খেলাক্রিকেট

হারের দায় শিশিরকে দিলেন লিটন

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক পরাজয়ে স্তব্ধ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আরব আমিরাতের কাছে পরাজিত হয়েছে একটি টেস্ট খেলুড়ে দল। আর এই হারের পর দলীয় অধিনায়ক লিটন দাস ম্যাচশেষে দায় দিলেন শিশিরকে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—শুধু শিশির দায়ী, নাকি বল হাতে দায়িত্বহীন পারফরম্যান্সই ছিল হারের মূল কারণ?

শারজাহতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে শুরুটা দারুণ ছিল। ব্যাটাররা একের পর এক রান তুলতে থাকেন এবং নির্ধারিত ২০ ওভারে ২০৫ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে এমন স্কোর সাধারণত প্রতিপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত, তাও এক বল হাতে রেখেই এবং মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে।

ইতিহাসের পাতায় আমিরাত

এই জয় আমিরাতের জন্য অনেকদিক থেকেই বিশেষ। প্রথমবারের মতো তারা হারাল কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে। একইসাথে, এত বড় লক্ষ্য তাড়া করে জয় পাওয়াও ছিল আমিরাতের ইতিহাসে এক অনন্য অর্জন। ম্যাচের পর আমিরাত অধিনায়ক মুহাম্মদ ওয়াসিম বলেন, “আমার ভাষা নেই এই অনুভূতি প্রকাশ করার। বাংলাদেশকে হারাতে পেরে আমরা গর্বিত।” তিনি আরও বলেন, “এই কন্ডিশন আমাদের খুব ভালো জানা ছিল। দল খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল রান তাড়ায়।”

লিটনের বক্তব্য: শিশির ফ্যাক্টর

ম্যাচশেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে লিটন দাস বলেন, “আমরা ভালো ব্যাট করেছি, উইকেট ভালো ছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছে যখন তারা ব্যাট করেছে, শিশিরের সুবিধা পেয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আপনাকে বুঝতে হবে যখন এই ধরনের মাঠে খেলবেন, শিশির একটা বড় ফ্যাক্টর— আপনি যখন বল করবেন, তখন হিসাব কষতে হবে।”

তবে বিশ্লেষকদের মতে, শিশির একটি প্রাকৃতিক উপাদান হলেও, ২০৫ রানের লক্ষ্য রক্ষা করতে না পারা কেবল আবহাওয়াকে দোষ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। বরং, পরিকল্পনায় ঘাটতি, বোলারদের লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে না পারা, এবং ক্যাচ মিস ইত্যাদি ছিল বড় কারণ।

বল হাতে হতাশা

বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট এদিন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ ছিল বলা যায়। পেসার নাহিদ রানার টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল এই ম্যাচ দিয়ে। ৪ ওভারে ২ উইকেট নিলেও খরচ করেন ৫০ রান, যা টি-টোয়েন্টির প্রেক্ষাপটে বিপজ্জনক। লিটন নিজেও ম্যাচ শেষে স্বীকার করেছেন, “আমরা তার কাছ থেকে আরও ভালো কিছু আশা করেছিলাম। তবে ক্রিকেটে ভালো-মন্দ দিন থাকেই।”

অন্যান্য বোলাররাও ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ কিংবা সাকিব আল হাসান কেউই প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের চাপে ফেলতে পারেননি। আমিরাতের ওপেনিং জুটি মুহাম্মদ ওয়াসিম ও মুহাম্মদ জুহাইব ১০৭ রানের জুটি গড়ে নেন মাত্র ৯.৫ ওভারে, যা মূলত বাংলাদেশের হারের ভিত্তি গড়ে দেয়।

টিম ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, এমন হারের পর দলীয় ম্যানেজমেন্টকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। শিশির নিয়ে আগেভাগে পরিকল্পনা না থাকায় এবং পেসারদের উপযুক্তভাবে গাইড করতে না পারায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। এ ধরনের কন্ডিশনে কীভাবে বল করতে হয়, সেটা নিয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা ছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

লজ্জার হার, ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা

এই হারে বাংলাদেশ হারাল শুধু একটি ম্যাচ নয়, হারাল আত্মবিশ্বাস ও একটি শক্ত অবস্থান। আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়েও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে বিশ্বকাপের বছরে এ ধরনের হারের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।

তবে এই হার হতে পারে একটি জাগরণের বার্তা, যদি দল এখান থেকে শিক্ষা নেয় এবং ভবিষ্যতের জন্য শক্ত পরিকল্পনা করে। লিটন দাসের নেতৃত্বেও আছে সম্ভাবনা, তবে তার উচিত হবে দায়ভার ভাগাভাগি করে নেওয়া এবং দলের সবাইকে নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়া।

উপসংহার

বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই হার নিঃসন্দেহে একটি বড় ধাক্কা। তবে একে শুধুমাত্র শিশিরের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। প্রয়োজন বাস্তব বিশ্লেষণ, বোলারদের দায়িত্বশীলতা, এবং কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা। ক্রিকেটে হার-জয় থাকবেই, তবে সেটিকে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে উন্নতির পথ তৈরি করাই একটি পেশাদার দলের কাজ হওয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button