ক্রিকেট

শুধু বাংলাদেশই জয়াসুরিয়াকে শূন্য হাতে ফেরাতে পেরেছে, সেটাও তিনবার

২০২৫ সালের ১৯ জুন — গল স্টেডিয়াম তথা শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক ভেন্যু, যেখানে বাঁহাতি স্পিনার প্রবাত জয়াসুরিয়ার মায়াজাল এত গভীর যে, এই মাঠ তাকে ‘মহারাজা’ হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। তার ক্যারিয়ারের ২১তম টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ৮০ উইকেট এসেছে গলের মাটিতে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, শ্রীলঙ্কার এই স্পিনারকে তিনবার শূন্য উইকেটে ফিরিয়ে দিয়েছে একমাত্র বাংলাদেশ।

গলের মাটিতে জয়াসুরিয়ার অসাধারণ সাফল্য

প্রবাত জয়াসুরিয়া ২০২২ সালের জুলাই মাসে গলে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। এরপর থেকে ২১টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১১৬টি উইকেট নিয়েছেন, যার মধ্যে গলে ৮০ উইকেট। গলেই তিনি ইনিংসে ৭ উইকেট (৭/৫২) এবং ম্যাচে ১২ উইকেট (১২/১৭৭) নেন যা তার সেরা বোলিং রেকর্ড। টেস্ট ক্যারিয়ারে তার গড় বোলিং গড় ৩১.৪১ হলেও গলে তা কমে ২৫.৮১। ১১টি পাঁচ উইকেটের ইনিংসের মধ্যে ৯টি এসেছে গলের মাটিতে। এছাড়াও, ১০ উইকেট নেওয়ার দুটি ম্যাচও গলে। এ কারণে তাঁকে গলের ‘মহারাজা’ বলা হয়।

বাংলাদেশ শুধু জয়াসুরিয়াকে শূন্য হাতে ফেরানোর গৌরব অর্জন করেছে

গল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দুর্দান্তভাবে জয়াসুরিয়াকে মোকাবিলা করেছে। ২০২৫ সালের গল টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছে ৪৯৫ রান। এই ইনিংসে প্রবাত জয়াসুরিয়া উইকেট পাননি, যা তার ক্যারিয়ারে গলে প্রথমবারের মতো। ৪৮ ওভার বোলিং করে ১৫৪ রান খরচ করে উইকেটশূন্য থেকেছেন তিনি।

গোল দিয়ে তার পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩৮ ইনিংসে বোলিং করেছেন, যার মধ্যে মাত্র তিন ইনিংসে উইকেটশূন্য ছিলেন এবং তার তিনটি ইনিংসেই প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। গত বছর মার্চে সিলেটে অনুষ্ঠিত সিরিজে জয়াসুরিয়া দুই ইনিংসেই উইকেট পাননি।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কৌশল ও শক্তি

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা স্পষ্টভাবে বুঝে নিয়েছে গলের বাঁহাতি স্পিনারকে কিভাবে মোকাবিলা করতে হয়। চলতি ও আগের বছর অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজগুলোতে জয়াসুরিয়ার সামনে স্থির থেকেছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। তাই এই স্পিনারকে শূন্য হাতে ফেরানো হয়েছে তিনবার।

অন্য দেশের বিপক্ষে জয়াসুরিয়ার পারফরম্যান্স

জয়াসুরিয়ার অন্যান্য দেশের বিপক্ষে বোলিং পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যায় তার দক্ষতা কতটা প্রখর। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ টেস্টে ৮ উইকেট, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১ টেস্টে ৮ উইকেট, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ টেস্টে ২৬ উইকেট, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সমান সংখ্যক ইনিংসে ২২ উইকেট, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ টেস্টে ২১ উইকেট, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২ টেস্টে ১০ উইকেট নিয়েছেন তিনি।

জয়াসুরিয়ার বোলিং কৌশল ও দক্ষতা

প্রবাত জয়াসুরিয়ার বোলিং কৌশল মাটির ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। গলের মাটিতে মৃদু টেম্পারেচার এবং আর্দ্র পরিবেশ তাকে বাঁকানোর সুযোগ দেয় যা শত্রুর ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। তার দৃষ্টিনন্দন ডেলিভারি এবং ধারাবাহিকতা তাকে গলের অন্যতম ভয়ঙ্কর স্পিনার বানিয়েছে।

গলের টেস্টে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অর্জন

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে গলের মাটিতে জয় আসা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে প্রবাত জয়াসুরিয়ার মতো স্পিনারদের বিরুদ্ধে টেক্কা দেওয়া বড় কথা। তিনবার জয়াসুরিয়াকে শূন্য হাতে ফেরানোর কৃতিত্ব বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।

এই সাফল্য বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশ গলে উইকেট হারিয়ে পরাজিত হলেও স্পিনারদের সামনে দৃঢ়তা দেখানো তার ভবিষ্যত জন্য আশার বাণী।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এখন স্পিন বোলিংয়ের কৌশল উন্নত করতে কাজ করছে, যাতে গলের মতো মাটিতে আরও ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায়। প্র্যাকটিসে বাঁহাতি স্পিনারদের সঠিক ব্যাটিং পরিকল্পনা তৈরি করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

গলের মাটিতে প্রবাত জয়াসুরিয়ার রেকর্ড অসাধারণ, কিন্তু তার ওপর জয় তুলে নেয়া বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। শুধু জয়াসুরিয়াকে শূন্য হাতে ফেরানোই নয়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা শ্রীলঙ্কার এই স্পিনারকে প্রতিহত করে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের অস্তিত্ব আরও মজবুত করেছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এই ঘটনা স্মরণীয় হয়ে থাকবে, যেখানে গলের ‘মহারাজা’ কে তিনবার শূন্য হাতে ফেরানোর গৌরব অর্জন করেছে এক মাত্র বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে এই কৃতিত্ব আরও বড় হতে পারে যদি বাংলাদেশ গলের মাটিতে আরও শক্তিশালী হয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button