
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে (ইপিএল) ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের মধ্যে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড এখন ম্যাথিয়াস কুনহার দখলে। উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের এই ফরোয়ার্ড চলতি মৌসুমে ২৯ ম্যাচে ১৫ গোলের পাশাপাশি ৬টি অ্যাসিস্ট করে ইতিহাস গড়েছেন। সবশেষ লেস্টার সিটির বিপক্ষে গোল করে তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। এর আগে, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার হিসেবে লিভারপুলের রবার্তো ফিরমিনো এবং আর্সেনালের গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেলি এক মৌসুমে ১৫ গোলের রেকর্ড গড়েছিলেন। তবে, কুনহার সামনে এখন সুযোগ রয়েছে এই রেকর্ড এককভাবে নিজের করে নেওয়ার, কারণ তার দলের আরও চারটি ম্যাচ বাকি রয়েছে।
কুনহার উত্থান: প্রতিকূলতা থেকে সাফল্য
ম্যাথিয়াস কুনহার এই অর্জনের পেছনে রয়েছে তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রম। চলতি মৌসুমের আগে উলভারহ্যাম্পটন তাকে ধারে স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে পাঠিয়েছিল। সেখানে তিনি প্রত্যাশিত ছন্দে খেলতে পারেননি। তবে, ধারের মেয়াদ শেষে প্রিমিয়ার লিগে ফিরে কুনহা তার প্রকৃত সম্ভাবনার প্রমাণ দিয়েছেন। লেস্টার সিটির বিপক্ষে তার গোলটি শুধু দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণই ছিল না, বরং ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের ইতিহাসে নতুন একটি মাইলফলকও স্থাপন করেছে।
কুনহার খেলার ধরন এবং মাঠে তার প্রভাব ইপিএলের অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। তার গতি, দক্ষতা, এবং গোলের সামনে শান্ত মাথার পরিচয় তাকে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে। তিনি শুধু গোলই করছেন না, বরং তার অ্যাসিস্টের মাধ্যমে দলের আক্রমণাত্মক খেলাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছেন। এই মৌসুমে তার ৬টি অ্যাসিস্ট উলভসের মধ্যমাঠ এবং আক্রমণের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
উলভসের চ্যালেঞ্জ: দলগত পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব
যদিও কুনহা ব্যক্তিগতভাবে দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন, তার দল উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স বর্তমানে প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও উলভস ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিয়মিত প্রতিযোগিতা করত। তবে, বর্তমানে তারা ইপিএলের পয়েন্ট তালিকায় ১৩তম স্থানে অবস্থান করছে। দলের এই অবস্থান তাদের সমর্থকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করলেও কুনহার মতো খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ভক্তদের জন্য কিছুটা সান্ত্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দলের এই দুরবস্থার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। মাঠে ধারাবাহিকতার অভাব, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পয়েন্ট হারানো, এবং আক্রমণ ও রক্ষণের মধ্যে সমন্বয়হীনতা উলভসের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কুনহার ব্যক্তিগত সাফল্য সত্ত্বেও দলগতভাবে এই সমস্যাগুলো সমাধান না হলে উলভসের পক্ষে তালিকার শীর্ষে উঠে আসা কঠিন হবে। তবে, কুনহার নেতৃত্ব এবং তার গোল করার ধারাবাহিকতা দলের জন্য আগামী ম্যাচগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের ইপিএল আধিপত্য
ইপিএলের ইতিহাসে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রবার্তো ফিরমিনো, গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেলি, ফিলিপে কৌতিনহো, উইলিয়ান, এবং রিচার্লিসনের মতো খেলোয়াড়রা তাদের দক্ষতা এবং গোলের মাধ্যমে এই লিগে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়েছেন। ম্যাথিয়াস কুনহার সাম্প্রতিক কৃতিত্ব এই তালিকায় নতুন একটি নাম যুক্ত করেছে। তার ১৫ গোলের রেকর্ড তাকে ফিরমিনো এবং মার্তিনেলির পাশে নিয়ে গেছে, এবং বাকি ম্যাচগুলোতে আরও গোল করতে পারলে তিনি এই রেকর্ড এককভাবে নিজের করে নিতে পারেন।
ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের ইপিএলের সাফল্য শুধু তাদের ব্যক্তিগত দক্ষতারই প্রমাণ নয়, বরং ব্রাজিলের ফুটবল সংস্কৃতি এবং প্রতিভার গভীরতারও প্রতিফলন। কুনহার মতো তরুণ ফুটবলারদের উত্থান ব্রাজিলের ফুটবলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী হওয়ার কারণ দেয়। তার এই পারফরম্যান্স ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে, এবং আগামী দিনে তাকে জাতীয় দলে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
কুনহার সামনে সম্ভাবনা
ইপিএলে উলভসের বাকি চারটি ম্যাচ কুনহার জন্য শুধু ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়ার সুযোগই নয়, বরং দলকে উপরের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগও। তিনি যদি তার বর্তমান ফর্ম ধরে রাখতে পারেন, তাহলে এই মৌসুমে ২০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করাও তার জন্য অসম্ভব নয়। এছাড়া, তার অ্যাসিস্টের সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে তিনি দলের অন্য খেলোয়াড়দের জন্যও সুযোগ তৈরি করতে পারেন।
কুনহার এই সাফল্য ইপিএলের অন্য ক্লাবগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। বড় ক্লাবগুলো প্রায়ই এমন তরুণ এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের সই করাতে আগ্রহী হয়। তবে, কুনহার জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার বর্তমান ফর্ম ধরে রাখা এবং উলভসের হয়ে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করা।