ক্রিকেট

ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট – উত্তেজনা আর প্রতিশোধের আগুন

Advertisement

ক্রিকেট দুনিয়ায় ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি মানেই আবেগ, উত্তেজনা আর প্রতিশোধের আগুন। প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক বৈরিতা যেমন প্রবল, তেমনি ক্রিকেট মাঠেও তা প্রতিফলিত হয়। তাই যেকোনো ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ শুধু একটি খেলা নয়, বরং কোটি দর্শকের অনুভূতির প্রতিফলন।

চলতি এশিয়া কাপ ২০২৫–এর সুপার ফোর পর্বে আবারও মাঠে নামছে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল। কয়েকদিন আগেই গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত–পাকিস্তান। সেই ম্যাচে পাকিস্তান হেরে গিয়েছিল একপেশে ভাবে। এবার তাই ‘প্রতিশোধের আগুন’ নিয়েই নামছে বাবর আজমের দল। অন্যদিকে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারত চাইছে নিজেদের দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রাখতে।

‘কাজীর গরু’র মতো ভারত–পাকিস্তান দ্বৈরথ

ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে যত আলোচনা হয়, মাঠে তার বাস্তবায়ন দেখা যায় কম। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বহু বছর ধরে বন্ধ। দুই দল মুখোমুখি হয় কেবল আইসিসি টুর্নামেন্ট কিংবা এশিয়া কাপে। ফলে প্রতিটি ম্যাচই হয়ে ওঠে দুষ্প্রাপ্য এবং সেইসঙ্গে ভক্তদের কাছে অতিমূল্যবান।

সাম্প্রতিক সময়ে এই ম্যাচগুলিতে একতরফা আধিপত্য দেখাচ্ছে ভারত। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ, ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এমনকি চলতি এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বেও পাকিস্তান ভারতের কাছে পরাজিত হয়েছে। তাই আজকের ম্যাচ পাকিস্তানের জন্য শুধু একটি জয় নয়—এটি মর্যাদার লড়াই, প্রতিশোধের লড়াই।

হ্যান্ডশেক বিতর্কে উত্তাল ক্রিকেট দুনিয়া

গ্রুপ পর্বের ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের সময় একটি ঘটনা বিশেষভাবে আলোচনায় আসে। টসের আগে দু’দল অধিনায়কের মধ্যে নিয়মমাফিক হ্যান্ডশেক হয়নি। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটকে ঘিরে এই বিষয়টি নিয়ে চরম বিতর্ক শুরু হয়। পাকিস্তান দাবি তোলে, ইচ্ছে করেই এই প্রচলিত প্রথাটি মানা হয়নি।

এমনকি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB) দাবি তোলে, পাইক্রফটকে পরবর্তী ম্যাচে দায়িত্ব থেকে সরাতে হবে। যদিও শেষ পর্যন্ত আইসিসি তা মানেনি এবং আজকের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও তিনিই দায়িত্বে আছেন। ফলে ম্যাচের আগে থেকেই এই বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।

মাঠের বাইরের চাপ ও রাজনীতি

ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ মানেই মাঠের বাইরের চাপও তীব্র থাকে। দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক সবসময়ই টানাপোড়েনের। ক্রিকেটকেও প্রায়শই তার শিকার হতে হয়।

এমন অবস্থায় মাঠে খেলার বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্ন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তদের লড়াই, টিভি টকশো—সবকিছুতেই এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে বাড়তি উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান শিবিরে যেখানে প্রতিশোধ নেওয়ার আগুন জ্বলছে, সেখানে ভারতীয় শিবির অনেকটাই নির্ভার ভঙ্গিতে নামছে।

পাকিস্তানের ভরসা শাহীন–বাবর–রিজওয়ান

পাকিস্তান দল সবসময় বোলিং শক্তির ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে শাহীন শাহ আফ্রিদি ভারতের বিপক্ষে বড় ম্যাচে সবসময় আলোচনায় থাকেন। তার ভয়ঙ্কর ইন–সুইং এবং নতুন বলে আক্রমণ আজও ভারতের টপ–অর্ডারের জন্য বড় হুমকি।

