খেলাক্রিকেট

রাজস্থানকে ১০০ রানে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে মুম্বাই

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ২০২৫-এর ৫০তম ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসকে ১০০ রানে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থানে উঠে এলো মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। এই জয়ের মধ্য দিয়ে মুম্বাই তাদের টানা ষষ্ঠ জয় তুলে নিল এবং কার্যত নিশ্চিত করলো প্লে-অফে জায়গা। অন্যদিকে, এই হারের ফলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলো রাজস্থান রয়্যালস।

জয়পুরের সয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় রাজস্থান। সেই সিদ্ধান্ত যে কতটা ভুল ছিল, তা মুম্বাইয়ের ব্যাটিং ঝড়ে প্রমাণ হয়ে গেল। নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে তারা তুলল ২১৭ রান। জবাবে রাজস্থান ১৬.১ ওভারে মাত্র ১১৭ রানেই গুটিয়ে যায়।

ব্যাট হাতে দুর্দান্ত মুম্বাই

মুম্বাইয়ের ইনিংসের নেতৃত্ব দেন দুই ওপেনার—ইশান কিষান ও সূর্যকুমার যাদব। দুইজনেই দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন। ইনিংসের শুরুতেই আগ্রাসী মনোভাব দেখান ইশান, যিনি ৩১ বলে ৫৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। অন্যদিকে, সূর্যকুমার যাদব ৪৯ বলে ৮১ রানের অনবদ্য ইনিংস উপহার দেন, যেখানে ছিল ৯টি চার ও ৩টি ছক্কা।

তাদের জুটিতে আসে ১০৫ রান। শেষদিকে তিলক ভার্মা এবং হার্দিক পান্ডিয়া দ্রুত রান তুলতে থাকেন। তিলক করেন ১৫ বলে ৩২ রান এবং হার্দিক ১০ বলে ২৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। পুরো ইনিংসজুড়েই রাজস্থান বোলারদের ওপর চাপ ছিল। কেউই মুম্বাইয়ের আগ্রাসী ব্যাটারদের থামাতে পারেননি। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট, যিনি ৪ ওভারে ৪৬ রান দেন।

রাজস্থানের ব্যাটিং বিপর্যয়

২১৮ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রাজস্থান শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায়। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ফিরে যান মাত্র ২ রানে। এরপর একে একে উইকেট হারাতে থাকে রাজস্থান। জস বাটলার এবং অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও তা স্থায়ী হয়নি।

বাটলার করেন ২৬ রান এবং স্যামসন ২৩ রান করে আউট হন। বাকি ব্যাটাররা কেউই দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। মুম্বাইয়ের পেস এবং স্পিনের সুনিয়ন্ত্রিত আক্রমণের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে রাজস্থান ব্যাটিং লাইনআপ।

মুম্বাইয়ের হয়ে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন জসপ্রিত বুমরাহ, যিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। এছাড়া পিযুষ চাওলা ২টি এবং জেসন বেহরেনডর্ফ ও আকাশ মাধওয়াল ১টি করে উইকেট দখল করেন। ফিল্ডিংয়েও দুর্দান্ত ছাপ রাখে মুম্বাই, দুটি রানআউট করে ম্যাচের গতি পুরোপুরি নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসে।

পরিসংখ্যান ও পয়েন্ট টেবিল

এই জয়ের ফলে ১১ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে মুম্বাই পৌঁছে গেল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। আরসিবি-ও একই সংখ্যক ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট অর্জন করেছে, তবে নেট রান রেটে অনেক এগিয়ে আছে মুম্বাই। তারা বর্তমানে +1.587 রান রেটে শীর্ষে অবস্থান করছে। অন্যদিকে রাজস্থান রয়্যালস ১১ ম্যাচে মাত্র ৩টি জয় পেয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ৮ নম্বরে অবস্থান করছে। প্লে-অফে যাওয়ার রাস্তা এখন বন্ধ তাদের জন্য।

মুম্বাইয়ের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া ম্যাচ শেষে বলেন, “টানা ছয়টি জয় আমাদের দলের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়িয়েছে। আমরা চাই এই ছন্দটা ধরে রাখতে এবং পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকেই প্লে-অফে প্রবেশ করতে। বোলাররা যেভাবে দায়িত্ব নিয়ে খেলছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।”

রাজস্থানের হতাশা

রাজস্থানের জন্য এই ম্যাচ যেন দুঃস্বপ্নের মতো। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং—কোন বিভাগেই তারা নিজেদের মানদণ্ডে পৌঁছাতে পারেনি। দলের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন অধিনায়ক স্যামসন। তিনি বলেন, “এটা খুবই হতাশাজনক পরিণতি। আমরা আজ ভালো খেলতে পারিনি, সেটা স্বীকার করতে হবে। আগামী মৌসুমে আমরা আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ফিরবো।”

এছাড়াও দলের অস্বস্তিকর পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, রাজস্থানের আইপিএল ২০২৫ মরসুম কেমন যাচ্ছিল। বোলিং ইউনিট বারবার ব্যর্থ হয়েছে এবং মিডল অর্ডার ব্যাটাররা ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি।

মুম্বাইয়ের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ

মুম্বাই তাদের পরবর্তী ম্যাচ খেলবে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে, যেটি টেবিলের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। সেই ম্যাচেও জয় পেলে তারা কার্যত নিশ্চিত করে ফেলবে শীর্ষ দুইয়ে থাকার জায়গা, যেটা কোয়ালিফায়ার ১ খেলার সুযোগ এনে দেবে।

এই মুহূর্তে মুম্বাই দলটি যেভাবে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সব বিভাগে সমন্বয় তৈরি করেছে, তাতে তাদেরকে থামানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলেই মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। হার্দিক পান্ডিয়া, সূর্যকুমার যাদব, বুমরাহ, তিলক ভার্মা সহ একাধিক ফর্মে থাকা খেলোয়াড়রা প্রতিটি ম্যাচে দারুণ অবদান রাখছেন।

উপসংহার

একটি টিম যদি প্রতিটি বিভাগে পরিপূর্ণ পারফরম্যান্স দেয়, তবে তাদের থামানো কঠিন হয়ে পড়ে। মুম্বাই এই মুহূর্তে সেই দল। আর রাজস্থান রয়্যালসের এই হার শুধু তাদের বিদায় নিশ্চিত করেনি, বরং ভবিষ্যতের জন্য বড় প্রশ্নও রেখে দিলো—টানা ব্যর্থতার পরেও দলে কি কোনও বড় পরিবর্তন আসবে?

আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকতা এবং ভারসাম্যই সবকিছু। মুম্বাই তার সেরা উদাহরণ, এবং রাজস্থান তার বিপরীত চিত্র। সামনে এখন শুধু আরও উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই, কারণ প্লে-অফে যাওয়ার লড়াই এখন ঢুকে গেছে চূড়ান্ত পর্যায়ে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button