পিএসএলে লাহোরের হয়ে খেলবেন সাকিব

পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) চলতি আসরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম সাকিব আল হাসানকে দেখা যাবে লাহোর কালান্দার্সের জার্সিতে। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি, এমনটাই জানা গেছে পিএসএলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে। যদিও লাহোর কালান্দার্সের পক্ষ থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী সাকিব এবারের আসরের বাকি অংশে খেলার জন্য প্রস্তুত।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে এক পর্যায়ে স্থবির হয়ে পড়েছিল দুই দেশের জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ – ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এবং পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে লিগ দুটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এমনকি বিকল্প ভেন্যুতে আয়োজনের চেষ্টা করেও প্রাথমিক পর্যায়ে সফলতা আসেনি। তবে ক্রিকেট ভক্তদের জন্য সুখবর, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আবারও মাঠে গড়িয়েছে এই দুই জনপ্রিয় লিগ।
এই অপ্রত্যাশিত বিরতি এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজিকেই খেলোয়াড় সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা শঙ্কাসহ বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় চলমান আসরের জন্য নিজ নিজ ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে আর যুক্ত থাকতে পারছেন না। ফলে দলগুলো বাধ্য হচ্ছে নতুন করে খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেই লাহোর কালান্দার্স তাদের স্কোয়াডে শক্তি বাড়াতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দিকে হাত বাড়িয়েছে।
লাহোর কালান্দার্স, যারা পিএসএলের অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত, তাদের মিডল অর্ডার ব্যাটিং এবং প্রয়োজনে স্পিন বোলিং আক্রমণে একজন অভিজ্ঞ ও কার্যকর খেলোয়াড়ের প্রয়োজন ছিল। সাকিব আল হাসান নিঃসন্দেহে সেই চাহিদা পূরণের জন্য আদর্শ পছন্দ। ব্যাট হাতে যেমন তিনি দলের প্রয়োজনে রান তুলতে পারেন, তেমনি বল হাতেও প্রতিপক্ষের রানের গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে উইকেট তুলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তার অন্তর্ভুক্তিতে লাহোর কালান্দার্সের শক্তি এবং খেলার গভীরতা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
পিএসএলে সাকিব আল হাসানের খেলার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। এর আগেও তিনি এই লিগে খেলেছেন এবং নিজের জাত চিনিয়েছেন। পিএসএলের ইতিহাসে তিনি মোট ১৪টি ম্যাচ খেলেছেন। এই ম্যাচগুলোতে ব্যাট হাতে তিনি ১৮১ রান সংগ্রহ করেছেন। তার ব্যাটিং গড় ১৬.৩৬ এবং স্ট্রাইক রেট ১০৭.১৪। পরিসংখ্যান খুব বেশি সমৃদ্ধ না হলেও, ব্যাট হাতে তার ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলার সামর্থ্য সকলেরই জানা। অন্যদিকে, বল হাতে সাকিব পিএসএলে বেশ সফল। ১৪ ম্যাচে তিনি ৮টি উইকেট শিকার করেছেন। ইকোনোমি রেট ছিল ঈর্ষণীয়, মাত্র ৭.৩৯। টি-টোয়েন্টির মতো দ্রুত গতির ফরম্যাটে এমন ইকোনোমি রেট একজন বোলারের কার্যকারিতাই প্রমাণ করে।
২০১৬ সালে পাকিস্তান সুপার লিগের উদ্বোধনী আসরে সাকিব আল হাসানের অভিষেক হয়েছিল করাচি কিংসের হয়ে। সেবার তিনি তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বেশ কিছু ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি পেশোয়ার জালমির হয়েও পিএসএলে খেলেছেন। পেশোয়ারের হয়েও তার পারফরম্যান্স ছিল উল্লেখযোগ্য। ফলে পিএসএলের কন্ডিশন এবং খেলার ধরন সম্পর্কে সাকিবের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা লাহোর কালান্দার্সকে সাহায্য করবে।
পিএসএলের মাঝপথে সাকিবের লাহোর কালান্দার্সে যোগ দেওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তদের জন্যও অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। দেশের সেরা খেলোয়াড়কে বিশ্বের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে দেখা সবসময়ই গর্বের বিষয়। তাছাড়া, এই লিগে খেলার মাধ্যমে সাকিব তার ফর্ম এবং ফিটনেস ধরে রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য নিজেকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করার সুযোগ পাবেন। পিএসএলের মতো উচ্চ মানের লিগে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তার খেলার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য, সাকিব আল হাসান ছাড়াও এবারের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বাজারে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আরেক টাইগার পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বাকি অংশের জন্য দলে ভিড়িয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। মোস্তাফিজ তার কাটার এবং বৈচিত্র্যময় বোলিং দিয়ে আইপিএলে এর আগেও সাফল্য পেয়েছেন। দিল্লি ক্যাপিটালসে তার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতভাবেই দলটির বোলিং আক্রমণকে আরও শক্তিশালী করবে। সাকিব এবং মোস্তাফিজের মতো তারকা ক্রিকেটারদের বিশ্বের জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও পরিচিত করে তুলছে।
লাহোর কালান্দার্সের এক বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে সাকিবের যোগদানের খবর এলেও, ফ্র্যাঞ্চাইজির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন ক্রিকেট ভক্তরা। আশা করা যায় খুব দ্রুতই এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে এবং সাকিব আল হাসানকে লাহোর কালান্দার্সের মেরুন জার্সিতে মাঠে নামতে দেখা যাবে। পিএসএলের চলতি আসরের বাকি ম্যাচগুলোতে সাকিব আল হাসান তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়ে লাহোর কালান্দার্সকে কতটা সাহায্য করতে পারেন এবং দলের শিরোপা জয়ের পথে কতটা অবদান রাখতে পারেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা লাহোর কালান্দার্সকে বাড়তি সুবিধা দেবে, এমনটাই মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। সব মিলিয়ে, পিএসএলে সাকিবের অন্তর্ভুক্তি এবারের আসরে নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য আরও বেশি উপভোগ্য হবে।