হারিসের সেঞ্চুরিতে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ: পাকিস্তানের দাপুটে জয়

পাকিস্তানের ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের জন্য ছিল শুধুই হতাশা। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আগেই সিরিজ হাতছাড়া করার পর শেষ ম্যাচে অন্তত সম্মান রক্ষার লড়াই ছিল লাল-সবুজের। কিন্তু মোহাম্মদ হারিসের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে সেই আশাও শেষ পর্যন্ত বৃথা গেছে। শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ।
এই ম্যাচে হারিসের ব্যাট থেকে এসেছে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। ৪৬ বলে ৮টি চার ও ৭টি ছক্কায় সাজানো ১০৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান ১৬ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়।
ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের দুর্দান্ত শুরু
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ শুরুটা চমৎকার করে। ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসান তামিম আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানি বোলারদের চাপে ফেলে দেন শুরু থেকেই। দুজনের জুটিতে মাত্র ১০.২ ওভারে আসে ১১০ রান।
তবে ওপেনিং জুটির সমাপ্তি ঘটে ১১তম ওভারে, যখন তানজিদ ৩৪ বলে ৪২ রান করে আউট হন। কিছুক্ষণ পরেই ৩৭ বলে ৬৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন পারভেজ হোসেন ইমন। দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে গতি কিছুটা কমে আসে।
লিটনের ব্যর্থতা, শেষ ওভারে ভালো ফিনিশ
অধিনায়ক লিটন দাস এদিনও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন। ১৮ বলে ২২ রান করে তিনিও আউট হয়ে যান। তবে মিডল অর্ডারে আফিফ হোসেন (১৯ বলে ২৯ রান) ও মাহমুদউল্লাহ (১২ বলে ২১ রান) দ্রুত রান তুলে দলকে ভালো পুঁজি এনে দেন।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ১৯৬ রান—যা টি-টোয়েন্টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ স্কোর বলেই ধরা হচ্ছিল।
হারিসের ব্যাটে সব শেষ
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় পাকিস্তান। শাহিবজাদা ফারহান ৫ রান করে ফিরে গেলে বাংলাদেশ কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। কিন্তু এরপরই আসে বিপর্যয়। মোহাম্মদ হারিস ও সাইম আইয়ুব দ্বিতীয় উইকেটে ৯২ রানের জুটি গড়ে জয়ের ভিত্তি তৈরি করেন।
আইয়ুব ৩০ বলে ৪৫ রান করে আউট হলেও হারিসের ব্যাট যেন থামতেই চাইছিল না। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মাত্র ৪৫ বলে তুলে নেন নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। তাকে সঙ্গ দিতে এসেছিলেন হাসান নওয়াজ, যিনি মাত্র ১২ বলে ২৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন।
শেষ পর্যন্ত হারিসের অপরাজিত ১০৭ রানে ভর করে পাকিস্তান মাত্র ১৭.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
মেহেদীর বোলিংয়ে কিছুটা সান্ত্বনা
বাংলাদেশের হয়ে বোলিংয়ে সবচেয়ে সফল ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি ৪ ওভারে ২ উইকেট তুলে নেন। এছাড়া তানজিম হাসান সাকিব পান ১টি উইকেট। তবে বাংলাদেশের বোলারদের কেউই হারিসকে রুখে দিতে পারেননি।
ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি, কোথায় ঘাটতি?
এই হোয়াইটওয়াশের ফলে আরও একবার প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল নির্বাচন ও কৌশল নিয়ে। তিন ম্যাচেই ব্যাটিং ও বোলিংয়ে অসামঞ্জস্য দেখা গেছে। ব্যাটসম্যানরা ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন, আর বোলাররা বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরি করতে পারেননি।
বিশেষ করে, বোলিং ইউনিট পুরো সিরিজেই ছিল অনুপ্রাণিত। মুস্তাফিজুর রহমান কিংবা তাসকিন আহমেদের মতো অভিজ্ঞ পেসাররা দলে না থাকায় বোলিংয়ে lacked নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ।
পরিসংখ্যান বলছে হতাশার গল্প
সিরিজের তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করেছে। তিনটি ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল যথাক্রমে—১৬১, ১৮০ এবং ১৯৬ রান। কিন্তু প্রতিবারই পাকিস্তান অনায়াসেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
মোহাম্মদ হারিস তিন ম্যাচে ২০০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন এবং হয়েছেন সিরিজের সেরা খেলোয়াড়। আর বাংলাদেশের কেউই পুরো সিরিজে একাধিক ম্যাচে ধারাবাহিক ভালো পারফর্ম করতে পারেননি।
সামনে কী করণীয় বাংলাদেশের?
এই সিরিজের পর বাংলাদেশ দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো—টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার জন্য বোলিং আক্রমণ শক্তিশালী করতেই হবে। একইসঙ্গে মিডল ও ডেথ ওভারে ব্যাটিং গতি ধরে রাখতে আরও আক্রমণাত্মক মানসিকতা দরকার।
দলের ব্যর্থতা নিয়ে কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে বলেন, “আমরা ব্যাটিংয়ে উন্নতি করলেও বোলিংয়ে যথেষ্ট ধার ছিল না। আমাদের স্কিল ও পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল, সেটা স্বীকার করতেই হবে।”
এই হোয়াইটওয়াশ আবারও বুঝিয়ে দিল, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে শুধু প্রতিভা নয়, দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও দক্ষতাও। বাংলাদেশের সামনে এখন সুযোগ রয়েছে ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আসন্ন সিরিজগুলোতে ঘুরে দাঁড়ানোর।