দিল্লিকে হারিয়ে প্লে-অফের দৌড়ে টিকে রইলো কলকাতা

সুনীল নারিনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সৌজন্যে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ১৪ রানের জয় তুলে নিয়ে আইপিএল ২০২৫-এর প্লে-অফের দৌড়ে টিকে রইলো কলকাতা নাইট রাইডার্স। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত এই হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে আজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বাধীন কলকাতা দল দিল্লিকে ২০৫ রানের লক্ষ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের ১৯০ রানে আটকে দেয়। নারিনের ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত অবদান এবং দলগত প্রচেষ্টায় এই জয় কলকাতার পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান উন্নত করেছে।
ম্যাচের গতিপ্রকৃতি
ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কলকাতার অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে। কলকাতার ওপেনিং জুটি রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং সুনীল নারিন শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাটিং করেন। মাত্র তিন ওভারে তারা ৪৮ রান তুলে ফেলেন। গুরবাজ ১২ বলে ২৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললেও মিচেল স্টার্কের বলে আউট হন। এরপর উইকেটে এসে আজিঙ্কা রাহানে নারিনের সঙ্গে দ্রুত রান তুলতে থাকেন। পাওয়ার প্লের ছয় ওভার শেষে কলকাতার স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৭৯ রান।
তবে, এরপর দিল্লির বোলাররা ঘুরে দাঁড়ায়। টানা দুই ওভারে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে দিল্লি। সুনীল নারিন ১৬ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৭ রান করে এলবিডব্লিউ হন। একইভাবে, আজিঙ্কা রাহানে ১৪ বলে ২৬ রান করে এলবিডব্লিউর শিকার হন। ভেঙ্কটেশ আয়ারও বড় রান করতে ব্যর্থ হন। অক্ষর প্যাটেলের বলে তুলে মারতে গিয়ে মাত্র ৫ বলে ৭ রান করে ক্যাচ আউট হন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে আঙ্গকৃষ রঘুবানসি এবং রিঙ্কু সিং দলের হাল ধরেন। পঞ্চম উইকেটে তারা ৪৬ বলে ৬১ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন। রঘুবানসি ৩২ বলে ৪৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলে আউট হন। রিঙ্কু সিং ২৫ বলে ৩৬ রান করে ফিরলেও শেষ দিকে আন্দ্রে রাসেলের ৯ বলে অপরাজিত ১৭ রানের ক্যামিও কলকাতাকে ২০০ রানের গণ্ডি পার করতে সহায়তা করে। ২০ ওভার শেষে কলকাতার স্কোর দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ২০৪ রান।
দিল্লির হয়ে মিচেল স্টার্ক ৪ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। ভিপরাজ নিগাম এবং অক্ষর প্যাটেল দুটি করে উইকেট তুলে নেন।
দিল্লির রান তাড়া
২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি ক্যাপিটালস শুরুটা ভালো করতে পারেনি। তবে, ফ্যাফ ডু প্লেসি ৪৫ বলে ৬২ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে দলকে লড়াইয়ে রাখেন। মাঝের ওভারে অক্ষর প্যাটেল ২৩ বলে ৪৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। শেষ দিকে ভিপরাজ নিগাম ১৯ বলে ৩৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললেও দিল্লির জয়ের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। বাকি ব্যাটাররা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে ব্যর্থ হন। ২০ ওভার শেষে দিল্লি ৯ উইকেটে ১৯০ রানে থামে।
কলকাতার বোলিংয়ে সুনীল নারিন ছিলেন সবচেয়ে সফল। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ২৯ রান দিয়ে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন। বরুণ চক্রবর্তী ৩৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে তাকে যোগ্য সমর্থন দেন।
ম্যাচের নায়ক
এই ম্যাচে সুনীল নারিন ছিলেন কলকাতার জয়ের প্রধান কারিগর। ব্যাট হাতে ২৭ রানের দ্রুতগতির ইনিংসের পাশাপাশি বোলিংয়ে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। তার এই অলরাউন্ড পারফরম্যান্স কলকাতার জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান
এই জয়ের ফলে ১০ ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সের এটি চতুর্থ জয়। একটি পরিত্যক্ত ম্যাচসহ ৯ পয়েন্ট নিয়ে তারা পয়েন্ট তালিকার সাত নম্বরে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, সমান সংখ্যক ম্যাচে দিল্লি ক্যাপিটালসের এটি চতুর্থ হার। ১২ পয়েন্ট নিয়ে তারা তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
পরবর্তী পথচলা
এই জয় কলকাতার প্লে-অফে ওঠার সম্ভাবনাকে জিইয়ে রেখেছে। তবে, তাদের সামনে এখনো বেশ কয়েকটি কঠিন ম্যাচ রয়েছে। দলের ব্যাটিং এবং বোলিং ইউনিটকে আরও ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে। বিশেষ করে, মিডল অর্ডারে রিঙ্কু সিং এবং আঙ্গকৃষ রঘুবানসির মতো তরুণ খেলোয়াড়দের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
দিল্লির জন্যও প্লে-অফের পথ সহজ নয়। তাদের ব্যাটিং লাইনআপে আরও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। ফ্যাফ ডু প্লেসি এবং অক্ষর প্যাটেলের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের পাশাপাশি তরুণদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
উপসংহার
কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই জয় তাদের সমর্থকদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে। সুনীল নারিনের নেতৃত্বে দল যদি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে, তবে প্লে-অফে তাদের দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে, দিল্লি ক্যাপিটালসকে তাদের ভুল শুধরে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে ফিরে আসতে হবে। আইপিএলের এই উত্তেজনাপূর্ণ মৌসুমে প্রতিটি ম্যাচই এখন দলগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।