এসএসসি: অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জন্য আরেকটি পরীক্ষা নেয়ার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ফেল করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে, বিকল্প ও স্বল্প-মেয়াদী পরীক্ষার মাধ্যমে এই বিপুল শিক্ষার্থীকে পুনরায় শিক্ষার ধারায় ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবে ও শিক্ষাব্যবস্থায় ভারসাম্য ফিরবে।
ঘটনার বিস্তারিত: শিক্ষাবিদদের সুপারিশ
বিশেষজ্ঞদের মতে, অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জন্য তিন মাসের মধ্যে একবারের জন্য সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব এবং দরকারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, “যথাযথ প্রস্তুতির সুযোগ দিয়ে দ্রুত আরেকটি পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীরা হতাশায় না পড়ে আবার শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরতে পারবে।”
তিনি আরও বলেন, “শুধুমাত্র ১-২ নম্বরের জন্য যেসব শিক্ষার্থী ফেল করেছে, তাদের জীবন যেন স্থবির না হয়ে পড়ে। অতীতেও যেভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, তেমন একটি উদ্যোগ এখন জরুরি।”
পাসের হার নিয়ে বিতর্ক
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। কিন্তু সেই হার হঠাৎ করেই এ বছর ৬৮.৪৫ শতাংশে নেমে আসে। শিক্ষাবিদদের অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে ফলাফল ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন সহজ করা, নম্বর বাড়ানো এবং নমনীয় খাতা মূল্যায়নই এর পেছনে মূল কারণ।
একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অনেক শিক্ষার্থী যাদের জিপিএ-৫ ছিল, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, পাস করিয়ে দেওয়ার প্রবণতা আসলে শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
প্রতিক্রিয়া ও জনমত: শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কণ্ঠ
ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের একাংশ দ্রুত সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। তারা অভিযোগ করছে, এমসিকিউ অংশে মাত্র ১-২ নম্বরের জন্য ফেল করায় তারা এক বছরের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ছিটকে পড়ছে। তাদের দাবি, লিখিত অংশে ভালো ফলাফল থাকা সত্ত্বেও এমসিকিউয়ের জন্য ফেল করাটা অযৌক্তিক।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা শুধু একটু সুযোগ চাই — যাতে প্রমাণ করতে পারি যে আমরা পারি। বছরের শেষ অবধি বসে থাকলে মনোবল ভেঙে যাবে।”
অভিভাবকরা বলছেন, সন্তানদের হতাশ হয়ে আত্মঘাতী হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। ইতোমধ্যেই দেশের কিছু অঞ্চলে এরকম মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে।
পরিসংখ্যান ও তুলনা: কী বলছে সংখ্যা?
এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে প্রায় ১৯ লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছয় লাখের বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য। শুধু একটি বা দুটি বিষয়ে ফেল করেছে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ।
তুলনামূলকভাবে ২০১০ সালেও এমন কম পাসের হার দেখা গিয়েছিল, তবে সেটিও ৭২ শতাংশের উপরে ছিল। এত বড় সংখ্যায় শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় দেশের শিক্ষা খাতে এটি একটি বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ মত: কী হতে পারে সমাধান?
শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, শুধুমাত্র পাস-ফেল না দেখে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক মূল্যায়ন করা জরুরি। পরীক্ষার ধরনে পরিবর্তন, একবারের ভুলের কারণে পুরো বছরের ক্ষতি না করা — এসব বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।
ড. আব্দুস সালাম বলেন, “সাম্প্রতিক ফলাফল আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। এখন সময় বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার। দ্রুত আরেকটি পরীক্ষা আয়োজন করলেই শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে।”
“তিন মাস সময় নিয়ে বিশেষ পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীরা আবার মূলধারায় ফিরতে পারবে”—অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম
সারসংক্ষেপ
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার কমে এসেছে ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৬৮.৪৫ শতাংশে। প্রায় ছয় লাখ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় শিক্ষাব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিক্ষাবিদরা বিকল্প পরীক্ষার আয়োজনের সুপারিশ করেছেন।
শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বড় ধরনের ফলাফলগত পতন শুধু একটি সংখ্যা নয় — এটি লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবনের সঙ্গে জড়িত। বিকল্প ও সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আরও একটি সুযোগ দেওয়া হলে তা শুধু মানবিকই হবে না, বরং দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণেও ভূমিকা রাখবে।
তবে এখন প্রশ্ন—শিক্ষা মন্ত্রণালয় কি দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবে, নাকি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ অপেক্ষার পথে ঠেলে দেবে?
এম আর এম – ০৩০৪, Signalbd.com