মুশফিকুর রহিম শততম টেস্টের আগে ডাবল সেঞ্চুরির আক্ষেপ

বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মুশফিকুর রহিম আবারও প্রমাণ করলেন, বয়স ৩৮ পেরোলেও তিনি হার মানেননি। যদিও সাম্প্রতিক গল টেস্টে ১৬৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পর ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন পূরণ হয়নি—আসিতা ফার্নান্দোর বলে এলবিডব্লু হয়ে ফেরায় এই স্বপ্ন আপাতত আক্ষেপেই শেষ হয়েছে—তবে সেই ইনিংসটি মুশফিককে নতুন প্রাণ দিয়েছে।
এই ইনিংসের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে গেছে, তার শততম টেস্ট খেলার লক্ষ্যে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। চলতি বছরই বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলতে পারেন তিনি।
গল টেস্টে মুশফিকের আত্মবিশ্বাসের ফেরত
গত বছর রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯১ রানের স্মরণীয় ইনিংস খেলার পর থেকে মুশফিকের ব্যাটে যে পতন দেখা দিয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠা সহজ ছিল না। টানা ১৩ ইনিংসে কোনো ফিফটি না পাওয়ায় তাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে ক্রিকেট বোর্ড ও নির্বাচকরা আস্থা রেখেছিলেন মুশফিকের অভিজ্ঞতায়।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বলেছেন, “মুশফিক আমাদের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। তার ওপর আস্থা ছিল বলেই তাকে রেখেছি। কোনো ক্রিকেটারের খারাপ সময় আসে, মুশফিকেরও এসেছে, তবে সে ফিরে আসবে, সেই অপেক্ষা ছিল।”
গলের কঠিন উইকেটে মুশফিকের ১৫০ ছোঁয়া ও ১৬৩ রানের দীর্ঘ ইনিংস সেই আস্থার স্বীকৃতি দিলো। ২৬৪ রানের জুটি গড়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেনকে সহায়তা করায়, বাংলাদেশের স্কোর ৪৫০ এর ওপরে নিয়ে গেছেন তিনি।
মুশফিকের ক্যারিয়ারের এক নতুন অধ্যায়
২০০৫ সাল থেকে জাতীয় দলের জন্য খেলা মুশফিকুর রহিম এখন মাত্র তিনটি টেস্ট দূরে তাঁর ক্যারিয়ারের সোনালী অধ্যায় স্পর্শ করতে চলেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাতটি ফরম্যাট মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১টি সেঞ্চুরির মালিক এই ব্যাটসম্যান।
যদিও টানা অসফলতার কারণে গুঞ্জন উঠেছিল তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার, তবুও নির্বাচকরা তাঁর অভিজ্ঞতা ও মানসিকতা গুরুত্ব দিয়েছেন। মুশফিক শুধু নিজে খেলছেন না, জুনিয়র ক্রিকেটারদের পরামর্শদাতা হিসেবেও দলের জন্য কাজ করছেন। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি সতীর্থদের উন্নতিতে অবদান রাখছেন।
সামনে অপেক্ষা করছে আয়ারল্যান্ড সিরিজ ও শততম টেস্ট
নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশের হোম সিরিজে তিনটি ওয়ানডে, তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মুশফিকের শততম টেস্ট খেলার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক বিরল ও গৌরবের ঘটনা হবে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি সিরিজের পর গল, তারপর আয়ারল্যান্ডের প্রথম টেস্ট—এই তিনটি ম্যাচ যদি পরিকল্পনা মতো হয় এবং মুশফিক সুস্থ থাকেন, তবে শততম টেস্ট খেলার পর মুশফিকের জন্য নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
মুশফিকের টানা নার্ভাস নাইনটি এবং তার মানসিক শক্তি
মুশফিকের ক্যারিয়ারে সাতবার নার্ভাস নাইনটিতে আউট হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। ওয়ানডেতে একবার ৯৮ রান করে অপরাজিত থেকেছেন। এই পরিস্থিতি যে তাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলেনি, বরং প্রতিটি চ্যালেঞ্জে ফেরার লড়াই চালিয়েছেন, সেটাই দেখিয়েছেন তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স।
নির্বাচক ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের আস্থা
গাজী আশরাফ হোসেন বলেছেন, “মুশফিকের অভিজ্ঞতা আমাদের দলকে শক্তিশালী করে। মাহমুদউল্লাহ আগে টেস্ট ক্রিকেট ছেড়েছেন, সাকিব ও তামিম নেই, সেই অবস্থায় মুশফিকই একমাত্র অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, যার ছায়ায় দল বড় হতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুশফিকের দৃষ্টান্ত অন্য ক্রিকেটারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের ওঠানামা থেকে শেখা যায় কীভাবে কঠিন সময় কাটিয়ে ফিরে আসা যায়, সেই মানসিকতা ধরে রাখা যায়।
মুশফিকের ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও দলীয় ভূমিকা
ক্রিকেট মাঠে তাঁর অবদান ছাড়াও মুশফিক এখন জুনিয়র ক্রিকেটারদের মেন্টর হিসাবে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। নিজের খেলাকে ছাড়িয়ে দলের উন্নয়নের জন্য পরামর্শ দেওয়া তাঁর নতুন লক্ষ্য।
একসময় যেখানে শুধু নিজের খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন, এখন নিজের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চাইছেন দলের সবাইকে। এভাবেই মুশফিক তরুণ ক্রিকেটারদের মানসিক ও টেকনিক্যাল উন্নতিতে সাহায্য করছেন।
মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন আর শততম টেস্টের আশা
গলের ১৬৩ রানের ইনিংস দিয়ে মুশফিকুর রহিম প্রমাণ করেছেন, তার ক্রিকেট জীবনের চমৎকার অধ্যায় এখনও শেষ হয়নি। যদিও ডাবল সেঞ্চুরি হয়নি, তার আগ্রহ, অধ্যবসায় ও অভিজ্ঞতা যেন নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
শততম টেস্ট খেলার স্বপ্ন এখনো পূর্ণতা পায়নি, কিন্তু এই পথে হাঁটতে থাকা মুশফিক বাংলাদেশের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। তাঁর লড়াই, ধারাবাহিকতা ও নেতৃত্ব বাংলাদেশ ক্রিকেটকে শক্তিশালী করে তুলবে ভবিষ্যতে।