেশ কিছু আগ্রাসী ব্যাটার—রভম্যান পাওয়েল, ব্র্যান্ডন কিং, এবং নিকোলাস পুরানদের মতো খেলোয়াড়রা যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।

তবে তাদের দুর্বলতা হলো ধারাবাহিকতা। একটি ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেও পরের ম্যাচে হঠাৎই ভেঙে পড়তে দেখা যায়। তাই বাংলাদেশ যদি শুরুতেই উইকেট তুলে নিতে পারে, তাহলে ক্যারিবীয়দের ওপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।

চট্টগ্রামের আবহাওয়া ও উইকেট পরিস্থিতি

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সবসময়ই ব্যাটসম্যানদের সহায়ক উইকেট হিসেবে পরিচিত। তবে সন্ধ্যার ম্যাচ হওয়ায় শিশির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ম্যাচের আগে মাঠ কর্মীরা জানিয়েছেন, উইকেটে থাকবে সামান্য ঘাস, যা প্রথম ইনিংসে পেসারদের কিছুটা সহায়তা দেবে। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে শিশির পড়লে বোলারদের জন্য বল নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তাই টস জিতে প্রথমে ব্যাট করা হতে পারে ভালো বিকল্প।

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ

আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে বাংলাদেশের হাতে খুব বেশি ম্যাচ নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই সিরিজসহ মোট পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে টাইগাররা।

এই ম্যাচগুলো থেকেই মূলত বিশ্বকাপের দল গঠন ও কৌশল নির্ধারণ করা হবে। তাই প্রতিটি ম্যাচই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। ব্যাটিং লাইনআপের স্থিতিশীলতা ও বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা—দুইই এখন টিম ম্যানেজমেন্টের নজরে।

দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যান

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ২০ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

  • বাংলাদেশ জয় পেয়েছে: ৮টি ম্যাচে
  • ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় পেয়েছে: ১০টি ম্যাচে
  • পরিত্যক্ত: ২টি

এই পরিসংখ্যান বলছে, দুই দলের শক্তির পার্থক্য খুব বেশি নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্সও উন্নতি করেছে, বিশেষ করে দেশের মাঠে।

সম্ভাব্য একাদশ

বাংলাদেশ:
লিটন দাস (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাওহিদ হৃদয়, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটকিপার), তানজিম হাসান সাকিব, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ:
ব্র্যান্ডন কিং, জনসন চার্লস, রভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), নিকোলাস পুরান, শিমরন হেটমায়ার, আন্দ্রে রাসেল, রোমারিও শেফার্ড, জেসন হোল্ডার, আকাল হোসেন, আলজারি জোসেফ, গুডাকেশ মূর্তি।

সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণের লড়াই আজ চট্টগ্রামে। একদিকে অভিজ্ঞতা ও গতি নিয়ে মাঠে নামবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অন্যদিকে প্রতিশোধ ও আত্মপ্রত্যয়ের আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ দল।

হাজারো দর্শকের সমর্থন, দেশের জার্সির মর্যাদা এবং সিরিজ টিকিয়ে রাখার তীব্র প্রেরণা—সব মিলিয়ে আজকের ম্যাচে এক উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই দেখতে পাবে ক্রিকেটপ্রেমীরা।

জয়ের মাধ্যমে সিরিজে সমতা ফেরানোই এখন টাইগারদের একমাত্র লক্ষ্য।

MAH – 13545 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button