
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর এক সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু তার বদলে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম লজ্জার রেকর্ড গড়ল টাইগাররা। মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে ৭ উইকেট হারিয়ে পরিণতি হলো ৭৭ রানের এক বিব্রতকর পরাজয়।
আশার শুরু, দুঃস্বপ্নের শেষ
শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করে ২৪৪ রানে গুটিয়ে যায়। তাসকিন আহমেদ ও তানজিম সাকিবের বোলিং তোপে লঙ্কান ইনিংস চাপে পড়ে। বিশেষ করে আশালঙ্কা ছাড়া কেউ বড় ইনিংস গড়তে পারেনি।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দারুণ শুরু করে। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৯ রান। এরপর তানজিদ তামিম ও শান্তর জুটিতে রানবোর্ডে যোগ হয় আরও ৭০ এর বেশি রান। দলের সংগ্রহ যখন ১০০, তখনও হাতে ছিল ৮ উইকেট!
কিন্তু সেখান থেকেই শুরু হয় নজিরবিহীন ধস।
ইতিহাস গড়া লজ্জা: ৫ রানে ৭ উইকেট
বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায়টি আসে মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে ৭ উইকেট হারানোর ঘটনা দিয়ে।
- ১০০ রানে ২ উইকেট
- ১০৫ রানে ৮ উইকেট!
এই ধস শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ পতন। এর আগে কোনো দল ৫ রানে এতগুলো উইকেট হারায়নি।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেন পরপর আসা ভূমিকম্পে দাঁড়াতেই পারলেন না।
লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদি মিরাজ, তাসকিন আহমেদ — তিনজন খেলোয়াড় আউট হয়েছেন শূন্য রানে।
আশালঙ্কার সেঞ্চুরি: শ্রীলঙ্কার মূল ভিত
এর আগে ব্যাট হাতে দলকে টেনে তুলেছেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিথা আশালঙ্কা। ১২৩ বলে ১০৪ রানের ইনিংসে ছিল ছয়টি চারের সঙ্গে চারটি বিশাল ছক্কা।
পাঁচটি ভিন্ন জুটিতে রান তুলে দলকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেন তিনি। কুশল মেন্ডিস, লিয়ানাগে, মিলান রত্নায়েকে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার সঙ্গে তাঁর পার্টনারশিপই লঙ্কান ইনিংসের ভিত্তি তৈরি করে।
টাইগারদের ভুল কোথায়?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের ইনিংসে সমস্যা ছিল মাঝের ওভারে একের পর এক উইকেট হারানো, সেই সঙ্গে মনের জোর হারানো।
- শান্ত রান আউট হওয়ার পরই ধস শুরু হয়।
- হাসারাঙ্গার এক ওভারেই দুটি উইকেটের পর বাকিরা যেন এলোমেলো।
- পরিকল্পনার অভাব ও ব্যাটসম্যানদের স্থিরতা না থাকায় বড় জুটি গড়াই সম্ভব হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে দলের নেতৃত্ব ও অভিজ্ঞতা সামনে আসা উচিত ছিল — কিন্তু সেটি দেখা যায়নি।
কোচ ও অধিনায়কের প্রতিক্রিয়া
ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মেহেদি মিরাজ বলেন,
“আমরা শুরুটা ভালো করেছিলাম, কিন্তু মাঝপথে ছন্দ হারিয়ে ফেলি। এমনভাবে ম্যাচ হারা অবশ্যই হতাশাজনক।”
কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেন,
“এমন পরিস্থিতি থেকে শিখে সামনে ভালো করতে হবে। দলে প্রতিভা আছে, কিন্তু মানসিক প্রস্তুতিতে ঘাটতি স্পষ্ট।”
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা: কী হতে পারে সামনে?
এই পরাজয় বাংলাদেশ দলের জন্য শুধু একটি ম্যাচ হার নয় — বরং একটি মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা।
বিশেষ করে টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে আগামী ম্যাচগুলোতে শুধুই জয় নয়, প্রতিরোধ গড়ে তোলার মনোভাবও দেখাতে হবে।
কয়েকজন খেলোয়াড়ের পরিবর্তন, মিডল অর্ডারে স্থায়িত্ব আনা এবং স্পিনারদের ব্যবহারে কৌশলগত পরিবর্তন না আনলে এই হারের রেশ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
“১০০ রানে ২ উইকেট থেকে ১০৫ রানে ৮ উইকেট — এমন ধস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব কমই দেখা যায়”—একজন বিশ্লেষক
ধস থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক
এই হারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি নতুন রেকর্ড যুক্ত হলো — কিন্তু সেটি কোনোভাবেই গর্বের নয়। এই লজ্জা ঢাকতে হলে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে মানসিক শক্তি, পরিকল্পনা এবং নেতৃত্ব — সবই কাজে লাগাতে হবে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে — এই ধস কি সাময়িক? নাকি টাইগারদের জন্য বিপদের পূর্বাভাস?
আগামী ম্যাচেই হয়তো মিলবে উত্তর।
এম আর এম – ০১৪৯, Signalbd.com