
কলম্বো: ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে উড়িয়ে বাংলাদেশের সাফল্য নতুন দিগন্ত খুলেছে। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন মারুফা আক্তার। তার দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শন ক্রিকেটবিশেষজ্ঞদের মন জয় করেছে। নিগার সুলতানা জ্যোতি উল্লেখ করেছেন, মারুফার মধ্যে রয়েছে দেশের সেরা পেসার হওয়ার সম্ভাবনা।
মারুফা আক্তার: বাংলাদেশের নতুন বোলিং স্টার
২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছিলেন মারুফা। মাত্র তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলা সংখ্যাগত দিক থেকেও নজরকাড়া। ২৭ ওয়ানডে ও ৩০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সংগ্রহ করেছেন ৪২ উইকেট।
মারুফার বোলিং কৌশল নৈপুণ্যপূর্ণ। প্রতিপক্ষের রান নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি অত্যন্ত কার্যকর। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ অক্টোবরের ম্যাচে ৭ ওভারে ৩১ রানে ২ উইকেট নেওয়া তার দুর্দান্ত বোলিং কৌশল ফুটিয়ে তোলে। বিশেষভাবে, ইনিংসের প্রথম ওভারে পরপর দুই বলে পাকিস্তানের দুই টপঅর্ডার ব্যাটার ওমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিনকে বোল্ড করেন। আইকনিক ডেলিভারি হিসেবে লাসিথ মালিঙ্গা বোলিংটিকে বিশ্বকাপের সেরা বল হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি
২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পরবর্তী প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে। সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক জ্যোতি বলেন, “আগেও আমাদের দলে ভালো পেসার ছিল। তবে মারুফাকে ঘিরে যে আলোচনা চলছে, তেমন আগে কখনো হয়নি। আমি মনে করি মারুফা বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা পেসার হয়ে উঠতে পারেন।”
জ্যোতি আরও বলেন, “এবার বিশ্বকাপে মারুফার মনোযোগ থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। পারফরম্যান্সে যে চাপ আসতে পারে, সেটি যেন তার খেলার উপর প্রভাব না ফেলে। পরবর্তী ম্যাচের প্রস্তুতি এবং দলের জন্য নিজের সেরাটা দেওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।”
মারুফার বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা
মারুফা ২০২৩ ও ২০২৪ সালের দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে এবারই তার ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম সুযোগ। ছোট খেলা থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবদান, এমনকি কঠিন পরিস্থিতিতেও মারুফা দমে যাননি। এই কারণে তার ওপর আশা ও প্রত্যাশার চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আইসিসি এবং লাসিথ মালিঙ্গাসহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মারুফার বোলিং দক্ষতাকে অত্যন্ত প্রশংসা করেছেন। পাকিস্তানকে পরাজিত করে তার নাম ইতিমধ্যেই বিশ্ব ক্রিকেটের মানচিত্রে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট ও ইংল্যান্ডের ইতিহাস
নারী টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড চারবার মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে প্রত্যেকবারই বাংলাদেশ হেরেছে। তবে ওয়ানডেতে এই দুই দল কেবল একবার মুখোমুখি হয়েছে। ২০২২ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওয়েলিংটনে ইংল্যান্ড ১০০ রানে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল।
২০২৫ বিশ্বকাপে দুই দলই জয় দিয়ে শুরু করেছে। তবে নেট রানরেটে পার্থক্য লক্ষ্যণীয়। ইংল্যান্ডের নেট রানরেট +৩.৭৭৩, আর বাংলাদেশের +১.৬২৩। এটি পরবর্তী ম্যাচে কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের উন্নয়ন ও মারুফার গুরুত্ব
মারুফা আক্তারের মতো পেসার বাংলাদেশের জন্য বিরল। তার বোলিং কৌশল, গতিশীলতা ও শ্বাসরুদ্ধকর পারফরম্যান্স দলের মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নারী ক্রিকেটকে আরও সমর্থন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের দল গঠনে মনোযোগ দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মারুফা দলের বোলিং অট্যাককে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। তার উপস্থিতি দলের আত্মবিশ্বাস ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে।
মারুফার পরবর্তী চ্যালেঞ্জ
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শুধু রানের দিকেই নয়, মানসিক প্রস্তুতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপের উচ্চ মানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর, মারুফার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে অধিনায়ক জ্যোতির নির্দেশনা ও দলের সমর্থন তাকে চাপ সামলাতে সহায়তা করবে।
বিশ্বকাপের এই পর্যায়ে প্রতিটি ম্যাচ দল ও খেলোয়াড়দের জন্য অভিজ্ঞতা ও কৌশলগত শিক্ষা হিসেবে কাজ করে। মারুফা যেমন পারফরম্যান্সের মাধ্যমে পরিচিতি তৈরি করছেন, তেমনি দেশের নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছেন।
মারুফা আক্তারের বোলিং বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স শুধু জয়ই আনেনি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্লেষকদের প্রশংসাও অর্জন করেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার পারফরম্যান্স নির্ভর করবে দলের পরবর্তী জয় ও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে।
মারুফার মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটারের উদ্ভাবনী বোলিং, দলের সঙ্গে সমন্বয়, এবং মানসিক দৃঢ়তা বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
MAH – 13203 I Signalbd.com