
এশিয়া কাপ সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে ফাইনালের আশা জিইয়ে রেখেছে পাকিস্তান। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে পাকিস্তানের পেস আক্রমণে ধসে পড়ে লঙ্কানরা। কামিন্দু মেন্ডিসের দুর্দান্ত অর্ধশতক সত্ত্বেও নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ১৩৩ রানেই থেমে যায় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ১২ বল বাকি থাকতে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান।
বিস্তারিত
এশিয়া কাপের সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ভারতের কাছে হেরে যায় পাকিস্তান। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে পারেনি শ্রীলঙ্কাও। তাই ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে দুই দলের সামনেই জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) টসে জিতে শ্রীলঙ্কাকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় পাকিস্তান। তবে রউফ-শাহিনদের তোপে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১২ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটের জয় পায় পাকিস্তান।
আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানি পেসারদের তোপে শুরু থেকেই চাপে ছিল শ্রীলঙ্কা। ৫৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে বড় বিপর্যয়েও পড়ে তারা। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে খাদের কিনারা থেকে দলকে উদ্ধার করেন কামিন্দু মেন্ডিস। এনে দেন লড়াইয়ের পুঁজিও। তার ফিফটিতে ভর করেই মূলত লড়াই করার মতো সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা।
১৩৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পায় পাকিস্তান। উদ্বোধনী জুটিতে শাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামান স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৪৫ রান। ১৫ বলে ২৪ রান করা শাহিবজাদাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন থিকসানা।
একই ওভারে ফেরেন ফখর জামানও। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে বাঁহাতি এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ১৯ বলে ১৭ রান। এদিনও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন সাইম আইয়ুব। ৩ বলে ২ রান করে হাসারাঙ্গার বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন এই ব্যাটার।
অধিনায়ক সালমান আলি আগাও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ৬ বলে ৫ রান করে হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউ-এর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন পাকিস্তান অধিনায়ক। মাত্র ১২ রানের ব্যবধানেই টপ-অর্ডারের ৪ ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। সেখান থেকে ছোট্ট একটা জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে রাখার চেষ্টা করেন হুসেইন তালাত ও মোহাম্মদ হারিস। ১১ বলে ১৩ রান করে চামিরার বলে বোল্ড হয়ে হারিস ফিরলে ভাঙে তাদের ২৫ রানের জুটি।
এরপর আর কোনো অঘটন ঘটতে দেননি মোহাম্মদ নাওয়াজ ও তালাত। দুজনের ৪১ বলে ৫৮ রানের জুটিতে ১২ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটের জয় পায় পাকিস্তান। এই জয়ে ফাইনালের পথে টিকে রইলেন শাহিন-সালমানরা। শ্রীলঙ্কার হয়ে ২টি করে উইকেট নেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও মহেশ থিকশানা। এছাড়া চামিরা পেয়েছেন ১ উইকেট।
টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে এদিন ব্যাট হাতে সময়টা ভালো যায়নি লঙ্কানদের। ৭.৩ ওভারের মধ্যে দলের খাতায় ৫৮ রান যোগ করতেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। তবে কামিন্দুর কল্যাণে শেষ পর্যন্ত বিপর্যয় কাটিয়ে দলের খাতায় লড়াইয়ের পুঁজি তুলে নেয় তারা।
এদিন ইনিংস শুরুর দ্বিতীয় বলেই শাহিন শাহ আফ্রিদির বল পড়তে ভুল করে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন কুশল মেন্ডিস (০)। এক ওভার পর আবারও শাহিনের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা। ৭ বলে ৮ রান করে কট বিহাইন্ড হন তিনি। তৃতীয় উইকেটে ২৫ রানের জুটি গড়েছিলেন কুশল পেরেরা ও চারিথ আসালাঙ্কা। তবে ১২ বলে ১৫ রান করে কুশল আউট হওয়ার পরই চাপ বাড়তে থাকে লঙ্কান শিবিরে। ১৯ বলে ২০ রান করে দলীয় ৫৮ রানে বিদায় নেন অধিনায়ক আসালাঙ্কা।
ক্রিজে নেমেই হুসাইন তালাতের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন দাসুন শানাকা (০)। এরপর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে বিপদ কাটানোর চেষ্টা করেন কামিন্দু। তবে ১৩ বলে ১৫ রান করে দলীয় ৮০ রানে বিদায় নেন হাসারাঙ্গা।
পাকিস্তানের হয়ে ২৮ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন শাহিন। ১৮ রান খরচায় ২ উইকেট হুসাইন তালাতের আর ৩৭ রান খরচায় ২ উইকেট নেন হারিস রউফ।
ম্যাচের প্রভাব ও ফাইনালের সমীকরণ
এই জয়ের ফলে পাকিস্তানের ফাইনালে ওঠার আশা টিকে রইল। অন্যদিকে, টানা দুই ম্যাচে হেরে শ্রীলঙ্কা পড়েছে চাপে। তাদের সামনে এখন ভারতের বিপক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জ। ফাইনালে জায়গা করে নিতে হলে শ্রীলঙ্কাকে শুধু জয়ই নয়, রান রেটেও ভালো করতে হবে।
পাকিস্তানের জন্যও সমীকরণ সহজ নয়। ভারতের বিপক্ষে ফলাফল এবং নেট রান রেট ফাইনাল নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্লেষক ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান ম্যাচে ব্যাটিংয়ে বড় কোনো জ্বালানি না পেলেও বোলিং আক্রমণের শক্তি দিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শাহিন ও রউফের পেস আক্রমণ যে কোনো দলের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং ব্যর্থতাই তাদের মূল হারের কারণ। শুধু কামিন্দু মেন্ডিস ছাড়া কেউ দাঁড়াতে না পারায় দলকে বড় বিপর্যয় সামলাতে হয়েছে।
এশিয়া কাপ সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে পাকিস্তান নিজেদের টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে গেল। এখন ফাইনালে উঠতে হলে তাদের সামনে কঠিন পথ। তবে এই জয় পাকিস্তানি শিবিরে নতুন উদ্দীপনা যোগ করেছে। অন্যদিকে, লঙ্কানরা হারের চাপ কাটিয়ে উঠতে না পারলে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
এম আর এম – ১৪৯৩,Signalbd.com