খেলাফুটবল

ছাদখোলা বাসে শিরোপা উদযাপন করবে লিভারপুল

পাঁচ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ছাদখোলা বাসে শিরোপা উদযাপনের সুযোগ পাচ্ছে ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল। আগামী ২৬ মে, নিজেদের ২০তম লিগ শিরোপা জয়ের আনন্দ উদযাপনের জন্য আয়োজিত হবে এই বিজয় প্যারেড।

লিভারপুলের ইতিহাসে এই মুহূর্তটি এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ, ২০১৯-২০ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয় করলেও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তারা সমর্থকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক উদযাপনের সুযোগ পায়নি। এবার সেই অপূর্ণতা ঘোচাতে তারা আয়োজিত করছে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক জাঁকজমকপূর্ণ ছাদখোলা বাস প্যারেড, যা স্থায়ী হতে পারে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত।

রোববার অ্যানফিল্ডে টটেনহ্যাম হটস্পারকে ৫-১ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে চার ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিশ্চিত করে ‘অল রেডস’ নামে পরিচিত দলটি। এই জয়ে ইংলিশ শীর্ষ লিগে নিজেদের ২০তম শিরোপা নিশ্চিত করে তারা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমানত্ব অর্জন করেছে।

৩০ বছরের অপেক্ষা শেষে আধিপত্যে ফেরা

১৯৯২ সালে প্রিমিয়ার লিগের পথচলা শুরুর পর থেকেই লিভারপুলের জন্য শিরোপা জেতা হয়ে ওঠে দূরের স্বপ্ন। বারবার চেষ্টা করেও তারা প্রতিপক্ষের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। অবশেষে ২০১৯-২০ মৌসুমে ৩০ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটে তাদের। তবে মহামারির বিধিনিষেধের কারণে তখন কোনো বড় ধরনের জনসমাগম বা উদযাপন সম্ভব হয়নি।

ক্লাবের সমর্থকরা সেই সময়ের কষ্টের কথা মনে রেখেছেন। তাই ২০২৫ সালের এই শিরোপা জয় তাদের জন্য যেন এক দ্বিগুণ আনন্দের উপলক্ষ। ক্লাব কর্তৃপক্ষও সেই আবেগকে সম্মান জানিয়ে সমর্থকদের সঙ্গে সরাসরি উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।

প্যারেডের বিস্তারিত পরিকল্পনা

২৫ মে লিভারপুলের প্রিমিয়ার লিগ মৌসুমের শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দিনই, ২৬ মে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে ছাদখোলা বাসে বিজয় মিছিল শুরু হবে।

লিভারপুল সিটি কাউন্সিলের নেতা লিয়াম রবিনসন এক বিবৃতিতে জানান, “লিভারপুলের বিজয় প্যারেড কেবল ফুটবলের উদযাপন নয়, এটি শহরের গর্ব, আবেগ এবং সম্প্রদায়ের চেতনার প্রতিফলন। এই বিশাল আয়োজন সফল করতে পর্দার আড়ালে নিরলসভাবে কাজ চলছে।”

প্যারেডের রুট সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত ঘোষণা করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি লিভারপুলের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর পাশ দিয়ে যাবে, যাতে শহরবাসী সহজেই অংশ নিতে পারে। সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, যান চলাচলের ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, জরুরি সেবাসহ সব দিক বিবেচনা করে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি

এত বড় পরিসরের জনসমাগমের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলো সমন্বয়ে কাজ করছে যাতে কোনো ধরনের অঘটন না ঘটে।

বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী সময়ে বড় জমায়েতের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে কিছু বিশেষ নির্দেশনাও জারি করা হতে পারে।

সমর্থকদের মাঝে উৎসবের আমেজ

শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই লিভারপুল শহরে উৎসবের আমেজ বইছে। সমর্থকরা লাল পতাকা, ব্যানার ও দলের জার্সি পরে রাস্তায় নেমে এসেছেন। স্থানীয় দোকানগুলোয় লিভারপুলের পণ্য বিক্রির চাহিদা বেড়ে গেছে।

অনেক সমর্থক জানিয়েছেন, তারা প্যারেডে অংশ নিতে বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেউ ইতিমধ্যে বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জড়ো হওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। অনেকে আবার লিভারপুলের বাইরে থেকেও শহরে আসার আয়োজন করছেন।

একজন দীর্ঘদিনের সমর্থক বলেন, “২০১৯-২০ মৌসুমে আমরা বিজয় উদযাপন করতে পারিনি। এবার আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবে দেখতে চাই। ছাদখোলা বাসে আমাদের নায়কদের দেখতে পারাটা হবে জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।”

লিভারপুলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

শিরোপা উদযাপন শেষে ক্লাবটির লক্ষ্য থাকবে ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্ত ভিত গড়ে তোলা। ক্লাব ম্যানেজমেন্টের ভাষ্যমতে, আগামী মৌসুমেও তারা স্কোয়াডকে আরও শক্তিশালী করতে চায়। কিছু তরুণ প্রতিভাকে দলে যুক্ত করার পাশাপাশি অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গেও নতুন চুক্তি করতে আগ্রহী তারা।

ক্লাবের কোচিং স্টাফ, খেলোয়াড় ও ব্যবস্থাপনা সকলের বিশ্বাস, এই ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রাখতে হলে এখন থেকেই পরবর্তী মৌসুমের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

শেষ কথা

লিভারপুলের এবারের ছাদখোলা বাস প্যারেড হবে শুধুমাত্র একটি শিরোপা উদযাপন নয়, এটি হবে একটি আবেগঘন মিলনমেলা। যেখানে সমর্থক, খেলোয়াড় ও শহরবাসী একত্রিত হয়ে নিজেদের গর্বের দলকে সম্মান জানাবে। কোভিডের সময়ে যা হারিয়ে গিয়েছিল, এবার তা নতুন করে ফিরে আসবে উদযাপনের মধ্য দিয়ে।

সারা বিশ্বের লিভারপুল সমর্থকরাও এই উদযাপনের সাক্ষী হতে অপেক্ষায় রয়েছে। ২৬ মে তাদের জন্য হবে এক ঐতিহাসিক দিন, যেটি বছরের পর বছর স্মৃতিতে ভাস্বর থাকবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button