এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই যাচ্ছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ইতিহাস গড়ার পথে নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এশিয়া কাপের ট্রফি অধরা থাকলেও, এবার সেই স্বপ্ন পূরণের আশায় পুরো দল একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ এখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। দলের ক্রিকেটাররা বলছেন, এবার তারা শুধু অংশ নিতে নয়, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মিশন নিয়েই মাঠে নামবেন।
অতীতের ব্যর্থতা, আজকের প্রেরণা
২০১২, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেও বাংলাদেশ শিরোপা জিততে পারেনি।
- ২০১২ সালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে গিয়েছিল মুশফিক-তামিমদের বাংলাদেশ।
- ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ফাইনালে ভারত হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে।
- ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আবারো ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ, কিন্তু ভারতই কাঁদায় টাইগারদের।
সেই কান্নাভেজা স্মৃতি এখনো ভোলেনি ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে এবার ভিন্ন এক আবহ। দলের তরুণ-অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এখন প্রস্তুত নতুন কিছুর জন্য।
সাম্প্রতিক সাফল্য: আত্মবিশ্বাসের নতুন অধ্যায়
২০২৫ সালের শুরুতে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুটি সিরিজ জিতে পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে তারা।
- শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম ম্যাচ হেরে গিয়েও বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে। এটি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লঙ্কানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়।
- সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় মিরপুরে পাকিস্তানকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে লিটন দাসের দল।
এই জয়গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তরুণরা। শামীম হোসেন পাটোয়ারীর দুর্দান্ত ফিল্ডিং, পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসান তামিমের ঝোড়ো ব্যাটিং, মিডল অর্ডারে জাকের আলী অনিকের দায়িত্বশীল ইনিংস, আবার বোলিংয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ও শেখ মেহেদী হাসানের নিয়ন্ত্রণ—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দল এখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে।
সংবাদ সম্মেলনে জাকেরের ঘোষণা
মিরপুরে আজ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জাকের আলী অনিক। তিনি স্পষ্ট করে বলেন—
“ইনশা আল্লাহ, এবার আমরা এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই যাচ্ছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দল এবার ট্রফি জিততে সক্ষম।”
তিনি আরও যোগ করেন, দলের ভেতরের পরিবেশ এখন অনেক ইতিবাচক। সবাই কঠোর পরিশ্রম করছে এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এশিয়া কাপে শিরোপা জেতার জন্যই তারা মাঠে নামবে।
প্রস্তুতি সিরিজ: নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরীক্ষা
এশিয়া কাপের আগে বাংলাদেশ তিন ম্যাচের একটি গুরুত্বপূর্ণ টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। ম্যাচগুলো হবে সিলেটে, ৩০ আগস্ট, ১ সেপ্টেম্বর ও ৩ সেপ্টেম্বর।
জাকেরের মতে, এ সিরিজের প্রতিটি ম্যাচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা বাড়াবে এবং দলকে ঝালিয়ে নিতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন—
“কোনো প্রতিপক্ষকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিটি ম্যাচই জিততে হবে। নেদারল্যান্ডস অতীতে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এবারও আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।”
লিটন দাসের নেতৃত্বে নতুন চ্যালেঞ্জ
মে মাসে লিটন দাসকে আনুষ্ঠানিকভাবে টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক করা হয়। তবে তার অধিনায়কত্বের শুরুর দিকটা ভালো ছিল না। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারতে হয় বাংলাদেশকে।
তবুও দলের ভেতরে এখন ইতিবাচকতা আছে। লিটনের নেতৃত্বে দল ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে। খেলোয়াড়রা বিশ্বাস করছে, এবার তারা কিছু আলাদা করতে পারবে।
এশিয়া কাপ ২০২৫: সূচি ও বাংলাদেশের গ্রুপ
এবারের এশিয়া কাপ হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, যেখানে মোট ৮টি দল অংশ নেবে।
- বাংলাদেশের গ্রুপে আছে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও হংকং।
- অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তান খেলবে ওমান ও আরব আমিরাতের বিপক্ষে।
গ্রুপপর্বে প্রতিটি ম্যাচই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সবসময়ই বাংলাদেশকে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিয়েছে। আবার হংকংকেও হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।
ভক্ত-সমর্থকদের আশা
বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীরা এবার সত্যিই বড় কিছু দেখতে চান। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তারা বিশ্বাস করছেন, এশিয়া কাপের ফাইনালে এবার শুধু উঠাই নয়, ট্রফি জেতারও ক্ষমতা আছে টাইগারদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যেই ভক্তদের আলোচনায় ভরপুর—“এবার হবে”।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের শক্তি এখন দলীয় সমন্বয়।
- ব্যাটিং লাইনআপে তরুণদের দাপট আছে।
- বোলিংয়ে আছে অভিজ্ঞতা ও বৈচিত্র্য।
- ফিল্ডিংয়ে উন্নতি হয়েছে দৃশ্যমানভাবে।
তবে চাপের ম্যাচে মানসিক দৃঢ়তা ধরে রাখতে হবে। কারণ, অতীতে ফাইনালে এসে চাপ সামলাতে না পারায় বারবার ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।
এবার কি ভাঙবে ফাইনালের অভিশাপ?
এশিয়া কাপের তিনবারের রানার্সআপ বাংলাদেশ। প্রত্যেকবারই সামান্য ব্যবধানে হাতছাড়া হয়েছে ট্রফি। এ কারণেই “ফাইনালের অভিশাপ” কথাটি বারবার উঠে আসে। তবে বর্তমান দলটির উপর আস্থা রাখছেন সবাই।
যদি শীর্ষ খেলোয়াড়রা ফর্ম ধরে রাখতে পারেন, এবং তরুণরা দায়িত্ব নিতে পারেন—তাহলে এশিয়া কাপে বাংলাদেশই হতে পারে সবচেয়ে বড় চমক।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নতুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে এশিয়া কাপে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রমাণ করেছে, তারা আর শুধুই অংশগ্রহণ করতে যায় না, বরং জয়ের জন্য লড়তে জানে। এবার ভক্তরা আশা করছেন, ফাইনালের অভিশাপ ভেঙে বাংলাদেশ সত্যিই চ্যাম্পিয়ন হবে।
MAH – 12390 , Signalbd.com



