বিশ্ব

৪০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ফের নির্বাচনে লড়বেন উগান্ডার প্রেসিডেন্ট

Advertisement

উগান্ডায় আগামী বছর নির্বাচন, মুসোভেনির ক্ষমতা আরও দীর্ঘ হবে

আফ্রিকার কেন্দ্রীয় দেশ উগান্ডায় আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে একবারে আবারও ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইয়াওয়েরি মুসোভেনি তাঁর পুনর্নির্বাচনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ৪০ বছর ধরে দেশ শাসন করা মুসোভেনির জন্য এটি তার দীর্ঘশ্বাসের যাত্রার আরেক অধ্যায় হবে।

৪০ বছরের ক্ষমতা এবং নির্বাচনে মুসোভেনির চ্যালেঞ্জ

৮০ বছর বয়সী ইয়াওয়েরি মুসোভেনি ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর থেকে উগান্ডায় তিনি প্রেসিডেন্ট পদে অবিচ্ছিন্নভাবে আছেন। তার দল ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্ট (এনআরএম) দুবার দেশের সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের বয়সসীমা ও মেয়াদকালের সীমা তুলে নিয়েছে, যা মুসোভেনির দীর্ঘ মেয়াদী শাসনকে সংবিধানিক ভিত্তি প্রদান করে।

মুসোভেনির ঘোষণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

গত রাতে প্রেসিডেন্ট মুসোভেনি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে তিনি পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি দেশের অর্থনীতিকে পরবর্তী পাঁচ বছরে ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এই বৃহৎ লক্ষ্যের পথে তিনি আবারও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিরোধী দলে উত্তেজনা: পপ তারকা থেকে রাজনীতিতে ববি ওয়াইন

উগান্ডার রাজনীতিতে এবার বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ৪৩ বছর বয়সী বিরোধী নেতা রবার্ট কায়াগুলানয়ি, যিনি রাজনৈতিক নাম ববি ওয়াইন নামে পরিচিত। এক সময়ের জনপ্রিয় পপ তারকা ববি ওয়াইন এখন রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন এবং দেশের তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

২০২১ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পর তিনি ব্যাপক জালিয়াতি, ভোটের অনিয়ম এবং নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন করার অভিযোগ এনেছিলেন। নির্বাচনের ফলাফল তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এবারও জানুয়ারি ২০২৬ সালের নির্বাচনে তিনি পুনরায় লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।

নির্বাচন ও রাজনৈতিক উত্তেজনা: সামরিক আদালতে বেসামরিক বিচার

২০২৫ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে উগান্ডার রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়ছে। সম্প্রতি পার্লামেন্টে একটি বিতর্কিত আইন পাস হয়েছে, যা সামরিক আদালতে বেসামরিক নাগরিকদের বিচার করার অনুমতি দেয়। আগে দেশের সুপ্রিম কোর্ট এই ধরনের আইনি বিধানকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছিল। এই আইন নিয়ে বিরোধীরা ব্যাপক প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও আন্তর্জাতিক মত

অধিকার গোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো মুসোভেনির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, তিনি নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে বিরোধী মত দমনে ভূমিকা রেখেছেন। তাঁরা বলছেন, উগান্ডায় গণতন্ত্রের চর্চা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে মুসোভেনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন এবং বলেন, তার শাসনামল দেশের স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে।

উগান্ডার অর্থনৈতিক চিত্র ও ভবিষ্যৎ

বর্তমানে উগান্ডার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ৬৬০০ কোটি ডলার। মুসোভেনির পরিকল্পনা দেশের অর্থনীতিকে পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার। এজন্য নতুন নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে চান।

২০২৬ সালের নির্বাচন: গণতন্ত্রের পরীক্ষার মঞ্চ

আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে প্রায় ৪৫০০万人 ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচন কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখবে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক নির্ধারণে। মুসোভেনি ও বিরোধীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশের গণতন্ত্রের জন্য এক বড় পরীক্ষা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও মুসোভেনির রাজনৈতিক আধিপত্য দীর্ঘদিনের, এবার বিরোধী নেতা ববি ওয়াইনের রাজনৈতিক সুনাম ও তরুণ ভোটারদের আকর্ষণ তাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে।

উগান্ডার ৪০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি নতুন অধ্যায়। ক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকার পর ফের নির্বাচনে লড়াই করা ইয়াওয়েরি মুসোভেনির জন্য এটি একটি বড় দায়িত্ব এবং চ্যালেঞ্জ। দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উগান্ডার নির্বাচন প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি কড়া নজর রাখছে। আগামী বছরের নির্বাচন উগান্ডার ভবিষ্যৎ গড়ার দিক নির্ধারণ করবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button