ব্যাটিংয়ে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের উপর অনেকখানি নির্ভর করছে পাকিস্তান। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই দুই তারকা ভারতের বিপক্ষে বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না। এবার তাই পাকিস্তানের সমর্থকরা চাইবে বাবর–রিজওয়ান জুটি দায়িত্ব নিক।

ভারতের শক্তি ব্যাটিং অর্ডার ও স্পিন বিভাগ

অন্যদিকে ভারতীয় দল বর্তমানে দুর্দান্ত ফর্মে আছে। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা ও শুভমান গিলের মতো ব্যাটাররা পাকিস্তানের বিপক্ষে সবসময় ম্যাচ–উইনার হয়ে উঠেছেন।

তাছাড়া ভারতের স্পিন বিভাগ—রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদব—মধ্য ওভারগুলোতে পাকিস্তানের ব্যাটারদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

পরিসংখ্যান বলছে কী?

ভারত–পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসে দুই দল মোট ১৩৫ বারের বেশি মুখোমুখি হয়েছে। ওয়ানডে–তে পাকিস্তানের জয় বেশি হলেও গত এক দশকে ছবিটা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে।

  • গত ১০ বছরে দুই দল ১৫ বারের বেশি মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে ভারত জয় পেয়েছে অন্তত ১১ বার।
  • বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপে ভারতের আধিপত্য আরও সুস্পষ্ট।
  • পাকিস্তানের শেষ বড় জয় ছিল ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে। তার পর থেকে ভারতই এগিয়ে।

এই পরিসংখ্যানই পাকিস্তানের কাছে আজকের ম্যাচকে প্রতিশোধের সুযোগ করে দিচ্ছে।

দর্শকদের আবেগ ও প্রত্যাশা

ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ মানেই কোটি কোটি দর্শকের আবেগের মিলনমেলা। স্টেডিয়ামে থাকুক বা টিভি পর্দায়, এই ম্যাচে প্রতিটি বলেই গর্জে ওঠে দর্শকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো শুরু হয় ট্রেন্ড, মিম আর অসংখ্য পোস্ট।

আজকের ম্যাচও তার ব্যতিক্রম নয়। এশিয়া জুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন—কোন দল হাসবে শেষ হাসি? পাকিস্তান কি পারবে প্রতিশোধ নিতে, নাকি ভারত আবারও দেখাবে আধিপত্য?

ম্যাচের সম্ভাব্য চিত্র

  • পাকিস্তান যদি প্রথমে ব্যাট করে, তবে বাবর–রিজওয়ানের উপর চাপ বেশি থাকবে। ২৮০–৩০০ রানের বেশি না তুলতে পারলে ভারতের কাছে ম্যাচটা কঠিন হয়ে যাবে।
  • ভারতের টপ–অর্ডার যদি শাহীন–হারিস রউফদের সামলাতে পারে, তবে ম্যাচ একতরফা হয়ে যেতে পারে।
  • স্পিনাররা ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে।

আজকের ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ শুধু মাঠের লড়াই নয়; এটি মানসিক যুদ্ধ, মর্যাদার লড়াই এবং কোটি ভক্তের আবেগের প্রতিফলন। পাকিস্তান প্রতিশোধের আগুনে উজ্জীবিত, অন্যদিকে ভারত চাইছে নিজেদের ছন্দ ধরে রাখতে।

কোন দল শেষ পর্যন্ত হাসবে, তা সময়ই বলবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—এই ম্যাচ আবারও প্রমাণ করবে কেন ভারত–পাকিস্তান দ্বৈরথকে বলা হয় ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় শোডাউন।

MAH – 12935 I Signalbd.comপ্রতিশোধ নিতে মুখিয়ে আছে পাকিস্তান!

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button