নুরুল হাসান সোহানের জাতীয় দলে ফিরতে না পারার আক্ষেপ

৩ minutes read

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে জাতীয় দলের দরজা পেরতে পারছেন না। ঘরোয়া এবং অন্যান্য ফরম্যাটে অসাধারণ পারফরম্যান্সের পরও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত এই ক্রিকেটারের মন থেকে সরছে না দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে একসময় ক্রিকেটকেই বিদায় জানাবেন বলে নিজের মনের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৮ মাস ধরে অপেক্ষা

সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সোহান খেলেছেন ২০২৩ সালের ডিসেম্বর। সেটি ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচ। এর আগে সেদেশের মাটিতে ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরেই। তবে এরপর থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া হয়নি। দীর্ঘ এই বিরতির মধ্যেও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করে যাচ্ছেন সোহান। বিশেষ করে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ মৌসুমে তিনি ধারাবাহিক রান করেছেন যথাক্রমে ৪৯৫ ও ৫২২। পাশাপাশি গ্লোবাল সুপার লিগের (জিএসএল) প্রথম আসরে অধিনায়ক হিসেবে রংপুর রাইডার্সকে চ্যাম্পিয়ন করানো সেই সোহানই। বিপিএলেও তার পারফরম্যান্স ছিল উল্লেখযোগ্য।

জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন হারিয়ে যেতে বসেছে

গত শ্রীলঙ্কা সিরিজেও সোহানের নাম ছিল না দলের ঘোষণায়। যদিও তিনি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি ম্যাচে ৭০ বলে ৯৭ রান করে দলের প্রতি দায়বদ্ধতা ও নিজের পারফরম্যান্সের প্রমাণ দিয়েছেন। সেই ম্যাচ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওয়ানডে ক্রিকেটে যখন শেষবার খেলেছি, ভালোই করেছিলাম। নিয়মিত সুযোগ পেলে হয়তো ক্যারিয়ারটা আরও অন্যরকম হত। অবশ্যই সেখানে কিছুটা আক্ষেপ আছে। কিন্তু আমি সর্বদা জাতীয় দলের জন্য খেলতে চাই। যদি সেই স্বপ্ন আর না থাকে, তবে হয়তো ক্রিকেটই ছেড়ে দেব।’

প্রস্তুতি ম্যাচে ঝলকানো ইনিংস

গতকাল অনুষ্ঠিত ৫০ ওভারের প্রস্তুতি ম্যাচে সোহান লাল দলের হয়ে ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংস খেলেন। মাত্র ৭০ বল খেলে তিনি ৭ চার ও ৭ ছক্কায় ৯৭ রান করেন। তিন রানের ছোট ফারাকের জন্য সেঞ্চুরি মিস করলেও এতে খুব একটা মন খারাপ নেই তার। ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো ব্যাটিং হয়েছে আমার কাছে। সেঞ্চুরি হলে ভালো লাগত, কিন্তু রান করাটাই মূল কথা,’ বলেন তিনি।

এই ইনিংসকে আক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখার প্রশ্নে সোহান বলেন, ‘এই ইনিংস দিয়ে তো কোনো আক্ষেপ প্রকাশ হয় না। বরং গত কয়েক বছরে আমার ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা বেশ ভালো। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স বজায় রাখতে পেরে আমি নিজেকে প্রস্তুত রাখতে পারছি।’

জাতীয় দলের আগে রংপুরের গুরুত্ব বেশি?

গ্লোবাল সুপার লিগের দ্বিতীয় আসর ১০ থেকে ১৮ জুলাই গায়ানার ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক হিসেবে এবারও সোহান দলে সুযোগ পেয়েছেন। তবে জাতীয় দলের গুরুত্বের তুলনায় এই টুর্নামেন্ট তার কাছে ছোট। ‘বাংলাদেশ জাতীয় দল আমার কাছে সব সময় সবার উপরে থাকবে। যদিও গ্লোবাল সুপার লিগে রংপুরের খেলাও আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, জাতীয় দলে সুযোগ না পেলে হয়তো সেখানে খেলব,’ তিনি জানান।

ঘরোয়া ক্রিকেটে তার অবদান

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএল ও গ্লোবাল সুপার লিগে নুরুল হাসানের অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষ করে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গত দুই মৌসুমে ধারাবাহিক রান সংগ্রহ এবং গ্লোবাল সুপার লিগে নেতৃত্বে সফলতার কারণে তার পারফরম্যান্সের যথেষ্ট প্রশংসা হয়েছে। জাতীয় দলে না থাকলেও ঘরোয়া ক্রিকেট তাকে প্রাণবন্ত রাখছে।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে আক্ষেপ

৩১ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার জানালেন, জাতীয় দলের দরজা বন্ধ থাকলে তার ক্যারিয়ারের অন্য রকম গতিবিধি হতে পারত। তিনি চান দেশের প্রতিনিধিত্ব করে নিজের ক্রিকেট জীবনের সেরা সময় কাটাতে। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় জাতীয় দলের জন্যই খেলতে চাই। জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাওয়া আমার কাছে সব থেকে বড় প্রাপ্তি। তাই যখনই মনে হবে সেই সুযোগ থাকবে না, তখন হয়তো আমার ক্রিকেট জীবনেরও ইতি টানতে হবে।’

নুরুল হাসানের প্রতি সমর্থন ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতার মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটাররা উঠে আসছে। এর মধ্যেও ঘরোয়া এবং বিভিন্ন ফরম্যাটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখানো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হিসেবে সোহানের অবস্থান গুরুত্ব বহন করে। তার দক্ষতা এবং নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা জাতীয় দলের জন্য খুব প্রয়োজনীয় হতে পারে, বিশেষ করে টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাটে।

ক্রিকেটবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাতীয় দলে দীর্ঘ সময় না থাকা সত্ত্বেও সোহান ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলছেন এবং সময়ের অপেক্ষায়। জাতীয় দলের প্রয়োজন অনুযায়ী তাকে আবারো ডাকা হতে পারে। দেশের হয়ে খেলতে ইচ্ছুক থাকা এবং সর্বদা নিজেকে তৈরি রাখার মানসিকতা তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।