চলমান আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় ভারতের ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলিয়ান নারী ক্রিকেটারের সঙ্গে অশ্লীল আচরণের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে র্যাডিসন ব্লু হোটেল থেকে ক্যাফেতে যাওয়ার পথে দুই খেলোয়াড়কে একটি অজ্ঞাত ব্যক্তি হেনস্থা করে। ঘটনাস্থলেই পুলিশের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল ও পরিস্থিতি
পুলিশ ও দলের নিরাপত্তা সূত্রে জানা যায়, ঘটনা ঘটেছে ইন্দোরের খাজারানা রোডে। দুই নারী ক্রিকেটার হোটেল থেকে বের হয়ে একটি ক্যাফের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেল চালানো এক ব্যক্তি তাদের পিছু নেন এবং একজন খেলোয়াড়কে অশ্লীলভাবে স্পর্শ করে দ্রুত পালিয়ে যান।
দলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ড্যানি সিমন্সকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়। তিনি স্থানীয় নিরাপত্তা টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করেন। এরপর সহকারী পুলিশ কমিশনার হিমানি মিশ্রা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই খেলোয়াড়ের বক্তব্য নেন।
আইনগত ব্যবস্থা
এই ঘটনার পর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৭৪ ধারা (নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা) ও ৭৮ ধারা (পিছু নেওয়া বা স্টকিং) অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় এক প্রত্যক্ষদর্শী অভিযুক্তের মোটরসাইকেলের নম্বর লিখে রেখেছিলেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে আকিল খান নামে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের উপ-পরিদর্শক নিধি রঘুবংশী জানান, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অপরাধের মামলা রয়েছে। তিনি আরও জানান, “এই ধরনের ঘটনা কোনভাবেই tolerable নয়, আমরা যথাসম্ভব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
অস্ট্রেলিয়ান দল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ান নারী ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন অস্ট্রেলিয়ান দলের কাছে আশ্বাস দিয়েছে যে তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। দলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, “আমরা নিশ্চিত করছি যে খেলোয়াড়রা নিরাপদ এবং কোনো ধরনের হুমকি ছাড়াই খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন।”
এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে আইসিসি ও স্থানীয় ক্রিকেট বোর্ডও কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছে। তারা সমস্ত খেলোয়াড়কে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার নির্দেশনা প্রদান করছে এবং নিশ্চিত করছে যে হোস্ট দেশ প্রতিটি খেলোয়াড়কে নিরাপদ রাখতে সব ব্যবস্থা নেবে।
নারী ক্রিকেটে নিরাপত্তা প্রশ্ন
সম্প্রতি নারী ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বড় টুর্নামেন্ট ও আন্তর্জাতিক ম্যাচের সময় খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “নারী খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হোটেল, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ম্যাচ ভেন্যুতে নিরাপত্তা প্রটোকল আরও শক্ত করা প্রয়োজন। প্রত্যেক আন্তর্জাতিক টিমের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিত সমন্বয় করা উচিত।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে যে, খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক দায়িত্বের অংশ। আইসিসিও এই ঘটনা তদন্তে সহায়তা করছে।
মহিলা খেলোয়াড়দের অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এখন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি, সচেতনতা এবং দ্রুত রিপোর্টিং মেকানিজমও তৈরি করা হচ্ছে।
ঘটনার প্রভাব
এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র দুই ক্রিকেটারের উপর প্রভাব ফেলে না, বরং পুরো টুর্নামেন্টের ভাবমূর্তিকেও প্রভাবিত করে। খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে নিরাপদ না হলে খেলার প্রতি মনোযোগ ও পারফরম্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খেলোয়াড়দের মানসিক ও নিরাপত্তা সহায়তা টিমের অঙ্গ হিসেবে থাকা অপরিহার্য। ফলে ক্রিকেট বোর্ড ও হোস্ট দেশের প্রশাসনের কাছে চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে যাতে তারা প্রতিটি খেলোয়াড়কে নিরাপদ পরিবেশ প্রদান করে।
ইন্দোরের এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক নারী ক্রিকেট সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। তবে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ ও অস্ট্রেলিয়ান দলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ায় পরিস্থিতি এখন শান্ত। স্থানীয় প্রশাসন এবং ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারী খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা এবং মর্যাদা রক্ষা করার গুরুত্ব আবারও প্রমাণ করলো। প্রতিটি হোস্ট দেশ এবং ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব হল খেলোয়াড়দের নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা।
MAH – 13467 I Signalbd.com



