ভারতীয় দলের বাংলাদেশ সফরে সায় নেই দিল্লির

আগামী ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের। বিসিসিআই আয়োজন করেছিল তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজ, যা দুই মাস আগে নিশ্চিত করা হয়েছিল। তবে দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় এই সফর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ভারতীয় সরকারের রাজনৈতিক কারণে সফরে আটকাল
দিল্লির সরকারি সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ‘রাজনৈতিক কারণে’ ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফরের সবুজ সংকেত আসেনি। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শীতল, এবং বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতে বিরূপ মনোভাব থাকার ফলে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশে পাঠানো এখন অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিশ্বাসযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সফরের সূচি ও সময়সূচি
সূচি অনুযায়ী, ১৭ আগস্ট মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে নামার কথা ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলটির। এরপর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির মোট ছয় ম্যাচ শেষ করে ১ সেপ্টেম্বর ভারতের ঢাকা ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু গত মে মাসে ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছিল, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও উত্তেজনার কারণে সফর অনিশ্চিত। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ও বাংলাদেশের সাবেক এক সামরিক কর্মকর্তার বিতর্কিত মন্তব্য ভারতীয় বোর্ডের অবস্থানে প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পরিষ্কার বার্তা
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য তখন এক বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে জানিয়েছিল, ওই সাবেক সামরিক কর্মকর্তার মন্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।
এক সংবাদসূত্র জানিয়েছিল, সফরটি ফিক্সড টেস্টিং প্রোগ্রামের (FTP) অংশ হলেও চূড়ান্ত হয়নি, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সফর না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিসিবি ও বিসিসিআইয়ের মধ্যে চলমান আলোচনা
বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম ৩০ জুনের বোর্ড সভায় জানিয়েছেন, তারা আগ্রহী নির্ধারিত সময়েই সিরিজ আয়োজনের। তবে ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে চলমান আলোচনা ও ভারত সরকারের বিধিনিষেধের কারণে এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না সিরিজ হবে কি না।
তিনি আরও জানান, ভারত সফরে না আসলে পরবর্তী সময়ে সূচির ফাঁকা সময়ে সিরিজ আয়োজনের চেষ্টা থাকবে। তবে এখন পর্যন্ত অনিশ্চয়তার কারণ নিয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অবস্থা প্রধান প্রতিবন্ধকতা
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ বলছে, নিরাপত্তা বিষয়টিই প্রধান উদ্বেগের কারণ। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত বিসিসিআই সফর রদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে বড় ধাক্কা
যদি আগস্টে ভারত বাংলাদেশ সফরে না আসে, তাহলে এ বছর আর তাদের বিরুদ্ধে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলা সম্ভব হবে না। কারণ সেপ্টেম্বর মাসে এশিয়া কাপ, অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডের সফর, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বিপিএল এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নির্ধারিত রয়েছে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক ও খেলাধুলার প্রভাব
ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের শীতলতা স্পষ্টভাবেই প্রভাব ফেলছে ক্রীড়াক্ষেত্রে। ক্রিকেট যেমন দুই দেশের জন্য একটি অন্যতম মেলবন্ধনের মাধ্যম, তেমনি বর্তমানে তা যেন রাজনৈতিক কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকদিন ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাঠে ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ অন্যতম আকর্ষণীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে বিবেচিত।
সুতরাং, এই সিরিজ বাতিল বা পিছিয়ে গেলে কেবল ক্রীড়া নয়, দুই দেশের জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধনের সুযোগও কমে যাবে।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর আপাতত অনিশ্চিত। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কারণেই দিল্লি থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নির্ধারিত আগস্ট মাসের সিরিজ হয়তো অনুষ্ঠিত হবে না। বিসিবি ও বিসিসিআইয়ের মধ্যে আলোচনার মধ্যেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ভারত সরকার ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশে পাঠাতে আগ্রহী নয়। যদি সফর স্থগিত হয়, তাহলে ২০২৫ সালের জন্য ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ আয়োজনের সুযোগ নষ্ট হতে পারে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট ফ্যানদের জন্য এটি বড় ধাক্কা হলেও, আশা করা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত ভালো হবে এবং দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। ক্রিকেট মাঠে আবার নতুন করে তারা মুখোমুখি হবে, সেই দিন অপেক্ষায় এখন সবাই।