
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় জঙ্গল সলিমপুরের গহীনে অবস্থিত একটি অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা ধ্বংস করেছে সেনাবাহিনী। এই অভিযানকালে চারজনকে আটক করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর এলাকার গহীনে অবস্থিত পাহাড়ি অংশে অভিযান চালানো হয়। সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে উদ্ধার করা অস্ত্র ও সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে দেশীয় তৈরি ছয়টি পিস্তল, ৩৫ রাউন্ড খালি কার্তুজ, ৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, একটি চাইনিজ কুড়াল, ২০টি ছুরি, চার্জারসহ দুইটি ওয়াকিটকি, একটি মেগাফোন, চারটি প্যারাস্যুট ফ্লেয়ার এবং অন্যান্য অস্ত্র তৈরির যন্ত্রপাতি।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এই পাহাড়ি এলাকায় কারখানা দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল এবং স্থানীয়দের জানামতে, এখানে নিয়মিত অস্ত্র তৈরি এবং বিক্রির চেষ্টা চলছিল। সেনাবাহিনীর অভিযান এমন এক সময় এসেছে, যখন দেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী সংস্থাগুলি অবৈধ অস্ত্র উৎপাদন ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান চালাচ্ছে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান সংবাদদাতাকে জানান, “আমরা সেনাবাহিনী থেকে তথ্য পেয়েছি। আটককৃত চারজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তাদের থানায় আনার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সেনাবাহিনীর অভিযান ও উদ্ধারকৃত সামগ্রীর বিস্তারিত
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অভিযানটি পরিকল্পিত ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। তারা জানিয়েছেন, অবৈধ অস্ত্র কারখানার মধ্যে উপস্থিত সরঞ্জামগুলি শুধুমাত্র পিস্তল ও খালি কার্তুজ তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতো না, বরং বৃহৎ আকারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরি ও মজুত করারও চেষ্টা চলছিল।
উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে:
- ছয়টি দেশীয় তৈরি পিস্তল
- ৩৫ রাউন্ড খালি কার্তুজ
- ৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ
- চাইনিজ কুড়াল
- ২০টি ছুরি
- দুইটি ওয়াকিটকি
- একটি মেগাফোন
- চারটি প্যারাস্যুট ফ্লেয়ার
- অন্যান্য অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি
এই অস্ত্র ও সরঞ্জামগুলো অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করানো হয়েছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। সেনারা জানান, এই অভিযান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরও কিছু স্থানীয় এবং বিদেশী চক্র এই অবৈধ অস্ত্র কারখানার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
নিরাপত্তা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
সেনাবাহিনী এবং পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে। সেনা কর্মকর্তারা বলেন, “এই ধরনের অভিযান দেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক শান্তি রক্ষার জন্য অপরিহার্য। আমরা আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অবৈধ অস্ত্র তৈরির যে কোনো চেষ্টাকে কঠোরভাবে দমন করব।”
চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানার সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ি এলাকাটি স্বাভাবিকভাবে জনবহুল নয়, তাই এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হয়েছিল।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা বলেছেন, পাহাড়ি এলাকায় এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রম তাদের জন্য ভয়ঙ্কর ও উদ্বেগজনক। একজন স্থানীয় জানান, “এই এলাকায় কখনও কেউ সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখতো না। কিন্তু এখন জানা গেল, এখানে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র তৈরি হচ্ছিল।”
অন্য একজন স্থানীয় বলেন, “সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি। আশা করি ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।”
অবৈধ অস্ত্র কারখানা: একটি বিস্তৃত সমস্যা
বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্র উৎপাদন ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সমস্যা। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহ ও উৎপাদন বেশ বেশি। দেশের নিরাপত্তা সংস্থা নিয়মিতভাবে এই ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে।
সেনা ও পুলিশ জানিয়েছেন, এই ধরনের অভিযান জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র নির্মাণ ও বেচাকেনার ক্ষেত্রে কঠোর বার্তা দেয়। তারা বলছেন, “যে কেউ দেশে আইন ভঙ্গ করে অস্ত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত হবে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আইনগত প্রক্রিয়া
অস্ত্র কারখানা থেকে আটককৃত চারজনকে সীতাকুণ্ড থানায় আনা হলে, তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী মামলা করা হবে। বাংলাদেশে অস্ত্র আইন (Arms Act 1878) অনুযায়ী, অবৈধ অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে আজীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানা।
ওসি মজিবুর রহমান বলেন, “আমরা সকল প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাই এই ধরনের কার্যক্রম দেশে আর না ঘটে।”
সামগ্রিক প্রভাব
এই অভিযান শুধু সীতাকুণ্ডেই নয়, বরং সমগ্র চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে সরকার এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে বোঝা যাচ্ছে যে, অবৈধ অস্ত্র তৈরির বিরুদ্ধে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা কতটা জরুরি।
সেনাবাহিনী এবং পুলিশ এ ধরনের অভিযান চালিয়ে দেশের নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষা নিশ্চিত করছে। এ ধরনের অভিযান সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছে এবং অবৈধ অস্ত্র নির্মাণ ও বেচাকেনার বিরুদ্ধে সামাজিক চাপ বাড়াচ্ছে।
MAH – 12551, Signalbd.com