ক্রিকেট

ম্যাচ শেষে ভারতের ‘অভদ্রতা’, পাকিস্তান দলের প্রতিবাদ

দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের উচ্চ-চাপপূর্ণ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ শেষে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ক্রিকেট বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে। ম্যাচ শেষে ভারতের কিছু খেলোয়াড় পাকিস্তান দলের সঙ্গে করমর্দনে অংশ নেননি, যা পাকিস্তান ক্রিকেট দলের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ: ম্যাচের মূল ঘটনা

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ছিল দুই শক্তিশালী এশিয়ান দলের মধ্যে মুখোমুখি লড়াই। ম্যাচে ভারতের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর সাধারণত যা হয়, তাতে দুই দলের খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফরা একে অপরকে সৌজন্যসূচক করমর্দন করে থাকেন। তবে এই ম্যাচে সূর্যকুমার যাদব এবং শিভম দুবে সরাসরি ড্রেসিংরুমে চলে যান এবং পাকিস্তান দলের হাত মেলানোর প্রস্তাবে সাড়া দেননি

পাকিস্তান দলের অভিযোগ অনুযায়ী, ভারতীয় খেলোয়াড়দের এমন আচরণ খেলোয়াড়ি মানসিকতার বিপরীত এবং স্পিরিট অফ ক্রিকেটের মূলনীতির পরিপন্থী। পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা মাঠে এগিয়ে গিয়েছিলেন করমর্দনের জন্য, কিন্তু ভারতীয় দলের কিছু খেলোয়াড় ড্রেসিংরুমে চলে যাওয়ায় সৌজন্য বিনিময় হয়নি

ক্রিকেটে করমর্দনের গুরুত্ব

ক্রিকেটে প্রতিটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের শেষে দুই দলের খেলোয়াড়ের স্পোর্টসম্যানশিপ এবং পারস্পরিক সম্মান প্রকাশের জন্য করমর্দন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি খেলার স্পিরিট, পারস্পরিক সম্মান এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে।

যে কোনো ম্যাচের পরে করমর্দন না হওয়া সাধারণত অভদ্রতা হিসেবে ধরা হয়। বিশেষত ভারত-পাকিস্তান জাতীয় দলের মতো উত্তেজনাপূর্ণ দ্বৈরথে এটি ভক্ত এবং সমালোচকদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করে।

ভারতের পক্ষের ব্যাখ্যা

ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে সূর্যকুমার যাদব বলেন, “আমরা এখানে শুধু খেলতে এসেছি এবং আমাদের সরকার ও বিসিসিআই একসাথে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিছু বিষয় খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার চেয়েও বড়। আমরা আমাদের জয়কে পেহেলগামের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সংহতি হিসেবে উৎসর্গ করছি।”

তিনি আরও বলেন, “পুরস্কার বিতরণীতে আমরা বলেছি যে আমরা সকল ভুক্তভোগীর পাশে আছি। আমাদের দেশের সাহসী সেনাদের, যারা অপারেশন সিঁদুরে অংশ নিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানাই।”

ভারতীয় দলের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ম্যাচের পর করমর্দন এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতায় অংশ না নেওয়া ছিল একটি সাংঘাতিক রাজনৈতিক ও মানবিক বিষয় সম্পর্কিত সংবেদনশীল পদক্ষেপ।

পাকিস্তান দলের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান দলের প্রধান কোচ মাইক হেসন সাংবাদিকদের জানান, “আমরা ম্যাচ শেষে হাতে হাত মেলানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু প্রতিপক্ষ অংশ নেনি, তাই আমরা হতাশ হয়েছি। আমরা আমাদের দিক থেকে এগিয়েছিলাম, কিন্তু ভারতীয় খেলোয়াড়রা ড্রেসিংরুমে চলে গিয়েছিল।”

পাকিস্তান দল মনে করছে, ভারতের এমন আচরণ ক্রীড়া নীতিমালার বাইরে এবং খেলোয়াড়দের পারস্পরিক সম্মানহীনতা প্রকাশ করে

পেহেলগাম হামলার প্রেক্ষাপট

ভারতীয় দলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতেই তারা পাকিস্তান দলের সঙ্গে ম্যাচ পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেননি। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় নাগরিক

ভারত সরকার দাবি করেছে, হামলার পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। মে মাসে সীমিত সংঘর্ষের পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়, তবে কূটনৈতিক সম্পর্ক এখনও টাটকা।

ক্রিকেট বনাম কূটনীতি

এই পরিস্থিতি দেখায় ক্রীড়া এবং কূটনীতির মধ্যে সূক্ষ্ম সম্পর্ক। ভারতের সিদ্ধান্ত ছিল মানবিক সংবেদন এবং জাতীয় অনুভূতির সঙ্গে মিলিত, যা ক্রীড়া নীতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে কিছুটা আলাদা।

পাকিস্তান দলের দিকে তাকালে, তাদের প্রচেষ্টা ছিল ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী করমর্দন এবং আন্তঃদলীয় সৌজন্য বজায় রাখা। দুই দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে এ ধরনের উত্তেজনা এবং বিরোধিতা ভক্তদের মধ্যে আলোচনা এবং সামাজিক মিডিয়ায় বিতর্ক সৃষ্টি করে

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিশ্ব ক্রিকেট ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ক্রিকেটের স্পিরিট এবং জাতীয় অনুভূতির মধ্যে ভারসাম্য রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় দলের মানবিক সংবেদন এবং পাকিস্তান দলের খেলার স্পিরিট উভয়কেই ভক্তরা লক্ষ্য করেছেন।”

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও রিপোর্ট করেছে যে, এই ঘটনার ফলে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ইতিহাসে নতুন বিতর্কের অধ্যায় যোগ হয়েছে।

ভক্ত ও বিশ্লেষকের প্রতিক্রিয়া

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তরা দুইভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন:

  1. ভারতের সিদ্ধান্তের সমর্থকরা বলছেন, খেলোয়াড়রা জাতীয় এবং মানবিক দায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছে।
  2. পাকিস্তান সমর্থকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচের শেষে সৌজন্য বিনিময় করা উচিত ছিল।

ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, “এই ঘটনার পর ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, কূটনীতি এবং জাতীয় অনুভূতির সঙ্গে জড়িত একটি মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।”

ম্যাচ শেষে ভারতের কিছু খেলোয়াড়ের আচরণ নিয়ে পাকিস্তান দলের প্রতিবাদ একটি সক্রিয় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যা কেবল মাঠে নয়, সামাজিক মাধ্যম, সংবাদমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

এটি দেখায়, ক্রিকেট কেবল একটি খেলা নয়, এটি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং মানবিক সংবেদনও বহন করে।

ভবিষ্যতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এই ধরনের পরিস্থিতি ভালোভাবে মোকাবিলা করতে ক্রীড়া প্রশাসক এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC)কে নির্দেশনা দিতে হবে।

MAH – 12824  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button