খেলা

বিসিবির নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-এর নেতৃত্বে আবারও এসেছে পরিবর্তনের হাওয়া। এবার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। পরিচালকদের অনাস্থার প্রেক্ষাপটে ফারুক আহমেদ পদচ্যুত হওয়ার পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন বুলবুল। দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করলেও এবার দেশের ক্রিকেট প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে ফিরলেন তিনি।

অনাস্থার পেছনের কাহিনি

গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বিসিবির পরিচালক পদ থেকে ফারুক আহমেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়। এর ফলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিসিবির সভাপতি হিসেবে থাকার যোগ্যতা হারান। মূলত বোর্ডের আটজন পরিচালকের আনুষ্ঠানিক অনাস্থা প্রস্তাবই এই পরিবর্তনের মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।

বোর্ড পরিচালকদের অভিযোগ ছিল, ফারুক আহমেদ যথাযথ নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং তাঁর অধীনে বিসিবির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জবাবদিহির অভাব ছিল। এসব কারণে পরিচালকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তাঁরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে অনাস্থা জানান।

বুলবুলের পথচলা: মাঠ থেকে বোর্ডরুম

আমিনুল ইসলাম বুলবুল দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় নাম। ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে তিনি ইতিহাস গড়েন। খেলার মাঠে নেতৃত্বের ছাপ রেখে তিনি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রশাসনে কাজ করে আসছিলেন। আইসিসির গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট বিস্তারে অবদান রেখেছেন।

বিসিবির পরিচালকদের মতে, তাঁর অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও আন্তর্জাতিক সংযোগই তাঁকে নেতৃত্বের জন্য আদর্শ প্রার্থী করে তোলে।

নতুন পরিচালনা পর্ষদের রূপরেখা

শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পরিচালকদের জরুরি বৈঠকে নতুন নেতৃত্ব গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে পরিচালকদের সরাসরি ভোটে সভাপতি হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুল নির্বাচিত হন। পাশাপাশি নাজমুল আবেদীন ফাহিম সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ফাহিম সিনহা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে এক পরিচালক বলেন, “আমরা এমন একজন নেতার খোঁজে ছিলাম, যিনি ক্রিকেট বুঝেন, নেতৃত্ব দিতে পারেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম। বুলবুল ভাই তেমনই একজন।”

নেতৃত্ব বদলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বিসিবিতে নেতৃত্ব পরিবর্তনের এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। এর পেছনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রভাবও কম নয়। গত বছরের আগস্টে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় বিসিবির পরিচালক হন ফারুক আহমেদ। সেখান থেকেই সভাপতি পদে নির্বাচিত হন তিনি। তবে মাত্র ৯ মাসের মাথায় এই দায়িত্ব হারাতে হলো তাঁকে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিসিবিতে এখন যে নেতৃত্ব এসেছে তা ক্রিকেট প্রশাসনে নতুন ধারা এবং স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে পারে। তবে একে সফল করতে হলে শুধু নেতৃত্ব পরিবর্তন নয়, প্রয়োজন হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন।

নতুন সভাপতির অগ্রাধিকার

বুলবুলের প্রথম কাজ হবে বোর্ডে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং ক্রিকেটের সব স্তরে জবাবদিহির একটি কাঠামো তৈরি করা। তাঁর ঘোষিত অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে—

  1. দেশজ ক্রিকেট কাঠামো সংস্কার: প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, এনসিএল এবং বিসিএলের মান উন্নয়ন ও কাঠামোগত সংস্কারে মনোযোগ দেবেন তিনি।
  2. যুব উন্নয়ন কার্যক্রম: অনূর্ধ্ব-১৯ ও বয়সভিত্তিক দলগুলোকে আরও কার্যকর ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা করবেন।
  3. আন্তর্জাতিক সফরের পরিকল্পনা: সুষ্ঠু ও কার্যকর আন্তর্জাতিক সফর পরিকল্পনার মাধ্যমে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স উন্নয়ন।
  4. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি: বিসিবির বিভিন্ন শাখায় স্বচ্ছতা এবং পরিচালনায় পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা।

প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ

নতুন নেতৃত্বে দেশের ক্রিকেটে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার নতুন দিগন্ত খুলবে বলেই আশাবাদী ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। বিপিএল পরিচালনা, ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ, অব্যবস্থাপনা—এসব সমস্যা অনেক দিন ধরেই বিসিবিকে পেছনে টানছে।

বুলবুলের নেতৃত্বে যদি একটি নিরপেক্ষ ও দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতের ক্রিকেট পরিচালনা আরও কার্যকর হতে পারে। তবে তার জন্য প্রয়োজন দলগত প্রচেষ্টা এবং রাজনীতিমুক্ত একটি পরিবেশ।

সমাপ্তি

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে নেতৃত্বের এই পালাবদল একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। একজন সাবেক ক্রিকেটার, যিনি মাঠে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন এবং পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট প্রশাসনে কাজ করেছেন, তাঁর নেতৃত্ব বিসিবিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা এবং ক্রিকেট অন্তর্দৃষ্টি দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সবাই।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button