ক্রিকেট

১৬ ইনিংস পর ৩০০: ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিল্লি টেস্টে টিকে

Advertisement

টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ রানের দলীয় ইনিংসকে সাধারণত বড় ইনিংস হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য এই ‘৩০০’ ছিল এক ধরনের স্বপ্নের মতো, যা টানা ১৬ ইনিংস ধরে অধরা হয়ে ছিল। গত বছরের নভেম্বরে অ্যান্টিগায় বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪৫০ রান করার পর থেকেই তারা আর কখনো ৩০০-এর কাছাকাছি যেতে পারেনি। কিন্তু শেষপর্যন্ত দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৯০ রানে অলআউট হয়ে সেই দীর্ঘদিনের অপেক্ষাকে সমাপ্তি দিল।

এই ইনিংসটি শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য নয়, ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কারণ এটি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ফলো অনের পরিস্থিতিতে তাদের চতুর্থ সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।

৫ দিনের টেস্টে ফের পঞ্চম দিন

ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই ইনিংসের মাধ্যমে অন্তত ইনিংস ব্যবধানে হার এড়িয়েছে। ভারতকে আবার ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছে। ফলে ম্যাচটি গড়িয়েছে টেস্টের শেষ দিন পর্যন্ত। সাত ম্যাচ পর আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা টেস্টের পঞ্চম দিনে পৌঁছল।

তবে পরিস্থিতি এতটা সুবিধাজনক নয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। অবিশ্বাস্য কিছু না হলে এই ম্যাচে তাদের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত। ফলে ভারতের দুই ম্যাচের সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে জেতার সম্ভাবনা প্রবল।

দিল্লিতে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার সময় ভারতকে ১২১ রানের লক্ষ্য ছুঁতে হয়েছে। চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হয়েছে ১ উইকেটে ৬৩ রানে। শেষ দিনে ভারতকে আরও ৫৮ রান সংগ্রহ করতে হবে। ততক্ষণে যশস্বী জয়সোয়াল ৮ রান করে ফিরেছেন। অপরদিকে লোকেশ রাহুল এবং সাই সুদর্শন ৫৪ রানের অপরাজিত জুটি গড়ে রেখেছেন। রাহুল ২৫ এবং সুদর্শন ৩০ রান করে আছেন।

ক্যাম্পবেল ও হোপের সেঞ্চুরি

ফলো অন করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস তৃতীয় দিনে শুরু হয়েছিল ২ উইকেটে ১৭৩ রান নিয়ে। জন ক্যাম্পবেল ৮৭ এবং শাই হোপ ৬৬ রানে দিন শুরু করেন। এরপর তৃতীয় উইকেটে ১৭৭ রান যোগ করার সময় ক্যাম্পবেল টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। রবীন্দ্র জাদেজার বলে এলবিডব্লু হয়ে ক্যাম্পবেলের ইনিংস ১১৫ রানে শেষ হয়। ১৯৯ বলে তিনি ১২ চার ও ৩ ছক্কায় এই রান সংগ্রহ করেছেন।

শাই হোপও ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করে হোপ ২১৪ বলে ১০৩ রান করেন। চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তার এই সেঞ্চুরির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭১ রানে নিয়ে যান। তবে মোহাম্মদ সিরাজের বলে হোপ বোল্ড হয়ে যান।

ক্যাম্পবেল ও হোপের পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরও ৪০ রান যোগ করলেও তারা আরও ৫ উইকেট হারায়। শেষ জুটি হিসেবে জাস্টিন গ্রিভস এবং জেইডেন সিলস ৭৯ রান যোগ করেন। জুটির মধ্যে গ্রিভস অপরাজিত ৫০ রানে আছেন। অন্যদিকে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান সিলস আউট হয়েছেন ৩২ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোরস্মারি

  • ভারত: ৫১৮/৫ ডিক্লেয়ারেশন, ১৮ ওভারে ৬৩/১ (সুদর্শন ৩০*, রাহুল ২৫*; ওয়ারিক্যান ১/১৫)
  • ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৪৮ ও ১১৮.৫ ওভারে ৩৯০ (ক্যাম্পবেল ১১৫, হোপ ১০৩, গ্রিভস ৫০*, চেজ ৪০, সিলস ৩২; বুমরা ৩/৪৪, কুলদীপ ৩/১০৪, সিরাজ ২/৪৩)

চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ইনিংস দর্শকদের চোখে ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। ১৬ ইনিংস পর ৩০০ রানের গণ্ডি পার হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য একটি বড় মানসিক জয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থা শেষ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ক্রিকেটে অতীতেও শক্তিশালী দল ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের ব্যাটিং লাইনআপের স্থিতিশীলতা অনেকাংশে কমে গেছে। এই দীর্ঘ ১৬ ইনিংসের ‘৩০০’ গণ্ডি পার না হওয়ার ধারা তাদের জন্য এক ধরনের চাপ তৈরি করেছিল। তাই দিল্লিতে এই ইনিংসটি শুধু একটি রান নয়, মানসিক জয়ও।

ভারতীয় দল: ব্যালান্স ও পারফরম্যান্স

ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের পারফরম্যান্সও প্রশংসনীয়। প্রথম ইনিংসে ৫১৮ রান করার পরও দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে তারা কৌশলগতভাবে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করছে। শেষ দিনের খেলা সহজ নয়, তবে সুদর্শন ও রাহুলের অপরাজিত জুটি ভারতকে সিরিজ জয়ের পথে রাখতে পারে।

টেস্ট ক্রিকেটে ফলো অনের গুরুত্ব

ফলো অন পরিস্থিতিতে ৩৯০ রান তোলা ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য একটি বড় অর্জন। ইতিহাসে ফলো অনের পরিস্থিতিতে টেস্ট জিততে অনেক দলই ব্যর্থ হয়েছে। তাই ৩০০ রানের ইনিংস টিমের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ইনিংস ওয়েস্ট ইন্ডিজের যুব খেলোয়াড়দের জন্য বড় শিক্ষা।

খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ

  • জন ক্যাম্পবেল: ১৯৯ বলে ১১৫ রান, ১২ চার, ৩ ছক্কা, প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি
  • শাই হোপ: ২১৪ বলে ১০৩ রান, ১ চার ও ৬ ছক্কা, টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি
  • জাস্টিন গ্রিভস: ৫০* অপরাজিত, শেষ জুটি ধরে রাখা
  • জেইডেন সিলস: ৩২ রান, ১১ নম্বরে ব্যাটিং

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা কিছুটা অপ্রতিরোধ্য হতে পারেনি। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে বুমরা, কুলদীপ ও সিরাজ যথাযথ ব্যালান্স রেখেছেন।

আগামী ম্যাচ ও সিরিজের প্রভাব

এই ম্যাচে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও ভারত জয়ী হলে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তরুণদের জন্য এটি মূল্যবান অভিজ্ঞতা। তাদের ব্যাটিং লাইনআপের স্থিতিশীলতা ও চাপ সামলানোর ক্ষমতা আগামী ম্যাচে আরও উন্নতি করতে সাহায্য করবে।


দিল্লি টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৬ ইনিংস পর ৩০০ রানের অর্জন, জন ক্যাম্পবেল ও শাই হোপের সেঞ্চুরি, এবং শেষ জুটির অবদান এই টেস্টকে স্মরণীয় করে তুলেছে। তবে ম্যাচের ফলাফলের দিক থেকে ভারত প্রাধান্য বজায় রাখছে। এই ইনিংস ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য আত্মবিশ্বাসের বিজয় হলেও সিরিজে ভারতের জয় অনিবার্য বলে মনে হচ্ছে।

MAH – 13313 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button