আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হারের রেকর্ডে শীর্ষে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বিব্রতকর এক রেকর্ডে পৌঁছেছে। পাকিস্তানের মাটিতে সদ্যসমাপ্ত তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পরপরই এই রেকর্ডটি গড়েছে টাইগাররা। এখন পর্যন্ত ১৮৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ হেরেছে ১১২টি ম্যাচে, জয় এসেছে মাত্র ৭২টিতে। এর ফলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সর্বোচ্চ পরাজয়ের তালিকায় এক নম্বরে উঠে এসেছে লাল-সবুজের দল।
লজ্জার এই রেকর্ডে কারা কারা পিছনে?
বাংলাদেশের পরে সর্বোচ্চ হার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়রা ২১৮ ম্যাচে অংশ নিয়ে হার দেখেছে ১১০ বার। তৃতীয় স্থানে আছে শ্রীলঙ্কা, যাদের হার ১০৯টি ২০৩ ম্যাচে। এরপর রয়েছে পাকিস্তান (১০৫ হার) ও জিম্বাবুয়ে (১০৩ হার)।
এই পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে দেখায়, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে পরাজয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির এক অপ্রত্যাশিত ধারায় চলেছে, যা সমর্থকদের মনে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে।
হারের শতকেও প্রথম বাংলাদেশ!
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম দল হিসেবে ১০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারার রেকর্ডও রয়েছে বাংলাদেশের নামেই। গত বছর, ২৩ মে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে এক ম্যাচে হারার মাধ্যমে সেই ‘মাইলফলক’ অতিক্রম করে বাংলাদেশ। এখন সেই সংখ্যা পৌঁছেছে ১১২-তে।
শেষ জয় কবে, কোথায়?
বাংলাদেশ সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল চলতি বছর মে মাসে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছিল টাইগাররা। যদিও সেটি ঘরের মাঠে এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ছিল, সেই সিরিজের পর থেকেই জয় খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে টাইগারদের জন্য।
পাকিস্তানে হোয়াইটওয়াশের ছোবল
সর্বশেষ পাকিস্তান সফরেই বাংলাদেশ তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারে। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং—সব বিভাগেই ছিল হতাশাজনক পারফরম্যান্স। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সিরিজ শেষে বলেন, “দল হিসেবে আমরা একসঙ্গে খেলতে পারছি না, আমাদের স্কিল নিয়ে কাজ করার সময় এখনই।”
রেকর্ডটি বদলাবে কবে? সম্ভাবনা কমই!
অনেকেই আশায় ছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা শ্রীলঙ্কা যদি তাদের পরবর্তী সিরিজগুলোতে হারে, তাহলে হয়তো এই লজ্জার রেকর্ড টাইগারদের হাত থেকে যাবে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইংল্যান্ড সফরে ৩-০ ব্যবধানে হারার সম্ভাবনা থাকলেও তা নিশ্চিত নয়। অপরদিকে, শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের সাথেই জুলাইয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে। সেখানে লঙ্কানদের রেকর্ড পরিবর্তনের সম্ভাবনাও সীমিত।
বিশ্লেষকদের চোখে এই ব্যর্থতার কারণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ দলের দীর্ঘদিনের কয়েকটি বড় সমস্যা এখনো সমাধান হয়নি, যার মধ্যে অন্যতম হলো—
- টিম ম্যানেজমেন্টের অস্থিরতা: কোচিং স্টাফের পরিবর্তন, অধিনায়কত্বের বারবার হাতবদল, এবং খেলোয়াড় নির্বাচনে একধরনের এলোমেলো ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
- অভিজ্ঞ ও তরুণদের সমন্বয়হীনতা: দীর্ঘদিন ধরে দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানরা ছন্দে নেই। আবার নতুনদের যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না।
- মাঝের ওভারগুলোতে রান চাপ: ৭ থেকে ১৫ ওভারের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সাধারণত খুব ধীরে খেলে, যা বড় সংগ্রহে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
- ফিনিশিং দুর্বলতা: ইনিংসের শেষ দিকে দ্রুত রান তুলতে না পারা ও উইকেট হারানো বাংলাদেশের পুরনো সমস্যা।
কি বলছে পরিসংখ্যান?
এক ঝলকে দেখুন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড (২০২৫ পর্যন্ত):
ম্যাচ সংখ্যা | জয় | হার | জয় শতাংশ |
---|---|---|---|
১৮৮ | ৭২ | ১১২ | ৩৮.৩০% |
ভবিষ্যৎ সূচি: আশার আলো নাকি নতুন দুঃস্বপ্ন?
বাংলাদেশের সামনে এখন রয়েছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ, এরপর এশিয়া কাপ এবং তারপরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৬-এর প্রস্তুতি। এই তিনটি পর্বই টাইগারদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে বড় সুযোগ হতে পারে, আবার ব্যর্থ হলে সমালোচনা আরও বেড়ে যেতে পারে।
সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া: ক্ষোভ ও হতাশা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ দলের এই পারফরম্যান্স নিয়ে চলছে চরম ক্ষোভ। টুইটার, ফেসবুক, ইউটিউবে ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রশ্ন তুলেছেন, “কতদিন এভাবে চলবে?” কেউ কেউ বলছেন, “দলে বড় ধরনের সংস্কার দরকার।” আবার অনেকে দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দিকেই আঙুল তুলেছেন, দল নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং গঠনমূলক পরিকল্পনার অভাবে আজ এই অবস্থায় বাংলাদেশ।