
যশোরের রাজারহাটে তুষার নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে সিআইডি পুলিশের চার সদস্য। এ ঘটনার জেরে স্থানীয়রা অভিযুক্ত চার পুলিশ সদস্যকে মারধর করেছে। মারধরে গুরুতর আহত শহিদুল ইসলাম নামের এক কনস্টেবলকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
ঘটনা গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজারহাট এলাকার কাশ্মীরি বিরিয়ানি হাউজের সামনে ঘটে। তুষার অভিযোগ করেছেন, সাদা পোশাকে সিআইডি পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘ভুয়া সিআইডি আমার টাকা ও মোবাইল নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে বাঁচাও।’
তুষারের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে পুলিশকে থামানোর চেষ্টা করে এবং অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে দুজনকে স্থানীয়রা পেটাতে শুরু করে। এ সময় ভিডিওতে দেখা যায়, তুষারের পকেটে থাকা দুটি ফোন ও নগদ ৫ হাজার টাকা বের করে দেওয়া হয়। অভিযুক্তরা একসময় পকেটে থাকা পোটলা দেখিয়ে অভিযোগ করেন, তুষারের কাছে ইয়াবা রয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য
সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার মোসা. সিদ্দিকা বেগম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা অভিযানে গিয়েছিল। তারা কাউকে অহেতুক ফাঁসাতে যাবে কেন? তুষারের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।’
তবে তুষারের স্বজনরা দাবি করেছেন, তুষারের নামে মাদকের কোনো মামলা নেই। বর্তমানে পুলিশের পক্ষ থেকে মারধরের ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা এবং মাদক ব্যবসার অভিযোগে তুষারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। চা দোকানি মোতাহার হোসেন বলেন, ‘পুলিশ যখন তুষারকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করেছে। এটি আমাদের এলাকার জন্য একটি গুরুতর ঘটনা।’
এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ অভিযোগ করেছেন, পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সাধারণ মানুষের উপর হয়রানি বন্ধ হওয়া উচিত।
যশোরে পূর্বেও পুলিশি অভিযানে সাধারণ মানুষ ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময় অভিযানের নামে নিরীহ মানুষকে হেয় করা বা মামলা চাপানোর ঘটনা ঘটেছে। বিশেষত মাদকবিরোধী অভিযানে কখনো কখনো এ ধরনের সংঘর্ষ লক্ষ্য করা গেছে।
প্রভাব
এই ঘটনার প্রভাব স্থানীয় সমাজে ও পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অপরদিকে, সরকারি কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন, ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশি তৎপরতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও জনসাধারণের সঙ্গে সমন্বয়হীন কার্যক্রম কখনো কখনো বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ এবং জনগণের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে
যশোরের রাজারহাটে ইয়াবা ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগে চার পুলিশ সদস্যকে পিটুনির ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য উদ্বেগজনক। তবে তাৎক্ষণিক তদন্ত এবং প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সহায়ক হতে পারে।
এম আর এম – ১১৯১, Signalbd.com