নেদারল্যান্ডসের জন্য বাংলাদেশের মাঠে চ্যালেঞ্জ, কলকাতার হারই প্রেরণা

আগামীকাল সকালেই বাংলাদেশে পৌঁছাচ্ছে নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট দল। শুরু হচ্ছে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ, যা সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ৩০ আগস্ট থেকে। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এটি কেবল এশিয়া কাপের প্রস্তুতি নয়, বরং নেদারল্যান্ডসের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ—যেখানে তারা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করবে।
নেদারল্যান্ডসের প্রধান কোচ রায়ান কুক—যিনি ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ ছিলেন—সিরিজটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্রিকেট সাংবাদিক রানা আব্বাস, যেখানে তিনি সিরিজের লক্ষ্য, বাংলাদেশের সঙ্গে অতীত স্মৃতি এবং দলের প্রস্তুতি সম্পর্কে খোলাখুলি মতামত জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে ফিরে আসা, এবার প্রতিপক্ষের কোচ হিসেবে
প্রশ্ন করা হয়েছিল, “বাংলাদেশে আবার আসছেন, এবার প্রতিপক্ষের প্রধান কোচ হিসেবে। কেমন লাগছে?”
রায়ান কুক বলেন, “বাংলাদেশে আবার আসাটা দারুণ আনন্দের। পাঁচ বছর আগে এখানে ছিলাম এবং খেলোয়াড় ও স্টাফদের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এবার প্রতিপক্ষ হিসেবে আসাটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা, তবে বাংলাদেশ থেকে যে শিক্ষা নিয়েছি তা এখনও আমার সঙ্গে আছে। খেলোয়াড়দের মানসিকতা ও মাঠে তাদের দক্ষতা সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা আছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের মাটিতে সবসময়ই শেখার কিছু থাকে। প্রতিটি সফর আমাকে নতুন চ্যালেঞ্জ ও প্রেরণা দিয়েছে।”
সিরিজের লক্ষ্য: বাংলাদেশকে চমকে দেওয়া
নেদারল্যান্ডস এই প্রথম বাংলাদেশে কোনো দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আসছে। কুক বলেন, “আমরা প্রতিটি ম্যাচ জেতার মানসিকতায় মাঠে নামি। সিরিজ জেতার পরিকল্পনা আমাদের আছে। ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ভালো করার জন্য আমাদের দল আত্মবিশ্বাসী। আমরা চাই আমাদের খেলোয়াড়রা বিশ্বমানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হোক।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “গত বিশ্বকাপে আমরা যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম, সেই অভিজ্ঞতা আমাদের এখানে আরও শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশে আসার লক্ষ্য আমাদের দক্ষতা পরীক্ষা করা এবং নতুন কিছু শেখা।”
কলকাতার ম্যাচের স্মৃতি, সিলেটে প্রেরণা
২০২৩ সালের বিশ্বকাপে কলকাতায় নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশকে হারানো এখনো ক্রিকেটবিশ্বে আলোচিত। কুক বলেন, “কলকাতার জয় আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তখন আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারিয়েছিলাম। এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাসে অনেক বৃদ্ধি দিয়েছে। সিলেটে আসা মানে সেই অনুপ্রেরণার পুনরাবৃত্তি। যদিও এখন ফরম্যাট ভিন্ন, দুই দলেই অনেক পরিবর্তন এসেছে, আমরা সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই।”
তিনি আরও যোগ করেন, “মাঠে সঠিক পরিকল্পনা ও আত্মবিশ্বাস থাকলেই ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। আমরা চাই ম্যাচ জিততে, দর্শকদের দেখাতে যে আমরা নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত।”
২০ ওভারের ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কুক বলেন, “আমরা ২০২২ ও ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সঙ্গে খেলেছি। প্রতিটি ম্যাচই কঠিন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। ভালো পারফরম্যান্স দেখালে জয়ের সুযোগও ছিল। আমাদের লক্ষ্য বিশ্বের শীর্ষ ১০ দলের মধ্যে জায়গা করা। তাই নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ায় আমরা উন্মুখ।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “সিলেটের ম্যাচে আমরা আরও ভালো খেলব এবং দুইটি ম্যাচ জেতার চেষ্টা করব।”
পাওয়ার হিটিং কোচ: দলের শক্তি বৃদ্ধি
বাংলাদেশ দলে নতুন একটি পাওয়ার হিটিং কোচ যোগ হয়েছে। কুক বলেন, “আজকের ক্রিকেটে পাওয়ার হিটিং কোচ দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বড় স্কোর গড়তে এবং নিয়মিত বাউন্ডারি মারতে হিটিং কোচ সাহায্য করে। আমার বাংলাদেশে থাকার সময়ে এই বিষয়টি আমরা অনুধাবন করেছি। এখন সব দলই খুঁজছে এমন খেলোয়াড়, যারা নিয়মিত রানের উৎস হতে পারে। আমি কৌতূহল নিয়ে দেখছি, এই নতুন কোচ কতটা কার্যকরী প্রমাণিত হয়।”
সিলেটের উইকেট: প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ
কুক বলেন, “সিলেটের উইকেট সাধারণত ভালো। ট্রু উইকেটে খেললে ব্যাটিং-বোলিং দুই দিকেই চ্যালেঞ্জ থাকবে। বাংলাদেশ দলের জন্য এটি এশিয়া কাপের প্রস্তুতি হবে। আমাদেরও এটি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে কাজে আসবে। আমাদের দলের অনেক খেলোয়াড় অভিজ্ঞ নয়, তাই এটি তাদের শেখার সুযোগ।”
তিনি আরও বলেন, “মাঠে প্রতিটি ইনিংস শিক্ষণীয় হবে। এই সিরিজ শুধু জেতার নয়, নতুন কৌশল এবং পরিকল্পনা পরীক্ষা করার সুযোগও।”
বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং স্মৃতি
কুক বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচিং স্টাফ সদস্য হিসেবে মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশ ক্রিকেটের গত চার বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। দল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিছু খেলোয়াড় ম্যাচ জেতাতে সক্ষম। আমরা উন্মুখ তাদের বিপক্ষে খেলতে।”
সবশেষে কুক বাংলাদেশের স্মৃতিচারণ করেন, “২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়, ২০১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো এবং ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়—সবই অসাধারণ স্মৃতি। খেলোয়াড়দের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, যা এখনও দৃঢ়।”
নেদারল্যান্ডসের জন্য এই সিরিজ শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চ নয়, এটি তাদের আত্মবিশ্বাস ও অভিজ্ঞতা বাড়ানোর সুযোগ। কলকাতার বিশ্বকাপ জয় তাদের জন্য প্রেরণার উৎস। বাংলাদেশের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি, যেখানে নতুন কোচিং স্ট্র্যাটেজি এবং শক্তিশালী উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে। সিলেটের ম্যাচগুলো ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য রোমাঞ্চকর এবং শিক্ষণীয় হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে এই দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন রঙ যোগ করবে। দুই দলেরই লক্ষ্য: নতুন কৌশল, অভিজ্ঞতা, এবং জয়। ক্রিকেটপ্রেমীরা কেবল রোমাঞ্চ নয়, বরং উভয় দলের উন্নয়ন, কৌশল এবং আত্মবিশ্বাসের খেলা দেখতে পাবেন।
MAH – 12490 , Signalbd.com