ক্রিকেট

ফাইনালের আগে ভারত-পাকিস্তানের দুই তারকাকে আইসিসির শাস্তি

Advertisement

এশিয়া কাপ ২০২৫-এর ১৭তম আসরের মহারণ ফাইনাল কেবল এক ম্যাচ দূরে। গ্রুপ পর্ব এবং সুপার ফোরের উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই শেষে ভারত ও পাকিস্তান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে ফাইনালে মুখোমুখি হবে। ৪১ বছরের এশিয়া কাপ ইতিহাসে এটি প্রথমবার যে ভারত ও পাকিস্তান সরাসরি ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। কিন্তু মাঠের উত্তেজনার চেয়েও বেশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন হলো দু’দলীয় তারকাদের ‘বিতর্কিত কর্মকাণ্ড’।

দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড, বিসিসিআই ও পিসিবি, এই বিষয়ে আইসিসির কাছে অভিযোগ জানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আইসিসি সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুবাইয়ে শাস্তির ঘোষণা দিয়েছে। ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও পাকিস্তানি পেসার হারিস রউফ কে ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে। আর পাকিস্তানি ব্যাটার সাহিবজাদা ফারহান শাস্তি না পেলেও সতর্ক করা হয়েছে।

সুপার ফোরে বিতর্কিত ‘গানশট’ উদযাপন

সুপার ফোরে পাকিস্তান-ভারত ম্যাচে সাহিবজাদা ফারহান ভারতের বিরুদ্ধে ঝোড়ো ফিফটি করে ‘গানশট’ উদযাপন করেছিলেন। তার এই উদযাপনের ধরন নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। বিসিসিআই অভিযোগ করে, এটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। তবে ফারহান স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তার উদযাপন শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় রীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি উল্লেখ করেছেন, অতীতে মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং বিরাট কোহলিও একই ধরনের ‘গানশট’ উদযাপন করেছেন।

ফারহানের যুক্তি আইসিসির দিক থেকে বেকায়দায় ফেলে। শেষ পর্যন্ত তাকে কোনো শাস্তি না দিয়ে সতর্ক করা হয়।

রউফের বিতর্কিত অঙ্গভঙ্গি

হারিস রউফ ভারতীয় সমর্থকদের উদ্দেশে আঙুল দিয়ে ‘৬–০’ সংকেত দেখান এবং বিমান ভূপাতিত হওয়ার অঙ্গভঙ্গি করেন। এই কর্মকাণ্ড নেটিজেনদের মধ্যে সরগরম বিতর্ক সৃষ্টি করে। অনেকেই দাবি করেন, এটি ভারতের সামরিক বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ হিসেবে ধরা যেতে পারে।

আইসিসি শুনানি শেষে রউফকে ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ জরিমানা করেছে। ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবকেও একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে সূর্যকুমারের শাস্তির বিরুদ্ধে বিসিসিআই আপিল করেছে।

অভিযোগ ও শুনানির পদ্ধতি

ESPN Cricinfo-এর তথ্য অনুযায়ী, সাধারণত অভিযুক্ত ক্রিকেটাররা দোষ স্বীকার করলে শুনানি ছাড়াই শাস্তি ঘোষণা করা হয়। তবে এই ঘটনায় তিনজনই নিজেদের যুক্তি তুলে ধরায় বিশেষভাবে দুবাইয়ে শুনানি আয়োজন করা হয়। শুনানিতে সূর্যকুমার ও রউফের যুক্তি আইসিসি সন্তোষজনক মনে করেনি। ফলে ম্যাচ ফি’র জরিমানা আরোপ করা হয়।

ভারত-পাকিস্তানের এশিয়া কাপ ইতিহাস

এশিয়া কাপের ১৭তম আসরে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই সর্বদা উত্তেজনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। এবারের আসরে প্রথম বিতর্ক দেখা দেয় সূর্যকুমার যাদবদের ‘নো হ্যান্ডশ্যাক’ নীতির কারণে। পাকিস্তান দাবি করেছিল, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট এর ভূমিকা নিয়ে সমস্যা আছে এবং তাকে প্রত্যাহার করা উচিত।

আইসিসি সেই আবেদন গ্রহণ না করে পাইক্রফটকে বহাল রেখেছে এবং বাকি ম্যাচগুলো আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে। পাকিস্তান এমন অবস্থায় ম্যাচ বয়কটের হুমকি দিয়েছিল। তবে পরে পাইক্রফট ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতি মসৃণ হয়।

ফাইনালের আগে উত্তেজনার রেশ

এই বিতর্কের মাঝেই ভারত ও পাকিস্তান রোববার ফাইনালে মুখোমুখি হবে। দুই দলের শিবিরে উত্তেজনা, চোট ও শাস্তি মিলিয়ে খেলাটি হবে ইতিহাসস্মৃতির। ভারতীয় শিবিরে ইতিমধ্যেই দুই খেলোয়াড় চোটের শঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান শিবিরও মেন্টাল প্রেশার ও সমর্থক সমালোচনার মুখোমুখি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাঠের উত্তেজনার সঙ্গে বাইরের বিতর্কও ফাইনালের নাটকীয়তা আরও বাড়িয়ে দেবে।

বিশ্লেষক ও সমালোচকদের মন্তব্য

বিশ্ব ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সবসময়ই ক্রিকেটের চেয়ে বেশি আলোচনার কারণ হয়ে থাকে। রাজনৈতিক ইস্যু, সমর্থক এবং সামাজিক মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া খেলাকে আরও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এবারের বিতর্কও তার ব্যতিক্রম নয়।

ক্রিকেট কমেন্টেটররা আশা করছেন, ফাইনাল মাঠের খেলায় জয়-পরাজয় সব প্রশ্নের উত্তর দেবে। তবে আগে থেকেই সবার নজর থাকবে দুই দলের তারকাদের আচরণ ও তাদের উদযাপনের ওপর।

MAH – 13022 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button